স্মার্টফোন ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে বাংলাদেশ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৯:১৬:২০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : বাংলাদেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের প্রায় ৫২ শতাংশের হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। এ হার দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। এমনকি যুদ্ধের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে থাকা আফগানিস্তানে মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের প্রায় ৫৬ শতাংশের হাতে রয়েছে স্মার্টফোন।বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ডিজিটাল প্রগ্রেস অ্যান্ড ট্রেন্ডস রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএর তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের চিত্র তুলে ধরেছে প্রতিবেদনটিতে। এতে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে গড় স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ৭১ দশমিক ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এ অঞ্চলের বাকিদের মধ্যে ২৩ দশমিক ৪১ শতাংশ ব্যবহারকারীর হাতে রয়েছে বেসিক ও ফিচার ফোন। আর পাঁচ দশমিক ৪১ শতাংশ সংযোগ শুধু ডেটা সেবায় ব্যবহার করে থাকে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ায় স্মার্টফোন ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি মালদ্বীপে। দেশটির মুঠোফোন ব্যবহারকারীর ৮২ দশমিক ৫৩ শতাংশের হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। বেসিক ও ফিচার ফোন ব্যবহারকারী মালদ্বীপে মাত্র সাত দশমিক ৪৮ শতাংশ। বাকি ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ সংযোগ শুধু ডেটা সেবায় ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভুটানে ৮১ দশমিক ৪৭ শতাংশ ব্যবহারকারীর হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। বাকিদের মধ্যে ছয় দশমিক ৯৭ শতাংশ বেসিক ও ফিচার ফোন এবং ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ শুধু ডেটা সেবা ব্যবহার করে।
স্মার্টফোন ব্যবহারের হারের দিক থেকে তৃতীয় তবে সংখ্যার দিক থেকে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটির ৭৬ দশমিক ৬২ শতাংশ মুঠোফোন ব্যবহারকারীর হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। বেসিক ও ফিচার ফোন ব্যবহারকারী ভারতে ১৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বাকি চার দশমিক ৬২ শতাংশ সংযোগ শুধু ডেটা সেবায় ব্যবহার করা হয়। পরের অবস্থানে থাকা শ্রীলঙ্কার ৭০ দশমিক ৩৯ শতাংশ ব্যবহারকারীর হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। বাকিদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেসিক ও ফিচার ফোন এবং ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ শুধু ডেটা সেবা ব্যবহার করে।
পঞ্চম স্থানে থাকা পাকিস্তানে ৬৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ মুঠোফোন ব্যবহারকারীর হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। বেসিক ও ফিচার ফোন ব্যবহারকারী দেশটিতে ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বাকি ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ সংযোগ শুধু ডেটা সেবায় ব্যবহার করা হয়। ষষ্ঠ স্থানে থাকা নেপালে ৫৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ মুঠোফোন ব্যবহারকারীর হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। বেসিক ও ফিচার ফোন ব্যবহারকারী দেশটিতে ৩৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং ছয় দশমিক ৯১ শতাংশ সংযোগ শুধু ডেটা সেবায় ব্যবহার করা হয়।
সপ্তম স্থানে আফগানিস্তানে ৫৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ মুঠোফোন ব্যবহারকারীর হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। বেসিক ও ফিচার ফোন ব্যবহারকারী দেশটিতে ৩০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বাকি ১৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ সংযোগ শুধু ডেটা সেবায় ব্যবহার করা হয়। আর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সবশেষে থাকা বাংলাদেশের ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ মুঠোফোন ব্যবহারকারীর হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। বেসিক ও ফিচার ফোন ব্যবহারকারী এ দেশে ৪৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং দুই দশমিক ৩৪ শতাংশ সংযোগ শুধু ডেটা সেবায় ব্যবহার করা হয়।
স্মার্টফোন ব্যবহারে পিছিয়ে থাকলেও ফোরজি কাভারেজে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানেই আছে। বর্তমানে দেশের ৯৮ শতাংশ এলাকা ফোরজি কাভারেজের আওতায় এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে এ হার সবচেয়ে বেশি মালদ্বীপে। দেশটির শতভাগ এলাকা ফোরজি কাভারেজের আওতায় রয়েছে। এছাড়া ভারতে ফোরজি কাভারেজের আওতায় রয়েছে ৯৯ শতাংশ এলাকা, ভুটান ও শ্রীলঙ্কায় ৯৭ শতাংশ, পাকিস্তানে ৭৬ শতাংশ, নেপালে ৪৫ শতাংশ এবং আফগানিস্তানে ২৬ শতাংশ।
যদিও বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার অনেক কম। ২০২২ সালের আইটিইউ ও ডব্লিউডিআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছয় কোটি ৬৬ লাখ, যা মোট জনগণের ৩৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর মধ্যে সাত শতাংশ ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যবহারকারী। বাকি প্রায় ৩২ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারী। মাসে একজন ব্যবহারকারী মোবাইলে গড়ে তিন দশমিক ২০ গিগাবাইট (জিবি) ডেটা ব্যবহার করে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারে শীর্ষে রয়েছে মালদ্বীপ ও ভুটান। দেশ দুটির প্রায় ৮৬ শতাংশ জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তবে জনসংখ্যা বিবেচনায় সংখ্যার দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ভারতে। আর সবচেয়ে কম ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, মালদ্বীপে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ, যা দেশটির জনসংখ্যার ৮৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ভুটানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছয় লাখ ৭০ হাজার, যা দেশটির জনসংখ্যার ৮৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। নেপালের এক কোটি ৫৮ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যা দেশটির জনগণের ৫১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬৫ কোটি ৬৩ লাখ। তবে জনসংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এ হার দাঁড়ায় দেশটির জনগণের মাত্র ৪৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় এ হার ৪৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। দেশটিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯৯ লাখ। আর পাকিস্তানে চার কোটি ৯৬ লাখ তথা ২১ শতাংশ জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আর আফগানিস্তানের মাত্র ১৮ শতাংশ জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যার সংখ্যা প্রায় ৭৬ লাখ।
মোবাইলে ডেটা ব্যবহারে ডাউনলোডের গড় গতি বাংলাদেশে মাত্র ১৬ দশমিক ১ জিবিপিএস (গিগাবাইটস পার সেকেন্ড)। আফগানিস্তানে এ হার সবচেয়ে কম, মাত্র চার জিবিপিএস। এছাড়া ভারতে মোবাইলে ডেটা ব্যবহারে ডাউনলোডের গড় গতি ৩১ জিবিপিএস, মালদ্বীপে ৭৬ দশমিক ৩ জিবিপিএস, নেপালে ১৪ দশমিক ৪ জিবিপিএস, পাকিস্তানে ১৫ দশমিক ২ জিবিপিএস এবং শ্রীলঙ্কায় ১৪ দশমিক ৭ জিবিপিএস। ভুটানের তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।