গরমে অস্বস্তিকর অনুভূতি : ডায়রিয়া বৃদ্ধির শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২০:০০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : আগের দিনের তুলনায় তাপমাত্রা কমলেও গরমের কষ্ট কমেনি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাতাসে আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়ায় গরমে অস্বস্তিকর অনুভূতি বেড়ে গেছে।
গতকাল দেশের বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৭ শতাংশ। এ কারণে দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকাজুড়ে গরমের অস্বস্তিকর অনুভূতি টের পাওয়া গেছে। আর্দ্রতা ৫০ শতাংশের বেশি হলে তা জলীয় বাষ্পসহ শরীরে ঘাম ও চটচটে গরমের কষ্ট তৈরি করে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, সাধারণত গ্রীষ্মের এই সময়টাতে বাতাসে আর্দ্রতা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকে। ফলে তাপমাত্রা বাড়লেও তা বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য খুব কষ্টের হয় না। বৃহস্পতিবার আর্দ্রতার পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, দেশ প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে রয়েছে। ছোট বড় সবাই গরমে কাবু হচ্ছে। আর তাতে শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে পানির মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে।
হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ সময়ের তুলনায় এখন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে আসা রোগীর বেশিরভাগই শিশু। এমনকি ঈদের ছুটি শেষে নগরে জনসমাগম বাড়লে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে শঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিবছর গ্রীষ্ম এলে ডায়রিয়ায় প্রকোপ বেড়ে যায়। এর কিছু কারণও আছে। বিশেষ করে গরমে শহরাঞ্চলে সুপেয় পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির অভাবে পানিবাহিত জীবাণুর মাধ্যমে ডায়রিয়া বেশি ছড়ায়। এ ছাড়া এই তীব্র গরমে পিপাসায় অস্থির মানুষ রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ফেরিঘাট ও যানবাহনে দূষিত পানি দিয়ে বানানো শরবত ও লেবুপানি পান করেন। করোনা কমে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যাবিধি মানতে, বিশেষ করে হাত ধোয়ায় অনীহা ডায়রিয়া বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। ঘন ঘন বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের কারণে ফ্রিজে সংরক্ষিত খাবার সহজেই নষ্ট হচ্ছে। গরমে খাবারে সহজে জীবাণু বাসা বাধে, আর ওসব খাবার খেলে হয় ডায়রিয়া।
এদিকে, প্রচণ্ড দাবদাহে কর্মজীবী মানুষদের কষ্ট বেড়েছে। হাঁপিয়ে উঠেছে শ্রমজীবী মানুষ। কর্মজীবী মানুষ বাইরে বের হলেই অতিরিক্ত ঘামে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। রোদ থেকে বাঁচতে কেউ কেউ ছাতা ও কালো চশমা ব্যবহার করছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, চলমান গরমে দেশের রেললাইনগুলোতে তাপমাত্রা গিয়ে ঠেকছে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি। এতে কোথাও কোথাও লাইন বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ জন্য কর্তৃপক্ষ স্থান ও রেললাইনের বয়স বিবেচনায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে।
তবে কিছুটা সুখবর দিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহিনুর ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের অনেক এলাকাজুড়ে যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা আজ কিছুটা কমতে পারে। অনেক এলাকায় তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসতে পারে। কিন্তু আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় গরমের কষ্ট কমার সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ আরও বলেন, এপ্রিল এমনিতেই উষ্ণতম মাস, পর্যাপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে নদী অববাহিকা থেকে জলীয় বাষ্প এসে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টির কারণে কোথাও তাপমাত্রা কমবে, কোথাও বাড়বে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও কালবৈশাখী হতে পারে।