শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিতে ধস
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ৯:১৮:১২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে ছিল ১০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় তিনগুণ কমেছে প্রবৃদ্ধি। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুতের তীব্র সংকট রয়েছে। ডলার সংকটের ফলে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই উৎপাদনও কম হচ্ছে। এ ছাড়া লজিস্টিক সাপোর্টেরও ঘাটতি রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিবিএসের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশ এবং প্রথম প্রান্তিকে ছিল ৭.২৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধিতে ধস নামে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শিল্প খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি কমেছে উৎপাদন খাতে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে গিয়ে এ খাতে বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় প্রান্তিকে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ। অথচ তিন মাস আগেও প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই সময়ে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ।উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধিতে ধস নামলেও নির্মাণ খাতে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে নির্মাণ খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। যা প্রথম প্রান্তিকে ছিল ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ ছাড়া গত অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শিল্প খাতের উৎপাদনের পাশাপাশি তলানিতে রয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের প্রবৃদ্ধি। যদিও প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ, যা তার প্রান্তিকে ছিল ঋণাত্মক ৪৬ শতাংশ। প্রান্তিকের হিসেবে উন্নতি হলেও অর্থবছরের হিসেবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে জ্বালানি খাতের প্রবৃদ্ধি। বিবিএসের হিসেবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয়েছিল ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সেখানে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনা অনেক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
শিল্প খাতের এ নাজুক অবস্থার মধ্যেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ শিল্প খাতের ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা বাতিল চেয়েছে। সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে ঢাকা সফরে রয়েছে। ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড় করার আগে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও আগের শর্ত পূরণের অগ্রগতি জানতেই তাদের এই সফর। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভা বৈঠক হচ্ছে। বৈঠকে দীর্ঘদিন ধরে কর অবকাশ প্রাপ্ত শিল্প খাত নিয়ে আলোচনা হয়।এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ১০ বছর হিসাবে কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া শিল্প খাত বিবেচনা করলে দেশের অধিকাংশ খাতই চলে আসছে। যার মধ্যে রয়েছে-ফার্মাসিটিক্যালস, কৃষি যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স শিল্প, অটোমোবাইল, বাইসাইকেল, গাড়ির টায়ার, নির্মাণ সামগ্রীর স্বয়ংক্রিয় ইট কিংবা রড, রফতানি করে এমন কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, পোল্ট্রি শিল্প, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং শিল্প ও মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ। এমন অন্তত ৩০-৩৫ ধরনের শিল্প এর আওতায় চলে আসবে।
তিনি আরও বলেন, আইএমএফ পরামর্শ দেওয়ার অনেক আগে থেকে এনবিআর এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তবে অবশ্যই আমাদের যেসব দেশীয় শিল্প ভালো করছে এবং যেসব পণ্যের জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, ওইসব খাতকে অবশ্যই আমাদের বিবেচনা করতে হবে। জটিল এমন সিদ্ধান্ত হুটহাট করে নেওয়া সম্ভব হবে না।
আইএমএফ প্রসঙ্গে সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, সবাই কর অব্যাহতি বললেও আমরা সেটিকে লজিস্টিক সাপোর্ট বলে থাকি। এ ধরনের অর্থনৈতিক পলিসি প্রতিটি দেশেই রয়েছে। আইএমএফ যেটি বলে আসছে, সেটা হলো ভর্তুকি কমানো। নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকি এটি এনবিআরের বিষয় না। ভর্তুকি আসলে এক ধরনের সাপোর্ট। আমরা ভর্তুকিকে সাপোর্টের পর্যায়ে নিয়ে যাব। এসব সাপোর্ট ধাপে ধাপে কমিয়ে আনব, যাতে আমাদের উৎপাদনে ধস না নামে। সেটি আইএমএফও জানে। আমরা তা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। একসঙ্গে সবকিছু মানা যাবে না। একইভাবে এনবিআরও যেখানে করছাড় কিংবা সাপোর্ট দিয়ে আসছে, সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পলিসি সাপোর্টের ক্ষেত্রে এনবিআর এক জায়গায় স্থির থাকে না। প্রতি বছর বাজেটে সাপোর্ট দিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।