মামলার ফাঁদে ৫২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২০:২৪ অপরাহ্ন
সিলেটে ২ হাজার ৪ শ কোটি টাকা
জালালাবাদ ডেস্ক : আয়কর খাতে মামলার পর মামলায় আটকে যাচ্ছে রাজস্ব। কখনও করদাতার (ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান) বিপক্ষে গিয়ে, আবার কখনও করদাতা-কর অফিসের আইনি মারপ্যাঁচে, আবার কখনও করদাতাকে জোর করে চাপিয়ে দেয়ার ফলে এসব মামলার স্তূপ জমছে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত আয়কর খাতে মামলায় বকেয়া করের পরিমাণ দাঁড়িয়ে প্রায় ৫৪ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা।
তবে চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। তবে এখনও মামলার ফাঁদে আটকে রয়েছে প্রায় ৫২ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে কিছু মামলা উচ্চ আদালতে, কিছু আপিল অঞ্চল ও কিছু আপিলাত ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। আবার কিছু মামলা উপকর কমিশনারের কাছে বিচারাধীন। তবে মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে বকেয়া কর আদায়ে জোর দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বিষয়ে কর কমিশনারদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এনবিআরের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত ৩১টি কর অঞ্চলের আওতাধীন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে মামলায় আটকা বকেয়া করের পরিমাণ মোট ৫৪ হাজার ৭৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এসব মামলা উচ্চ আদালত, আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও বিভিন্ন কর অঞ্চলে বিচারাধীন। এর মধ্যে বিতর্কিত ৫০ হাজার ৫২৪ কোটি ১৩ লাখ ও অবিতর্কিত ৪ হাজার ২৬৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অপরদিকে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিতর্কিত ২৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ও অবিতর্কিত ২৭১ কোটি ৪২ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৮ মাসে দাবিনামার মাধ্যমে বিতর্কিত ২৮২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ও অবিতর্কিত ২ হাজার ৩৫২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। ফলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিতর্কিত দাবি রয়েছে ৫০ হাজার ২৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ও অবিতর্কিত দাবি রয়েছে এক হাজার ৯১৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মামলায় বকেয়া করের পরিমাণ রয়েছে মোট ৫২ হাজার ১৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মামলায় আটকে থাকা বকেয়া কর আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ১৩ শতাংশ।
আরও দেখা গেছে, বৃহৎ করদাতা ইউনিটে (এলটিইউ) সবচেয়ে বেশি বকেয়া কর মামলায় আটকে রয়েছে। এলটিইউ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়ার পরিমাণ ১৮ হাজার ১৬১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মামলায় আটকা বিতর্কিত ৮৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা ও অবিতর্কিত ৩৯৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা আদায় করেছে। মামলা ও বকেয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কর অঞ্চল-৩, চট্টগ্রাম। এই কর অঞ্চলে মামলায় আটকা করের পরিমাণ ৭ হাজার ৫২৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এছাড়া কর অঞ্চল-৪, ঢাকার বকেয়া কর দুই হাজার ৭০৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৫, ঢাকার বকেয়া কর দুই হাজার ৪৪৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-সিলেটের বকেয়া কর দুই হাজার ৩৮৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-১১, ঢাকার বকেয়া কর দুই হাজার ৩৮৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৮ ঢাকার বকেয়া কর দুই হাজার ১০৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-১৪ ঢাকার বকেয়া কর এক হাজার ৬৩০ কোটি টাকা; কর অঞ্চল-১, ঢাকার বকেয়া কর এক হাজার ৪৬০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৭, ঢাকার বকেয়া কর এক হাজার ৪৩৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৬, ঢাকার বকেয়া কর এক হাজার ১৭৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-১৫, ঢাকার বকেয়া কর এক হাজার ৫০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর অঞ্চল-১২, ঢাকার বকেয়া কর ৮৪১ কোটি ৭২ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৪, চট্টগ্রামের বকেয়া কর ৫৬৯ কোটি এক লাখ টাকা; কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রামের বকেয়া কর ৮৮৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-২, ঢাকার বকেয়া কর ৮৪১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৩, ঢাকার বকেয়া কর ৮৪০ কোটি ৭০ লাখ টাকা; কর অঞ্চল কুমিল্লার বকেয়া কর ৬৬৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৯, ঢাকার বকেয়া কর ৬০০ কোটি ৪২ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-১৩, ঢাকার বকেয়া কর ৭৮৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। এছাড়া কর অঞ্চল-১০, ঢাকার বকেয়া কর ৩৮১ কোটি ৬ লাখ টাকা; কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল ৩৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-২, চট্টগ্রামের ৩০৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা; কর অঞ্চল খুলনার ২৫১ কোটি ৭১ লাখ টাকা; কর অঞ্চল রাজশাহী ২২৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা; কর অঞ্চল বরিশাল ৬০ কোটি ১৪ লাখ টাকা; কর অঞ্চল রংপুর ১৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা; কর অঞ্চল বগুড়ার ৩৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা; কর অঞ্চল গাজীপুরের ১০২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা; কর অঞ্চল ময়মনসিংহ ৪০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা; কর অঞ্চল নারায়ণগঞ্জের ১১৩ কোটি ৪৩ টাকা।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, গত আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বকেয়া কর আদায়ে রয়েছে এলটিইউ। প্রতিষ্ঠানটি ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বিতর্কিত ৮৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা ও অবিতর্কিত ৩৭৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা আদায় করেছে। এছাড়া কর অঞ্চল-১, ঢাকা বিতর্কিত ২৩ লাখ ও অবিতর্কিত ১১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-২, ঢাকা বিতর্কিত ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা ও অবিতর্কিত ১৮৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৪, ঢাকা বিতর্কিত ১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা ও অবিতর্কিত ১৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৭ ঢাকা বিতর্কিত ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা ও অবিতর্কিত ১০৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৮, ঢাকা অবিতর্কিত ১৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৩, ঢাকা অবিতর্কিত ৬৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৬, ঢাকা বিতর্কিত দুই কোটি ৮৩ লাখ টাকা ও অবিতর্কিত ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-৯, ঢাকার অবিতর্কিত ৭৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-১৪, ঢাকা বিতর্কিত ১৩৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ও অবিতর্কিত ৩৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা; কর অঞ্চল-১১, ঢাকা বিতর্কিত এক কোটি ২০ লাখ ও অবিতর্কিত ৭২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বকেয়া আদায় করেছে।
এনবিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছর আয়কর খাতে মামলার সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৯৯টি। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে ২০ হাজার ৮৫৯টি ও কোম্পানি পর্যায়ে তিন হাজার ২৪০টি মামলা। ওই অর্থবছর মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১১ হাজার ৫৫৩টি। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে ১০ হাজার ১২টি ও কোম্পানি পর্যায়ে এক হাজার ৫৪১টি। এক হাজার ৩৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকার দাবিনামা জারি করা হয়। এর মধ্যে মামলা নিষ্পত্তিতে কর আদায় হয়েছে ৩৯২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছর মামলার সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ১৬৭টি। এর মধ্যে মামলা নিষ্পত্তিতে বকেয়া আদায় হয় ৩৪০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছর মামলার সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৮০১টি। এর মধ্যে মামলা নিষ্পত্তিতে বকেয়া আদায় হয় ৪৬০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।