ইতিহাসের দীর্ঘতম তাপপ্রবাহ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০:৪৫ অপরাহ্ন
*ফের হিট এলার্ট* খুলছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান* বৃষ্টি হবে, কমবে না গরম*
জালালাবাদ রিপোর্ট : ইতিহাসের দীর্ঘতম তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে। যেটি গত ৩১ মার্চ শুরু হয়ে এখনো চলছে। কখনো কখনো এটি অতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। তাপপ্রবাহের এতটা ব্যাপ্তি আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ।
টানা তাপদাহে সিলেট ছাড়া মোটামুটি পুরো দেশেই জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন স্থানে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তীব্র গরমে বাড়ছে রোগব্যাধি। শ্রমজীবী মানুষের উপার্জন কমছে। এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, অতীতে বাংলাদেশে এপ্রিল মাসে টানা এত ব্যাপ্তিকালের তাপপ্রবাহের রেকর্ড নেই।
এ অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার চতুর্থ দফায় নতুন করে তাপ প্রবাহের সতর্কবার্তা বা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এখন প্রায় ৪৫টির মতো জেলার ওপর দিয়ে এই দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন মাত্রায়। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সংস্থাটি বলছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে তীব্র ধরণের তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং এ সময় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়বে।
বৃষ্টি হবে, তবে কবে হবে?
নতুন করে তিন দিনের হিল অ্যালার্ট জারি হলেও আবহাওয়া বিভাগ আশা করছে চলতি সপ্তাহের শেষ থেকেই উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, ২৯ তারিখের দিক থেকেই সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তাতে আগামী মাসের শুরুতে মোটামুটি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। যদিও চলতি সপ্তাহের শেষ থেকে বৃষ্টি হলেও তাতে তাপমাত্রা কতটা কমে তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ সাধারণত পূর্বাঞ্চল থেকে বৃষ্টি শুরু হলে তা খুব একটা গরম কমায় না।
বজলুর রশীদ বলেন, বৃষ্টিপাত পশ্চিমাঞ্চল থেকে শুরু হলে সেটি দ্রুত আবহাওয়া ঠাণ্ডা করতে শুরু করে কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চল দিয়ে। ফলে দ্রুতই গরম খুব একটা কমবে না। তবে তাপমাত্রা আর বাড়বেনা এটি বলা যায়।
এবার এত তাপমাত্রার কারণ কী :
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশের ঐ অঞ্চলের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের অবস্থান। এইসব প্রদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি। এসব জায়গায় বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে ওঠানামা করে।
যেহেতু ওগুলো উত্তপ্ত অঞ্চল, তাই ওখানকার গরম বাতাস চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের তাপমাত্রাকে গরম করে দেয়, বলেছেন আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি এই আন্তঃমহাদেশীয় বাতাসের চলাচল ও স্থানীয় পর্যায়েও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেশব্যাপী এবছর তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বিগত বছরের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে ২০২৪ সাল উত্তপ্ত বছর হিসেবে যাবে। আমরা এ বছর তাপপ্রবাহের দিন এবং হার বেশি পেতে যাচ্ছি।
এদিকে, সারাদেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি আর বাড়ছে না; তীব্র গরমের কারণে এক সপ্তাহের ছুটি শেষে রোববার থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বৃহস্পতিবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।