হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ৬:০৮:১৬ অপরাহ্ন
তাহিরপুর প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হাওরপাড়ের নারীরা সারা বছর খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হলেও বৈশাখের সময় চিত্র উল্টো। ধান শুকানোর কাজ, চিটা ছাড়ানো, গোলায় তুলা, খড় শুকানোসহ অনেক ভারী কাজ করছেন কৃষক পরিবারের নারীরা। তারা জমির মালিকের মা, স্ত্রী, মেয়ে ও আত্মীয় স্বজন। সবাই ধানের খলায় চলে আসেন ধানের মায়ায়, জীবিকার টানে সংসারের উন্নতির জন্য। কাজ করেন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। কারণ এই ধানের উপর নির্ভর করে আগামী দিনগুলোতে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, বিয়েশাদী, সংসার খরচসহ সবকিছুই। তাই এভাবেই যুগ যুগ ধরে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমান তালে কাজ করে বদলে দিচ্ছে হাওর, কৃষি, সেই সঙ্গে দেশকে।
হাওরে ঘুরে দেখা গেছে, হাওরে পুরোদমে চলছে কৃষকের কষ্টে ফলানো পাকা সোনার ধান ঘরে তুলার কাজ। সেই ধান হাওর থেকে শ্রমিক দিয়ে কেটে বাড়ির পাশে খলায় এনে করা হয় মাড়াইয়ের কাজ। ধানকাটা ও মাড়াইয়ের পরে চলে শুকানোর কাজ। হাওরে কৃষির বিকল্প কর্মসংস্থান নেই যার ফলে কৃষিই একমাত্র জীবন চালিকা শক্তি। তাই পুরুষের শ্রম ঘামে হাওরে পাকা ধান সংসার আর সন্তান পালন করছে সমানতালেই হাওরে নারীরা। কৃষি সঞ্জীবিনী লাভ করছে নারীর হাতের ছোঁয়ায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খলায় কাজ করছেন তারা। তাদের শ্রমের জন্য কোনো মূল্য দেওয়া হয় না। কৃষি বিভাগ বলছে হাওরে যত শ্রমিক কাজ করে তার অর্ধেকেই নারী। এই নারীরা হাওরের কৃষির চাকা সচল রেখেছেন কৃষকের সাথে তাল মিলিয়ে যুগ যুগ ধরে। পারিশ্রমিক নিয়ে দরিদ্র পরিবারের কিছু নারী কাজ করলেও তাদের হিসাব জানা নেই কারো। তবে এই শ্রম বিপ্লবে প্রায় তিন লাখ কৃষক পরিবারের নারী রয়েছেন যুক্ত।
জেলার মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষানী জামেলা বেগম কাজ করছেন নিজেদের ধান শুকানোর খলায়। তিনি জানান, পরিবারের একমাত্র কৃষিই সংসার চলার হাতিয়ার। তাই সংসারের অন্য কাজের মতই কৃষি কাজ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে সংসারের আর্থিক উন্নতি হয়, তার জন্যই খুব বেশি একটা সমস্যা হয় না। আর নিজের জন্যই আমরা ধান শুকানো থেকে শুরু করে গোলায় তুলা পর্যন্ত কাজ করি।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় হাওরে চলতি মৌসুমে ১৭ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এতে ৮০ হাজার মেট্রিকটনের বেশি চাল উৎপাদন হবে। যার মূল্য ২শ ৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশী।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাসান উদ দোলা জানান, শহরাঞ্চলে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বা অন্য ফ্যাক্টরি থাকলেও হাওরাঞ্চলে তা নেই, তাই এখানকার নারীরা কৃষিকাজে কৃষককে সহযোগিতা করেন। তিনি আরো জানান, কৃষি সম্পর্কে জানাতে ও কৃষি কাজে আগ্রহ বাড়াতে কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, কৃষি প্রদর্শনীতে হাওরের নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করেছি। হাওরে হতদরিদ্র পরিবারের খুব অল্প নারী শ্রমিক আছেন, তারাই মজুরিতে কাজ করেন। কিন্তু সচ্ছল ও অসচ্ছল কৃষক পরিবারের অনেক নারী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওরের খলায় থাকেন।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, কৃষকের কষ্টে ফলানো সোনার ফসল হাওর থেকে কেটে মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছে হাওর পাড়ের নারীরা। কৃষকের পাশাপাশি ধান তুলতে গিয়ে অমানুষিক কষ্ট করেন নারীরা। আশা করছি এবার কৃষকগণ তাদের ফসল নির্বিঘ্নে গোলায় তুলতে পারবে আর তার জন্য সব কিছু করা হবে।