অর্ধেক দিন বিদ্যুৎহীন সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৫:৫৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেট অঞ্চলে সোমবার লোডশেডিং এর ভয়াবহতা দেখা গেছে। ভোররাত থেকেই থেমে থেমে শুরু হয় বিদ্যুতের আসা যাওয়া। দিনের প্রায় অর্ধেক সময়ই সিলেট ছিল বিদ্যুৎহীন।
তীব্র গরমে সারাদিন বৃষ্টিহীন কড়া রোদে লোকজনের নাভিশ^াস উঠেছে। একদিকে তাপপ্রবাহে জনজীবন নাজেহাল তারউপরে এই বিদ্যুতের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন মানুষ। বিদ্যুৎ বিভাগ লোডশেডিংয়ের পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ বললেও অনেকেই তা মানতে নারাজ। ভোক্তভোগী লোকজন তা আরও বেশি বলে মনে করেন। সকাল থেকেই বিদ্যুৎ না থাকায় কাজে কর্মে নেমে আসে স্থবিরতা। ব্যবসা বাণিজ্যে চরম মন্দাভাব কাটান ব্যবসায়ীরা। নাওয়া খাওয়া কোনো কিছুতেই স্বস্তি ছিলনা সারাদিন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় বিদ্যুৎ বিড়ম্বনায় দুর্ভোগের সীমা ছিল না শিক্ষার্থীদের। ভোরে উঠে স্কুলে রওয়ানা দিতে হয় তাদের। এগারোটার পর রোদের মধ্যে বাড়িফিরে বিদ্যুৎ না পেয়ে হাসফাস করেন অনেক স্কুলগামী শিক্ষার্থী। গ্রাহকরা জানান সকাল থেকে সারাদিনই লোডশেডিং হয়েছে। একঘণ্টা দিলে দুই ঘণ্টা থাকে না। এভাবে করেই গেছে সারাদিন। দিনের অর্ধেকটা সময় ছিল না বিদ্যুৎ।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি’র সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির দৈনিক জালালাবাদকে জানান, সিলেট অঞ্চলে সোমবার চাহিদা ছিল ১৮৩ দশমিক ৮০ মেগাওয়াট। সরবরাহ করা হয়েছে ১৩৩ দশমিক ৪০ মেগাওয়াট। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ঘাটতি ছিল ৫০ দশমিক ৪০ মেগাওয়াট বা ২৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।
সরেজমিন দেখা যায়, সোমবার সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ আসছে যাচ্ছে। দুপুরের দিকে কোনো কোনো এলাকায় একসাথেও বিদ্যুৎ ছিল না। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলে রাখলেও ক্রেতার দেখা মিলছিল না। কিছু কিছু বড়ো বড়ো দোকানে বা শো-রুমে বিকল্প পন্থায় জেনারেটর দিয়ে লাইট জ¦ালানো হলেও ছিলনা ফ্যান বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসব দোকানে বিদ্যুতের অভাবে লোকজনকে ঘেমে জবুথুবু হতে দেখা গেছে।
লোডশেডিংয়ে লোকসান গুনতে হয়েছে প্রিন্টিং ব্যবসায়। যন্ত্রপাতি বন্ধ রেখে বসে থেকেছেন কম্পিউটার ও ফটোকপির ব্যবসায়ীরা। কাউকে কাজের মাঝখানে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অর্ধেক কাজ করে বসে থাকতে দেখা গেছে। নগরীর জল্লারপারের স্টেশনারী ও ফটোকপির দোকান সন্ধানীর কর্ণধার ফরিদ আহমদ জানান সকাল থেকে বারবার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। বিদুৎ না থাকায় কাজ কমে গিয়েছে। কখন আসবে জানা না থাকায় কাস্টমারকেও কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিচিত দুই একজন পরে এসে নিয়ে যাবেন বলে ফটোকপির জন্য কাগজ রেখে গেলেও চলমান কোনো কাস্টমার ছিলেন না। একদিকে গরম অন্যদিকে কাজ বন্ধ সবমিলিয়ে খুব খারাপ অবস্থা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলের নির্দেশেই বিদ্যুৎ সরবরাহে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে রাজধানীকে। ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে দিনে সেচ অঞ্চলগুলো অগ্রাধিকার পায়। রাতে অগ্রাধিকার পায় শিল্পাঞ্চলগুলো। এতে ওইসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ তুলনামূলক বেশি করা হয়। ফলে পিক বা অফপিক সময়ে ঢাকার বাইরে বিশেষত মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় অনেক কম। আবার রাত ১০টার পর গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে পর্যায়ক্রমিক তথা রোটেশন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এতে লোডশেডিং ঢাকার বাইরে বেশি হয়।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়। রাত ৯টাকে পিক আওয়ার ধরে ওই সময় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। রাত ১০টার পর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমতে থাকে। তবে চলমান তাপপ্রবাহে রাতেও তাপমাত্রা তেমন একটা কমছে না। এছাড়া জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তনের কারণে মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকছে। ফলে রাত ১২টা থেকে ২টার মধ্যে সাধারণত সর্বোচ্চ লোডশেডিং হচ্ছে।