জীবন বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাওরে ধান তুলছে কৃষাণ কৃষাণী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ৯:২৩:২৩ অপরাহ্ন
তাহিরপুর প্রতিনিধি: জীবন বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাওরে ধান কাটা, মাড়াই আর শুকানোর কাজ করছি। তীব্র তাপদাহের চিন্তা করলে কি আর জীবন বাঁচানো যাবে। এই ধানের উপর নির্ভর করেই আমাদের বাঁচে। সারা বছর চলতে হয় জীবন জীবিকার অবলম্বন। শুধু আমি না আমার মত হাওরাঞ্চলে সকল কৃষকগন।
নিজের জমির পাকা ধান কেটে মাড়াই শেষ করে শুকানোর কাজ করা অবস্থায় কথা গুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শনি হাওরে পাড়ের কৃষক সাদেক আলী।
তিনি জানান, চলতি বছরে ২২ কিয়ার জমিতে হাইব্রিড জাতীয় ধানের চাষ করেছিলেন। এতে ৪ শত মন ধান হবে। ধান কাটা ও মাড়াই শেষ, এখন শুধু শুকানোর বাকী রয়েছে। সেই ধান শুকানোর জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে নিজ খলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তীব্র তাপদাহের মধ্যে বিরামহীন মহাকর্মযজ্ঞে হাওরাঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে কাজের মধ্যে কোনো ভাটা পড়েনি। এই ধানের কারণে সব কিছুই তুচ্ছ আমাদের কাছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শুধু সাদেক আলীই নয় উপজেলার ছোট বড় ২৩টি হাওরের কৃষকরা নিজেদের কষ্টে ফলানো সোনার ফসল তুলায় সবাই ব্যস্ত সময় পার করছে। এ উপজেলার হাওরে ধান কাটা পুরোদমে চলছে। হাওরের যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই ধান গোলায় তোলার উৎসব। আর এক সপ্তাহ বৃষ্টি না হলে খুব সহজে ধান গোলায় তুলতে পারবে কৃষকগণ।
মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক রুহিন মিয়া সহ অনেকেই বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় আমাদের জন্য ভাল হয়েছে। হাওরে ধান কাটার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিক আগে আসলেও এখন একবারে কমে গেছে। এদিকে স্থানীয়ভাবেও শ্রমিক না পাওয়ায় খুব কষ্ট করে ধান কেটেছি। এখন শুকানোর পর ঘরে গোলায় তুলব। তুলার পর মনে শান্তি আসবে। এই ধান তুলতে পারলেই তারা ধনী। আর এই ধানে কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অভাব জড়িয়ে সীমাহীন কষ্টের শেষ থাকে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ হাসান উদ দৌলা বলেন, এই পর্যন্ত ৬০ ভাগের বেশী ধান কাটা হয়েছে। উপজেলায় হাওরে চলতি মৌসুমে ১৭ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোর ধান চাষ করা হয়েছে। এতে ৮০ হাজার মেট্রিকটনের বেশি চাল উৎপাদন হবে। যার মূল্য ২শ ৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশী। কৃষি অফিসে সকল কর্মকর্তাগন হাওরে কৃষকের সকল বিষয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
হাওরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মনের আনন্দে নতুন বছরে নতুন আশায় পরিবার পরিজন নিয়ে ধান কাটা, মাড়াই আর শুকানো শুরু করেছেন তারা। ভাল ফলনে কিষান কিষানির নির্মল হাসিতে চোখে মুখে আগামী দিন গুলো আনন্দে কাটানোর তৃপ্তির হাসি। বৈশাখে গ্রামের বাইরে থাকা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ছুটে আসেন পরিবারের অন্যদের সহযোগিতা করতে। কারণ এই ধানের উপর নির্ভর করে তাদের পুরো বছরের খরচ, ছেলে মেয়ে লেখা পড়া, বিয়ে শাদিসহ নানান খরচ।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, প্রতি বছরেই কৃষকরা তাদের কষ্টে ফলানো ধান গোলায় তুলতে পারেন এমনটা হয় না। ২০১৭ সালের হাওর বিপর্যয়ের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাঁদের তাড়িয়ে বেড়ায়। কোনো ভাবেই ফসল রক্ষা করা যায়নি। বাঁধ ভেঙে পানিতে হাওর ডুবে যাওয়ায় সে বছর হাওর থেকে একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল কৃষকদের। ২০২২ সালে বছর অন্তত ২০টি হাওরে ফসলহানি হয়েছিল। ২০২৩ সালে নির্বিঘেœ ধান গোলায় তুলেছেন কৃষকরা।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, কৃষকের কষ্টে ফলানো সোনার ফসল হাওর থেকে কেটে মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছে হাওর পাড়ের কৃষক ও তাদের পরিবার। আশা করছি এবার কৃষকগন তাদের ফসল নির্বিঘেœ গোলায় তুলতে পারবে।