সুনামগঞ্জে ধান কাটার ধুম : শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে বিলম্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৫:৫৯:১৭ অপরাহ্ন
জসীম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে হাওরে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ হাওয়ায় উড়ছে। পাকা ধানে ভরে গেছে হাওর। কৃষান-কৃষাণিরা ধানের বাম্পার ফলনে খুশিতে আটখানা। ইতিমধ্যে অনেক হাওরে শুরু হয়েছে ধানকাটা। গত কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া ভালো থাকায় ধান কেটে মাড়াই ও শুকাতে দেখা যাচ্ছে কৃষকদের।
কৃষকরা জানান, গেলবারও বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ফসলের। এবারও ফলন ভাল। আবহাওয়াও ভাল। ঠিকমত গোলায় ধান তুলতে পারলে বছরটা কাটবে আনন্দে।এদিকে, ধান কাটা শুরু হলেও আগের মত নেই শ্রমিক। শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে হচ্ছে বিলম্ব। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর মেশিনের অপেক্ষায় কৃষক। মেশিন পেলেই পুরোদমে শুরু হবে ধানকাটা। তা না হলে বিলম্বিত হবে ফসল কাটার উৎসব। এ পর্যন্ত হাওরে প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। যা চাষের প্রায় সাড়ে ১৭ ভাগ।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ১৩৭টি ছোটবড়ো হাওরে বোরো চাষে জড়িত প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার চাষী পরিবার। এবার হাওরে বোরোচাষ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর। এর মধ্যে ৭০.০৫ ভাগ উফশী (উচ্চ ফলনশীল ধান), ২৯ ভাগ হাইব্রিড ধান ও ০.০৫ ভাগ স্থানীয় প্রজাতির দেশি ধান আবাদ হয়েছে। গতকাল ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত কর্তন হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর। যা চাষাবাদের প্রায় সাড়ে ১৭ ভাগ। কৃষি বিভাগের মতে হাওরে ধান কাটতে ৮৭০টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর ও ২০০টি রিপার যন্ত্রের সঙ্গে রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শ্রমিক। প্রতিদিন গড়ে একটি হার্ভেস্টর ১শ জন শ্রমিকের ও রিপার ২০ জন শ্রমিকের ধান কাটতে পারে। কৃষি বিভাগের মতে হাওরে ১ লাখ ৯০ হাজার নিয়মিত কৃষিশ্রমিক, ৩০ হাজার অনিয়মিত শ্রমিক ও বাইরের জেলার আরো প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকসহ প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শ্রমিকও ধান কাটতে শুরু করেছেন।
কৃষি বিভাগ আরো জানিয়েছে, এবার হাওরে বিআর ২৮ ও ২৯ বীজ দেওয়া হয়নি সরকারিভাবে। তাই হাওরে ৮৯, ৯৬, ৮৮, ৯২, বঙ্গবন্ধু-১০০ ধানের আবাদ হয়েছে বেশি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন প্রকৃতি এভাবে ১৫দিন অনুকূলে থাকলে হাওরের শতভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। হাওরের পুরো ধান কৃষক গোলায় তুলতে পারলে গতবারের চেয়ে এবার আরো ১১০ কোটি টাকার বেশি ধান উৎপাদিত হবে। কৃষি বিভাগ আরো জানিয়েছে, গত বছর ৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৪৯ মে.টন চাল উৎপাদিত হয়েছিল। এবার ৯ লক্ষ ১৩ হাজার মে. টন চাল উৎপাদিত হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।
সরেজমিন কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা গেছে, হাওরে কৃষান-কৃষানীরা খলা তৈরী করে ধান শুকাচ্ছেন। মাড়াই শেষে ধান বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন গোলায়। গোখাদ্যের জন্য খড় স্তুপাকারে রাখছেন। সবকাজ ফেলে তারা ধান তোলা নিয়ে সময় পার করছেন। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরাও ধান তোলায় সহায়তা করছেন।
ডাকুয়ার হাওরে কৃষক ফরিদ মিয়া জানান, হাওরে বিশ কেদার জমি চাষ করেছি। ফলন ভাল হয়েছে। ৫ কেদার জমি কেটেছি। আশা করি ১০/১২ দিনের সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।
শিয়ালমারা হাওরের কৃষক সাজাউর বলেন, হাওরে ধান ভাল হয়েছে। মেয়েটার বিয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। খুব চিন্তায় ছিলাম। এখন আমি শংকা মুক্ত। খরচার হাওরে কৃষানী লিপি জানায়, এ হাওরের ফসলের দিকে আমরা চেয়ে থাকি। বাচ্চার পড়াশুনা, বিয়েশাদিসহ খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা এ হাওর থেকেই। এবার ভাল ফলন হয়েছে। ১০ কেদার জমি কেটে ফেলেছি। শ্রমিক না পাওয়ায় দেরী হচ্ছে। তবে তিনি খুব খুশি আছেন বলে জানালেন এ প্রতিবেদককে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, হাওরে ফলন ভাল হয়েছে। মানুষ ধান কাটতে শুরু করেছেন। এবার উৎপাদনমূল্যও বেশি হবে।