টানা ২৬ দিন : ৭৬ বছরের রেকর্ড ভাঙলো তাপপ্রবাহ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৯:৪৪ অপরাহ্ন
*চার কারণে এত তাপ * এপ্রিলে মাত্র ১টি কালবৈশাখী, গতবছর ছিলো ৭টি
জালালাবাদ রিপোর্ট : অসহনীয় তাপমাত্রা কমছেইনা। আগুন ঝরা গরমে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশজুড়ে তাপদাহে ঘরে কিংবা বাইরে সবখানেই কাতর সবাই।আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এবার এই এপ্রিল মাসে টানা যত দিন তাপপ্রবাহ হয়েছে, তা গত ৭৬ বছরে হয়নি। গত বছর (২০২৩) একটানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ হয়েছিল। এবার তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে। শুক্রবার ২৬ এপ্রিলও তাপপ্রবাহ বয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এবারের মতো তাপপ্রবাহ টানা আগে হয়নি। তিনি বলেন, এতে বলা যায়, ৭৬ বছরের রেকর্ড এবার ভেঙে গেল। এবার টানা যেমন তাপপ্রবাহ হয়েছে, আবার এর বিস্তৃতিও বেশি ছিল। এ বছর দেশের ৭৫ ভাগ এলাকা দিয়ে টানা তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, যা আগে কখনোই ছিল না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৪৮ থেকে তাদের কাছে বিভিন্ন স্টেশনের আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্ত আছে। তবে সব বছরে সব স্টেশনের উপাত্ত নেই। উপাত্তগুলো একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে আছে ১৯৮১ সাল থেকে। তারপরও আগের স্টেশনগুলো বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ১৯৪৮ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহ হয়েছে এবারের এপ্রিল মাসে।
এর আগে ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল, তবে তা টানা ছিল না। কিন্তু এবার টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহ হলো। গত ৪৩ বছরের মধ্যে দেখা গেছে যশোরে তাপপ্রবাহের দিন সবচেয়ে বেশি। এরপরই আছে ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গা। গতকালও চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিলো ৪২ দশমিক ৭, অর্থাৎ ৪৩ ডিগ্রী ছুঁই ছুঁই।
বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার যে মূল বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে, সেটা হলো অনিশ্চয়তা। প্রকৃতি কখন কীভাবে আচরণ করবে, তার ছন্দটাই নষ্ট হয়ে গেছে বা যাওয়ার পথে। এবার এত গরম হয়তো পরে দেখা যাবে, গরম একদম কমে গেছে। এই বিরূপ প্রকৃতিকে মোকাবিলা করাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চার কারণে এত তাপ :
আবহাওয়াবিদ, জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এবারের তাপপ্রবাহের পেছনে চারটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো-উপমহাদেশীয় উচ্চ তাপ বলয়, শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, এল নিনোর সক্রিয়তা এবং বজ্রমেঘের কম সংখ্যা।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, চৈত্র মাসের শেষ থেকে দেশে গরম বাড়ে। বৈশাখ মাসজুড়েই এর প্রভাব থাকে। আসলে এবার বা সাম্প্রতিক সময়ে যে প্রচণ্ড তাপ, এর কারণ তো বৈশ্বিকভাবেই তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। তাপমাত্রা বৈশ্বিকভাবে ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, শৈলৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবারের প্রচণ্ড গরমের একটি কারণ। পাহাড় বা পর্বতে বাধা পেয়ে বায়ু ওপরের দিকে উঠতে থাকলে তা তাপ কমিয়ে শীতল হতে থাকে। এর ফলে কোনো এক উচ্চতায় জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। আর এই মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়।আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এ জন্য পর্বতের প্রতিবাত অঞ্চল বা উইন্ড অত্যধিক বৃষ্টি হয়। ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমঘাট পর্বত; বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, মিয়ানমারের আরাকান পর্বতে এ ধরনের বৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ের গায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এ বৃষ্টি বেশি হয়। কিন্তু এবার এর পরিমাণ একেবারেই কম। তাই গরমও অনেক বেশি।
এ বছর এপ্রিল মাসে মাত্র একটি বড় কালবৈশাখী হয়েছে। গত বছরও এর সংখ্যা ছিল ৭টি। বজ্রমেঘ সৃষ্টি হয়ে কালবৈশাখী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া তৈরি করে। এর জন্য ভারতের বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় সৃষ্টি হওয়া স্কোয়েল বা ঝড়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এবার এর লক্ষ্মণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে, ১৫ এপ্রিল ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বর্ষা মৌসুমে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। বলা হয়েছে, এবার ভারতের তামিলনাড়ু, উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বড় অংশে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। এবার এসব অঞ্চলে দীর্ঘদিনের স্বাভাবিক বৃষ্টির চেয়ে ১০৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হতে পারে।