প্রলম্বিত দাবদাহ, অসহনীয় জীবনযাত্রা
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ৯:৪৪:৫১ অপরাহ্ন
*ফল-ফসলে হিট শকেরও শঙ্কা* আরো ৩ দিনের ‘হিট এলাট’
জালালাবাদ রিপোর্ট : দেশে দাবদাহ প্রলম্বিত হচ্ছে। তাপমাত্রা রেকর্ড স্পর্শ করতে চলেছে। ইতিমধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রীর ঘরে পৌঁছে তাপমাত্রা। তাতে জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। যতটা তাপমাত্রা, তার চেয়ে অনুভূত হচ্ছে বেশি। অনুভূত হওয়াকেই বেশি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়, যাকে বলে ‘হিট ইনডেক্স’ বা তাপ সূচক।
ঢাকাসহ বদেশের ৪৫টির বেশি জেলার উপর দিয়ে এখন তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। একইসাথে দিনের গড় তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল সোমবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় সারা দেশেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা না থাকায় দেশে আরো তিন দিনের ‘হিট এলাট’ জারি করা হয়েছে।
তীব্র গরমের কারণে ইতোমধ্যেই স্কুল-কলেজে সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি গরমে হিট স্ট্রোকসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় ১১ জনের বেশি ম্তৃ্যু হয়েছে। প্রলম্বিত দাবদাহে মানুষের ‘হিট স্ট্রোকের’ পাশপাশি এবার ফল-ফসলেও ‘হিট শকের’ শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত দুই সপ্তাহে যশোর এবং চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা গেছে। আর বর্তমানে পাবনা ও চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এর বাইরে মৌলভীবাজার, ঢাকা, রাজশাহী, চাঁদপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা এবং বরিশালসহ আরও কয়েকটি জেলার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
টানা প্রচন্ড তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টি-খরতাপে পাকা, আধাপাকা ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফসল, ফল-ফলাদি, শাক-সবজিতে ‘হিট শকে’র আশঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষিবিদগণ। টানা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এবং খরা অনাবৃষ্টিতে হিটশকের শঙ্কা থাকে। হিট শকে আধাপাকা ধান চিটায় নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া ফল ফলাদি অপরিপক্ক ও অপুষ্ট অবস্থায় পেকে যায় (অকালপক্ব)। এমনকি গুটি ঝরে পড়তে পারে।
চলমান মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহে ইতোমধ্যে ফল-ফসল পুড়ে খাক ও বিবর্ণ হয়ে গেছে অনেক জায়গায়। এ সময়ে বৃষ্টিপাতের বিকল্প নেই। কিন্তু ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টির দেখা নেই।
গরম বাতাসের তাপে শুকিয়ে যাচ্ছে আম,কাঁঠাল, লিচু, জামের গুটি, পোক্ত হওয়ার আগেই সেগুলো অকালে শুকিয়ে ঝরে পড়ছে ঝরা বকুলের মত। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। হিটস্টোকে সারাদেশে ইতোমধ্যে ১১ জনের বেশি মৃত্যু হয়েছে।
টানা দৈনিক তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সে. বা ততোধিক হলে ইরি-বোরো ধানে ‘হিট শকে’র আশঙ্কা করেন ইনস্টিটিউটের গবেষকগণ। এহেন তাপমাত্রা দেশের অনেক জায়গায় অবিরাম বিরাজ করছে।
আবহাওয়াবিদ শাহ আলম জানান, এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে গড়ে তাপমাত্রা থাকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এ বছর সেটি বৃদ্ধি পেয়ে গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে সারা দেশেই তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। সামনে গড় তাপমাত্রা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে এটি বাংলাদেশের উষ্ণতম বছরও হতে পারে।
আরও তাপপ্রবাহ আসছে :
বৃষ্টিপাত শুরু হতে দেরি হওয়ায় এবছর তাপপ্রবাহ সহসাই থামবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। সামনে আরও তাপপ্রবাহ আসছে এবং পুরো মে মাসজুড়ে সেটি চলতেই থাকবে, বলেন আবহাওয়াবিদ শাহ আলম।
এছাড়া মৌসুমী বায়ু আসতে দেরি হওয়ায় এবছরের তাপপ্রবাহের স্থায়িত্ব বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। এমনকি তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল আগের বছরগুলোকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে ।বাংলাদেশে এর আগে তাপপ্রবাহ একটানা সর্বোচ্চ ২৩ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ারও রেকর্ড রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
তবে তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। অনেকদিন ধরে তাপপ্রবাহ চলতে থাকলে কোনও কোনও এলাকার বায়ুরচাপ কমে যায়, বলেন আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।
এত তাপপ্রবাহের কারণ কী?
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত কয়েকদিনের পূর্বাভাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে।এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশের ঐ অঞ্চলের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের অবস্থান।কিন্তু এইসব প্রদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি। এসব জায়গায় বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে ওঠানামা করে।
আবহাওয়াবিদ ড. মল্লিক বলেন, গত বছর ভারতের ওইসব অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেহেতু ওগুলো উত্তপ্ত অঞ্চল, তাই ওখানকার গরম বাতাস চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের তাপমাত্রাকে গরম করে দেয়।তবে দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় ব্যতিক্রম সিলেট। সিলেটে দেখা মিলেছে স্বস্তির বৃষ্টির। এই তীব্র গরমে ঝড়ো হাওয়ার সাথে রোববার মুষলধারের বৃষ্টি যেন আশীর্বাদ হয়ে ঝরেছে। কেবল রোববার বিকালেই নয়, সোমবার ভোর রাতেও নেমেছে অঝোরধারার বৃষ্টি!
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে ২৪ ঘন্টায় ( সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) ৫৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রোববারের মতো সোমবারও প্রখর রোদ ছিল না সিলেটে। আকাশে ছিল মেঘ ও সূর্যের লুকোচুরি খেলা। তবে গরমের অনুভূতি ছিলো অনেক।