রেল নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা থেকে সুনামগঞ্জ আউট!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ৯:৩৬:২০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : নতুন করে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নড়াইল, কক্সবাজার, বাগেরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি ও মাগুরা এই ১১টি জেলায় যুক্ত হচ্ছে রেলপথ। এ নিয়ে সরকার নতুন কিছু জেলাকে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। যেখানে সারাদেশের ৫৫টি জেলায় যুক্ত হবে রেলপথ। তবে সেখানে নেই সুনামগঞ্জের নাম। এই রেল নেটওয়ার্ক পরিকল্পনার বাইরে রয়েছে সুনামগঞ্জসহ আরো ৮টি জেলা।
সারাদেশে নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির জন্য ২০১৪ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে রেলওয়েকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু গত ১০ বছরেও প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। হাওর অঞ্চলের সুনামগঞ্জ রেল যোগাযোগের আওতায় আসবে এমন প্রতিশ্রুতি এসেছে অনেকবার। ৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদরকে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করার সম্ভাব্যতা যাচাই এবং প্রয়োজনীয় রেলপথ নির্মাণের বিস্তারিত নকশা তৈরি করার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই করে এই রুটে ৪৪ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের সুপারিশ করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প ২০২০ সালের অক্টোবরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কয়েকদফা সময়সীমা বাড়ানোর পরেও শেষ হয়নি প্রকোল্প। আজ অবধি আলোর মুখ দেখেনি সেটি। রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে সারাদেশে মোট রেলপথ ৩,৫৫৩ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে রয়েছে ১৭৪২ দশমিক ১৯ কিলোমিটার। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে ১৮১১ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার। সারাদেশে ডুয়েল গেজ রেলপথ রয়েছে মাত্র ৮৪২ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। মিটার গেজ রেলপথ রয়েছে ১৭০২ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর আগে সারাদেশে রেলপথ ছিল ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার দশমিক ১০ কিলোমিটার। এ পর্যন্ত ৬৭৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের নতুন রেল রুট নির্মাণ করা হয়েছে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা জানান, ২০১৪ সালে ২৩ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলওয়েকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সারাদেশের প্রত্যেক জেলাকে রেলের নেটওয়ার্কে আনতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী রেলওয়েকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-সিলেট জেলাসমূহ নিয়ে পূর্বাঞ্চল, পাকশি ও লালমনিরহাট নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল, ঢাকা-ময়মনসিংহ নিয়ে উত্তরাঞ্চল এবং রাজবাড়ী-খুলনা বিভাগ নিয়ে গঠিত হবে দক্ষিণাঞ্চল। এতে চট্টগ্রাম হবে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর, উত্তরাঞ্চলের ময়মনসিংহ, পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী এবং দক্ষিণাঞ্চলের সদরদপ্তর হবে ফরিদপুরে। বর্তমানে পূর্ব ও পশ্চিম নামে দু’টি অঞ্চলে পরিচালিত হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম, ঢাকা, পাকশি ও লালমনিরহাট বিভাগের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে।
রেলওয়ে চারটি অঞ্চলে ভাগ হলে সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজবাড়ী ও খুলনা নতুন করে বিভাগীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বছর দুই আগে রেলওয়েকে চার অঞ্চলে ভাগ করার প্রক্রিয়া ও জনবল চাহিদা নিয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খড়সা প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে রেলওয়ের জনবল চাহিদা দেওয়া হয়েছে ৫৭ হাজার। বর্তমানে রেলওয়ে জনবল আছে ৪৭ হাজার ২৭৫ জন। কিন্তু জনবল চাহিদা ৬৮ হাজার। নতুন প্রক্রিয়ায় ১১ হাজার জনবল কম ধরা হয়েছে। জনবল কাঠামোর কারণে ভাগ প্রক্রিয়ায় তেমন অগ্রগতি নেই। চার অঞ্চলের নাম ঘোষণা করা হলেও জনবল সংকটের কারণে গত ১০ বছরেও চূড়ান্ত প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহদাত আলী গণমাধ্যমকে জানান, আগে ৪৪টি জেলা যুক্ত ছিল রেল নেটওয়ার্কে। বর্তমানে ৫০টি জেলায় আছে রেলপথ। নতুন রেলপথ চালু হওয়া ও চলমান রেলপথের কাজ শেষ হলে সারাদেশে ৫৫টি জেলা রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে। নতুন আরও ১১টি জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। এখনো পার্বত্য অঞ্চলসহ কিছু জেলা রেল নেটওয়ার্কের বাইরে। তবে পর্যায়ক্রমে সবগুলো জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে সরকারের নতুন এই পরিকল্পনায় ১১টি জেলার মধ্যে সুনাগঞ্জের নাম না থাকায় হতাশ সুনামগঞ্জের মানুষ, এতে পিছালো সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।