গরমে সিলেটে ডায়রিয়াসহ নানান রোগের প্রকোপ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ৩:১১:৪৯ অপরাহ্ন
⭐ওসমানীতে ভর্তি দ্বিগুণ রোগী⭐২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত ২৯৮ জন⭐
এমজেএইচ জামিল : বৈশাখের শুরুতেই ঊর্ধ্বমুখী তাপমাত্রার পারদ। তাপদাহের কারণে বাড়ছে রোগবালাই, হাসপাতালে তৈরি হচ্ছে রোগীর বাড়তি চাপ। যশোরে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে সিলেটেও বাড়ছে গরমের তীব্রতা।
গরমের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগবালাই। প্রচণ্ড গরমে যেসব অসুস্থতা দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, ঠাণ্ডা, জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিশূন্যতা, হিটস্ট্রোক। অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। তীব্র গরমের কারণে সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে থাকে অসুস্থ, বয়স্ক ও শিশুরা। এ সময়ে সিলেটের সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ। হাসপাতালে আসা রোগীদের অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, ১ সপ্তাহের ব্যবধানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। একই সাথে বর্হিবিভাগে রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। এর অধিকাংশই ডায়রিয়া, জ¦র-সর্দি-কাশিসহ গরমজনিত রোগের বলে জানা গেছে। ঈদের আগের দিন হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগী ছিলেন ১৩০০ জন। শনিবারে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২২০০ ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এত বেশী সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে শুধু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫০ জন। গত ৭ দিনে সিলেটে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৭২ জন। চলতি এপ্রিল মাসের ২০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩১০ জন। গড়ে দৈনিক ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ১১৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় ডায়রিয়ায় ১৫০ জন আক্রান্ত ছাড়াও শ^াসতন্ত্রের রোগে ৫০ এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৯৮ জন।
এদিকে গত ৭ দিনে ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত শুধু শ^াসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬৪ জন এবং এই সময়ে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪৪ জন। চলতি এপ্রিল মাসে (২০ এপ্রিল পর্যন্ত) শ^াসতন্ত্রে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯৯ জন ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৫৭ জন।
জানা গেছে, দেশের ডায়রিয়া রোগের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল। এই হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ৪৫৬ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৪৮ জন রোগী ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন।
আইসিডিডিআরবি বাংলাদেশের হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, বর্তমান সময়ে এখন পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে রোগীর চাপ স্বাভাবিক। গত দুই মাস থেকেই গড়ে চার-পাঁচশো রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। আমাদের আইসিডিডিআরবিতে দিনে ৭০০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হলে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। গ্রীষ্মের শুরুতে এখনও সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে, খাবার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে যারা শিশুদের খাওয়ান, যত্ন নেন, তাদের এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। বাইরের খোলা খাবার বা শরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় শনিবার সিলেট বিভাগে ১৫০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সিলেট জেলারও ৬৬, সুনামগঞ্জে ৭, হবিগঞ্জে ৪২ ও মৌলভীবাজারের ৩৫জন রয়েছেন। এর আগে শুক্রবার বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪৭ জন, বৃহস্পতিবার ১৫০, বুধবার ১৪৬, মঙ্গলবার ১২৪, সোমবার ১৩৫, রোববার ১২৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত। গত সপ্তাহে শনিবার আক্রান্ত হয়েছিলেন ১০৩ জন। ১ সপ্তাহের ব্যবধানে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়েছে।
তবে সিলেটে ডায়রিয়াসহ নানান রোগে আক্রান্তের হার বাড়লেও এ নিয়ে যে কোন শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক বলেও জানান তারা। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, আতঙ্কিত না হয়ে গরম থেকে নিজেকে বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।
এ ব্যাপারে সিলেটের ডেপুটী সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় শংকর দত্ত দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এই সময়টাতে ডায়রিয়ার প্রকোপ কিছুটা বাড়ে। তবে সিলেটে গরম তুলনামূলক কম থাকায় হিটস্ট্রোকের রোগী এখনো বাড়েনি। ডায়রিয়া, শ^াসতন্ত্রসহ অন্যান্য রোগীর সংখ্যা বাড়লেও গত বছরের তুলনায় বাড়েনি। এই সময়ে স্বাস্থ্য সচেনতনতার উপর জোর দেয়ার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ঈদের পর থেকে হাসপাতালে রোগীর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। যেখানে সাধারণত ১৩০০-১৫০০ রোগী ভর্তি থাকেন সেই জায়গায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২২০০ ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যাটা বাড়ছে। ভর্তির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আউটডোরের রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বর্হিবিভাগে যেখানে দৈনিক ৩০০০ থেকে ৩৫০০ রোগী দেখা হতো সেখানে এই সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে।