নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ৯:০১:০০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়েছেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। দলের সভাপতির ইচ্ছা পূরণে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে এবং দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করে সবার জন্য ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ করে দেয়া হয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। দলীয় ফোরামে বৈঠক করে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেয়, তারা এবার স্থানীয় এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না। সেই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েও দেয়া হয়। ফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা জনপ্রিয় তারা এবার উৎসাহ নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন।
কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় যখন দলের মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজনরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। এতে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ প্রার্থীরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে পড়েন।
এ পরিস্থিতি দলীয় প্রধানের দৃষ্টিতে এলে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দিয়ে বলেন, মন্ত্রী ও এমপি পরিবারের সদস্য, স্বজনরা যেন ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে। শেখ হাসিনার সেই নির্দেশ বাস্তবায়নে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই বৈঠক করে তিনি এবং দলের সংশ্লিষ্ট অন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের ফোন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রথম দফার নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ২২ এপ্রিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে একজন ছাড়া অন্যরা নির্বাচনেই রয়েছেন। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দেয়া নির্দেশনা অমান্য করায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। দলটি এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে— তা নিয়ে ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেছে।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করা আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা যাতে ভোটে বিজয়ী হতে না পারেন সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা। তারা মনে করেন, যারা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেন, দলের প্রতি আনুগত্য দেখাতে পারেন না; তারা আর যাই হোক শেখ হাসিনার কর্মী নন। ফলে তাদের বিষয়ে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত না মানার এই অভ্যাস এক দিনে হয়নি, বিগত দিনে যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে এখন নতুন করে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার সাহস পেতেন না তারা।
তিনি আরও বলেন, মূলত দলীয় এই সিদ্ধান্ত অমান্য করার পেছনে রয়েছেন মন্ত্রী ও এমপিরা। মন্ত্রী ও এমপিরা যদি তাদের স্বজনদের কঠোর নির্দেশ দিতেন তাহলে স্বজনদের কেউ নির্বাচনি মাঠে থাকতেন না, শেখ হাসিনার নির্দেশ শতভাগ কার্যকর হতো। কিন্তু দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেয়ার পরও মন্ত্রী ও এমপিরাই সেই নির্দেশ আমলে নেননি। তারা স্বেচ্ছাচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
এদিকে বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রথম পর্যায়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি আরও আগে জানলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো’। তারপরও কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, আবার কেউ করেননি। নির্বাচন কমিশনের সময় শেষ হয়ে গেলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন না। এ বিষয়টি চূড়ান্ত হতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখানে কেউ অমান্য করলে দলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। সময়মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, দলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের বিষয় আছে। দল যার যার কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিয়ে থাকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা প্রত্যাহার করবে না তাদের বিষয়ে দল সময়মতো সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ আছে বলেও সংশ্লিষ্টদের মনে করিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।