চীনের প্রযুক্তি খাতে কর্মীদের ক্যারিয়ার শেষ হচ্ছে পঁয়ত্রিশেই
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ৮:০৮:৫৪ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে চীনের উপস্থিতি ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর বিধিনিষেধ ও নজরদারি সত্ত্বেও এ খাতে প্রবৃদ্ধি বেশ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু প্রযুক্তি শিল্পের রমরমা চেহারার পেছনে রয়েছে অন্য জগৎ। যেখানে বয়সের কারণে চাকরি হারানোর উদ্বেগে ভোগেন বেশির ভাগ কর্মীরা। দেশটিতে ৩৫ বছর বয়সকে অভিশাপই ধরা হয়। কারণ প্রতি বছর বয়স ৩৫ হওয়ার কারণে বেকার হয়ে পড়েন অনেকেই। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
শর্ট ভিডিও অ্যাপ কুয়াইশোর সাবেক কর্মী লাওবাই জানান, এক সহকর্মী বরখাস্ত হলে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। কারণ ওই সহকর্মীর বয়স হয়েছিল ৩৫ বছর। তখন লাওবাইয়ের চলছিল ৩৪ বছর। ঠিকই ৩৫ বছর বয়স হওয়ার কয়েক মাস পর চাকরি হারান লাওবাই।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছে চীন। সামগ্রিকভাবে এর প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন খাতে। তাই গত কয়েক মাস ছাঁটাই হয়েছেন হাজার হাজার কর্মী। বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতের বয়স্ক শ্রমিকদের ওপর এর প্রভাব পড়েছে বেশি। অবশ্য অল্পবয়সী ও অবিবাহিতদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কথা কখনই গোপন করেনি প্রযুক্তি সংস্থাগুলো। প্রতিষ্ঠানদের নির্বাহীদের মতে, বয়স্ক কর্মীরা পারিবারিক ও শারীরিক কারণে ব্যাপকভাবে অফিসে সময় দিতে কম ইচ্ছুক।
বেইজিংভিত্তিক শ্রমবিষয়ক আইনজীবী ইয়াং বাওকুয়ান বলেন, ‘প্রযুক্তি খাতে বয়স একটি বড় সমস্যা। ধারণা করা হয়, বয়স্করা সর্বশেষ প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। তাদের পক্ষে কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া নিয়োগদাতাদের জন্য তারা খুব ব্যয়বহুল।’
চীনের শ্রম আইনে জাতিগত, লিঙ্গ ও ধর্মের কারণে বৈষম্য নিষিদ্ধ। তবে এতে স্পষ্টভাবে বয়সের উল্লেখ নেই। এ আইনজীবী বলেন, শ্রম আইনকে বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করলে বয়সের কারণে চাকরিচ্যুতি বৈষম্য হিসেবে চিহ্নিত হবে। তাই নিয়োগকর্তারা বরখাস্তের কারণ হিসেবে স্পষ্টভাবে বয়স উল্লেখ করেন না।
চীনা প্রযুক্তি কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে তরুণ কর্মীদের প্রতি আগ্রহের কথা জানিয়ে আসছেন। টেনসেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন লাউ ২০১৯ সালে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা বিভাগে ১০ শতাংশ রদবদলের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, পুরনো ব্যবস্থাপকদের স্থলে তরুণদের সুযোগ দেয়া হবে, তারা আরো উৎসাহের সঙ্গে কাজ করবে। ওই বছর একই ধরনের মন্তব্য করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বাইদুর প্রধান রবিন লি।
চীনে প্রযুক্তি খাতে কর্মঘণ্টা তুলনামূলক দীর্ঘ। সপ্তাহে ছয়দিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। শপিং প্লাটফর্ম মেইতুয়ানের সাবেক এক সেলস ম্যানেজার বলেন, ‘২০-৩০ বছর বয়সের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ কর্মশক্তিতে পূর্ণ থাকেন। তারা ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিতে ও কোম্পানির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আপনি সন্তানের বাবা-মা হলে ও শরীরে বার্ধক্য আসলে কীভাবে তা মেনে চলবেন।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক মন্দা ও নিয়ন্ত্রক উদ্বেগের প্রযুক্তি খাতে ছাঁটাই সাধাণত প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে হংকংয়ে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে কুয়াইশোর শেয়ারদর কমেছে ৮৮ শতাংশ। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত কোম্পানিটির সামগ্রিক কর্মীর ১৬ শতাংশ কমেছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চীনা প্রযুক্তি শিল্পে টিকটকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স ও ই-কমার্স জায়ান্ট পিনডুডুও সবচেয়ে কম বয়সী কর্মীদের নিয়োগ দেয়। ২০২০ সালের এক পরিসংখ্যান অনুসারে, দুই সংস্থার কর্মীদের গড় বয়স ২৭ বছর। কুয়াইশোর ক্ষেত্রে ২৮ ও অ্যাপভিত্তিক রাইড সার্ভিস ডিডিতে গড় বয়স ৩৩ বছর। তবে অল চীন ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়ন অনুসারে, চীনে শ্রমিকদের গড় বয়স ৩৮ বছর ৩ মাস। এছাড়া সংস্থাগুলোর কর্মী পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, সর্বশেষ কয়েক বছরে গড়ে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা কমেছে। এ বিষয়ে দেশটির ইন্টারনেট সেবাদাতা একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপক বলেন, ‘মহামারীর আগে প্রযুক্তি খাত খুব দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছিল। এরপর সরকারি কড়াকড়ি শুরু হয়। আমরা এখন ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ব্যয়বহুল পদগুলো কমাচ্ছি।’
সব মিলিয়ে প্রযুক্তি কর্মীদের জন্য উদ্বেগের বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ বছর। গত বছর এক জরিপে দেখা যায়, ৮৭ শতাংশ প্রোগ্রামার ৩৫ বছর বয়সের পর চাকরি থেকে বরখাস্ত বা নতুন চাকরি খুঁজে পাওয়া নিয়ে গুরুতরভাবে চিন্তিত ছিলেন। অবশ্য শুধু প্রযুক্তি খাত নয় রেস্তোরাঁ ও হোটেলসহ বিভিন্ন পরিষেবা খাতে চাকরির বিজ্ঞাপনে কম বয়সীদের চাওয়া স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।