ব্রিজের কাজ না করেই টাকা উত্তোলন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ৭:৩০:০০ অপরাহ্ন
ওসমানীনগর প্রতিনিধি: ওসমানীনগরে ব্রিজের কাজ না করেই ঠিকাদার ১৫ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজের ওয়ার্ক অর্ডার হওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুরাতন ব্রিজ ভেঙ্গে ঐ স্থানে নতুন ব্রিজ নির্মাণ না করায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এমনকি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করলেও গত এক বছর ৪ মাস ধরে টালবাহানা করে আসছে। এ নিয়ে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
জানা যায়, ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের মুতিয়ারগাঁও, হলিমপুর, ভাগলপুর, কলারাইসহ এলাকার অন্যান্য ৭/৮টি গ্রামের মানুষের যোগাযোগের স্বার্থে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্ষুদির খালের ওপর ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। গত বছরের জানুয়ারি মাসে কাজটি পায় নিজাম এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজ পাওয়ার পর পুরোনো ব্রিজটি ভেঙে মালামাল বিক্রি করে দেয়ার পর নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য একপাশের বেইজের সামান্য অংশের কাজ করে। এরই মধ্যে ঠিকাদার কাজের জন্য ১৫লক্ষাধিক টাকার বিল উত্তোলন করে নেয়। বিল উত্তোলনের পর ব্রিজ নির্মাণের স্থান থেকে যাবতীয় মালামাল নিয়ে কাজ বন্ধ রেখে চলে যায়। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগসহ তিনবার লিখিত শোকজ করা হলেও প্রতিষ্ঠানটি কোন সাড়া দেয়নি। দীর্ঘ এক বছরেও ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। শেষ পর্যন্ত এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে ব্রিজ নির্মাণের স্থানের পাশে অস্থায়ীভাবে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করছেন।
সরজমিনে মুতিয়ারগাঁও গ্রামে গেলে কথা হয় গ্রামের বাসিন্দা তাজ উদ্দিন, তছর উদ্দিন ও আবুল বাশার এর সাথে। তারা জানান, পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে নতুন ব্রিজ নির্মাণ না করায় আমরা অনেক কষ্টে আছি। কৃষকরা এখন বোরো ধান তুলছেন কিন্তু ব্রিজ না থাকায় অনেক কষ্টে ধান নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। এলাকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতেও কষ্ট হচ্ছে। তাই ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণ করার দাবি জানান তারা।
এদিকে, গত সোমবার উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ব্রিজ নির্মাণের বিলম্বের বিষয়টি উত্থাপন করেন গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পীর মো. মজনু মিয়া। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা। এসময় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পীর মোঃ মজনু মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজটি না করার কারণে এলাকার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। সোমবার বিষয়টি উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন প্রয়োজনে বর্তমান ঠিকাদারের ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে ব্রিজটি সম্পন্ন করে দিবেন।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা সুহেল রহমান সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ১৫ লক্ষাধিক টাকার বিল উত্তোলন করে নিয়েছে। দীর্ঘ এক বছর ধরে কাজ বন্ধ রাখার পর আমরা মৌখিকভাবে একাধিকবার যোগাযোগ করে কোন ফল না পেয়ে তিনবার লিখিত শোকজ করেছি, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কোন উত্তর দেয়নি। সে কাজ না করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব আমরা।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী নিজাম উদ্দিন রুকু বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের জন্য কাজটি অন্য একজনকে দিয়েছিলাম। সে কাজটি ফেলে গিয়ে আমাকে বিপদে ফেলেছে। আগামী সপ্তায় আমি কাজটি শুরু করবো।