গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১:০০:৩৬ অপরাহ্ন
সিলেটে কোন লোডশেডিং হয়নি-দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের
জালালাবাদ রিপোর্ট : দেশে চলমান তাপপ্রবাহে অস্থির হয়ে পড়েছে জনজীবন। তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হলেও, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে ঘাটতি মেটাতে নিয়মিতই হচ্ছে লোডশেডিং। ঢাকা বাদে অন্যান্য শহর ও গ্রামাঞ্চলে চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে না। এতে সারাদেশে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকগণ।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যের সাথে বাস্তবের মিল খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তপক্ষ শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহের তথ্য দিলেও দিনভর বিভিন্ন উপজেলায় লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট বিভাগে কোন লোডশেডিং হয়নি বলে জানানো হলেও সুনামগঞ্জ জেলার একাধিক স্থানে দিনের অর্ধেক সময় লোডশেডিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক গ্রাহক।
শনিবার সন্ধ্যায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় নোয়াখালী বাজারের একাধিক পিডিবি গ্রাহক অভিযোগ করেন- বৃহস্পতিবার দিনের অধিকাংশ সময় তারা বিদ্যুৎ পাননি।
এদিকে পাগলাবাজার এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক গণমাধ্যমকর্মী নোহান আরেফিন নেওয়াজ জানান, বৃহস্পতিবার দিনে একাধিকবার লোডশেডিং হয়েছে তবে তা অন্যান্য যে কোন সময়ের তুলনায় কম।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি’র সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট বিভাগে পিডিবির ১৮৬ দশমিক ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার শতভাগ সরবরাহ করা হওয়ায় কোন লোডশেডিং হয়নি।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সিলেট জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সৈয়দ নিয়াজ মোহাম্মদ দৈনিক জালালাবাদকে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট জোনে পল্লী বিদ্যুতের ৩৩৮ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে এই সময়ে কোন লোডশেডিং হয়নি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, গত ২২ এপ্রিল সোমবার রাত ৯টায় দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। যদিও ওই সময় চাহিদা ছিল ১৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। এতে রেকর্ড উৎপাদনের সময়ও ৪৬৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। যদিও বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা সরকারি প্রাক্কলনের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে রেকর্ড উৎপাদনের সময় হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং ছিল।
এদিকে ২২ এপ্রিল রাত ৯টায় রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদিত বিদ্যুতের ৩৫ শতাংশের বেশি পেয়েছে ঢাকা অঞ্চল। অর্থাৎ ঢাকায় ওই সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় পাঁচ হাজার ৪১০ মেগাওয়াট। সে সময় খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় এক হাজার ৯৪৪ মেগাওয়াট তথা ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, রাজশাহীতে এক হাজার ৮১৭ মেগাওয়াট তথা ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং কুমিল্লা অঞ্চলে এক হাজার ৫৮৩ মেগাওয়াট তথা ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ।
দেশের অন্য অঞ্চলগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল আরও কম। এর মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২২ এপ্রিল রাত ৯টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় এক হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াট তথা আট দশমিক ৭৮ শতাংশ, ময়মনসিংহ অঞ্চলে এক হাজার ২২৬ মেগাওয়াট বা সাত দশমিক ৯৪ শতাংশ, রংপুর অঞ্চলে ৯৭৯ মেগাওয়াট বা ছয় দশমিক ৩৪ শতাংশ, সিলেট অঞ্চলে ৬১২ মেগাওয়াট তথা তিন দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং বরিশাল অঞ্চলে ৫১৩ মেগাওয়াট বা তিন দশমিক ৩২ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলের নির্দেশেই বিদ্যুৎ সরবরাহে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে রাজধানীকে। ঢাকা শহরে পিক আওয়ারে বিশেষত বিদ্যমান গরমে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট। আর রাজধানীর বাইরে ঢাকার অন্যান্য জেলায় চাহিদা আরও প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট। অর্থাৎ শুধু ঢাকা বিভাগেই বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে পিক আওয়ারে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। এতে রেকর্ড উৎপাদনের সময় ঢাকায় তেমন লোডশেডিং ছিল না। তবে ফিডারগুলোয় বিশেষত গ্রাহক পর্যায়ে চাহিদা আরও কিছুটা বেশি হতে পারে। তাই ওই সময় ঢাকায় কিছুটা লোডশেডিং হয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে দিনে সেচ অঞ্চলগুলো অগ্রাধিকার পায়। রাতে অগ্রাধিকার পায় শিল্পাঞ্চলগুলো। এতে ওইসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ তুলনামূলক বেশি করা হয়। ফলে পিক বা অফপিক সময়ে ঢাকার বাইরে বিশেষত মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় অনেক কম। আবার রাত ১০টার পর গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে পর্যায়ক্রমিক তথা রোটেশন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এতে লোডশেডিং ঢাকার বাইরে বেশি হয়।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়। রাত ৯টাকে পিক আওয়ার ধরে ওই সময় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। রাত ১০টার পর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমতে থাকে। তবে চলমান তাপপ্রবাহে রাতেও তাপমাত্রা তেমন একটা কমছে না। এছাড়া জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তনের কারণে মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকছে। ফলে রাত ১২টা থেকে ২টার মধ্যে সাধারণত সর্বোচ্চ লোডশেডিং হচ্ছে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, ২২ এপ্রিল রেকর্ড উৎপাদনের সময় (রাত ৯টা) ৪৬৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং হলেও, তিন ঘণ্টা পর রাত ১২টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪৫ মেগাওয়াট। রাত ১টায় লোডশেডিং হয় ৮৯১ মেগাওয়াট ও ২টায় ৯৩৮ মেগাওয়াট। পরের দিন (২৩ এপ্রিল) রাত ৯টায় ১৫ হাজার ৯৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ওই সময় উৎপাদন পর্যায়ে ঘাটতি ছিল ৭৩৮ মেগাওয়াট। তবে তিন ঘণ্টা পর রাত ১২টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৪৩১ মেগাওয়াট। রাত ১টায় লোডশেডিং হয় এক হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট ও ২টায় এক হাজার ৪২২ মেগাওয়াট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিনও (২২ এপ্রিল) সারাদেশে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে গড়ে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। ঈদুল ফিতরের পর কয়েক দিন চাহিদা কম থাকায় সাময়িক স্বস্তি থাকলেও, গত এক সপ্তাহ ধরে লোডশেডিং বাড়ছেই। গত কয়েক দিনে তা চরম আকার ধারণ করেছে। তবে তাপপ্রবাহ না কমা পর্যন্ত লোডশেডিং নিয়ে আপাতত কোনো সুখবর দিতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ।
বুধবার বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমান জামালপুরে সাংবাদিকদের বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম থাকার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে তাপপ্রবাহ কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তিনি বলেন, বোরো আবাদের অঞ্চল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছাড়া সব জায়গায় সমানভাবে লোডশেডিং হচ্ছে। জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা নদীতে জেগে ওঠা চরে সৌর বিদ্যুতের প্লান্ট স্থাপনের জায়গা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।