হাওরপাড়ে ঈদ জামাতে ফসলের জন্য বিশেষ মোনাজাত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ৮:৪৮:৩৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান সময়টি সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের মানুষের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। হাওরে লাখো কৃষকের শ্রমে-ঘামে ফলানো ধান কাটার প্রস্তুতি চলছে। এই ধানেই কৃষক পরিবারের শান্তি, সমৃদ্ধি জড়িয়ে আছে। সুনামগঞ্জ জুড়ে ঈদগাহে ও মসজিদে অনুষ্ঠিত ঈদুল ফিতরের জামাতে কষ্টের সোনালী ফসল তোলার জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে।
পৃথক ঈদ জামাতে বক্তারা বলেন ‘এই সময় সুনামগঞ্জের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হাওরে ধান সোনালি হতে শুরু করেছে। এই ধানেই আমাদের সুখ-শান্তি মিশে আছে। এই ফসল হাওরবাসীর মুখে হাসি ফোটায়। আমরা প্রার্থনা করব, হাওরের ফসল যেন আমরা গোলায় তুলতে পারি।’
এছাড়া এসব জামাতে, দেশ, জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়। জামাত শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বিভিন্ন ঈদগাহে বক্তাগণ বলেন, শুধু কেন্দ্রীয় ঈদগাহে নয়, জেলাজুড়েই ঈদের নামাজের পর হাওরের ফসলের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, নিরাপদে ফসল গোলায় তোলা যায়, সে জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা হয়েছে। এই ফসলের ওপরই হাওরবাসী নির্ভরশীল। ফসল গোলায় উঠলে কৃষকেরা খুশি। কোনো কারণে ফসলের ক্ষতি হলে হাওরবাসীর কষ্টের সীমা থাকে না।
সুনামগঞ্জের হাওরে ঈদের পরই বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হবে। এখন কোনো কোনো হাওরে আগাম জাতের কিছু ধান কাটছেন কৃষকেরা। তবে সেটার পরিমাণ কম।
এ সময় হাওর এলাকায় বৃষ্টি, ভারী বৃষ্টি, উজানের পাহাড়ি ঢল, আগাম বন্যার শঙ্কা থাকে। যদি এসবের কোনো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়, তাহলে হাওরে কৃষকের সর্বনাশ হয়ে যায়। গত কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকেরা চিন্তায় আছেন। কোনো কোনো হাওরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
তবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জে কিংবা এর উজানে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা নেই। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। তাই এ সময় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘এবার সুনামগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো রোপণ হয়েছে। আমরা হাওরে খোঁজ রাখছি। সার্বিক পরিস্থিতি ভালো।’
আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে হাওরের ফসল রক্ষায় প্রতিবছর প্রশাসন ও পাউবো ৪০টি হাওরে বাঁধ নির্মাণ করে। এবার জেলার ১২টি উপজেলায় ৭৩৫টি প্রকল্পে ৫৯১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার হয়েছে। এতে প্রাক্কলন ধরা আছে ১৩০ কোটি টাকা। ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। পরে সময় আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়।
পাউবো সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ও হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত জেলা কমিটির সদস্য সচিব মামুন হাওলাদার জানান, এখন অবশ্য ভারী বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস নেই। সুনামগঞ্জে ও উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না।