তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন দেশের ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ৯:১৪:১৩ অপরাহ্ন
বৈশ্বিক প্রতিবেদনের তথ্য
জালালাবাদ রিপোর্ট : বাংলাদেশে গত বছর নিষ্ফলা মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ (গবেষণার আওতায় আসা ব্যক্তিদের ৩১ শতাংশ) তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার উচ্চ মাত্রার সম্মুখীন হয়ে থাকতে পারেন। তাঁদের মধ্যে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বা শরণার্থীশিবিরের ৬৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীও রয়েছে।
এসব মানুষের তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় বিশেষভাবে প্রভাব রেখেছে প্রতিকূল আবহাওয়া, বৈশ্বিক যুদ্ধ-সংঘাত ও উচ্চ মাত্রায় দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য মূল্যস্ফীতি।
বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে বুধবার ফুড সিকিউরিটি ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (এফএসআইএন) প্রকাশিত প্রতিবেদন ২০২৪-এ এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এ নেটওয়ার্কের সদস্য। এটির অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বজুড়েই গত বছর খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। ওই বছর ২৮ কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ সংঘাত, বিশেষ করে গাজা ও সুদানে লড়াই চলার কারণে তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন হয়।
বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশটিতে খাদ্যসংকট দীর্ঘদিনের সমস্যা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে পালিয়ে আসায় ২০১৭ সাল থেকে এ জেলাকে জিআরএফসিতে (খাদ্যসংকট নিয়ে বৈশ্বিক প্রতিবেদন) একটি বড় খাদ্যসংকটপ্রবণ এলাকা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
২০২৩ সালে আইপিসির (দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন) বিশ্লেষণে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা ও ২৩ শতাংশ জনসংখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধস ও নদীভাঙনপ্রবণ এলাকার জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও তাঁদের আশ্রয় দেওয়া কক্সবাজারের বাসিন্দারাও রয়েছেন।
২০২২ সালে রেকর্ড খাদ্যশস্য উৎপাদন ও ২০২৩ সালে খাদ্যের সহজলভ্যতার উন্নতি হলেও বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ধাক্কায় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তিই থেকেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি পৌঁছায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ তা এসে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৬ শতাংশে।
এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এটি ছিল সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে জ্বালানি, গমের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যশস্য, সার ও গবাদিপশুর খাবার আমদানিতে বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা মূল্যস্ফীতিতে ভূমিকা রাখে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এসব পণ্যের আমদানি ব্যাহত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া। ফলে একদিকে খাদ্যশস্যের আমদানি কমার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্যের উৎপাদন খরচ বাড়ে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অব্যাহত উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর খাদ্যসুবিধা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এসব মানুষের আয় ক্রমেই কমেছে ও তাঁদের খাদ্যপণ্য কেনার খরচ বেড়েছে।
২০২২ সালে ৭০ লাখের বেশি মানুষ অস্বাভাবিক মৌসুমি বন্যার শিকার হন এবং প্রধানত সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গৃহহীন হন ২০ লাখের বেশি মানুষ। এতে তাঁদের সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ কারণে ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলা করার সক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে তাঁদের।
আগস্টে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী মৌসুমি বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস সৃষ্টি হয়। এর শিকার হন ১৩ লাখ মানুষ।
মৌসুমভিত্তিক কর্মসংস্থানের প্রভাব এবং খাদ্যসুবিধা ও প্রাপ্যতার ওপর পুনঃপুন বিপর্যয় মানুষের মধ্যে বড় ধরনের পুষ্টির ফারাক তৈরি করেছে।