খাদ্য মজুদ কমে গেছে
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ৯:০৩:৫৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: সরকারি খাদ্য মজুদ একেবারে কমে এসেছে। মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে দেশে মোট খাদ্য মজুদ কমেছে ৭ লাখ ১১ হাজার ৯৪৩ টন। তবে এ সময়ে সবচেয়ে বেশি কমেছে চালের মজুদ। সাত মাসে চালের মজুদ কমেছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৭ টন। এ ছাড়া সরকারি গুদামে ধানের মজুদ কমতে কমতে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। সরকারি গুদামে এখন এক ছটাক ধানও নেই। অবশ্য গমের মজুদ কিছুটা বেড়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের হাতে খাদ্য মজুদ কমে গেলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয়। বাজারে তখন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া সরকারি খাদ্য মজুদ কমে গেলে গরিবদের জন্য সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিও হোঁচট খায়। অবশ্য খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, আর অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই আসন্ন বোরো মৌসুমে সরকারের পক্ষ থেকে ধান-চাল ক্রয় শুরু হবে। বোরো ধান-চাল আসা শুরু হলেই সরকারি খাদ্য মজুদ আরও বেড়ে যাবে।
এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষক ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘সরকারি খাদ্য মজুদ যে হারে কমে গেছে সেটি চিন্তার বিষয়। কারণ সরকারি গুদামে চালের মজুদ কমে গেলে বাজারের অসাধু কারবারিরা সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ পেয়ে যায়। অতীতে দেখা গেছে, সরকারি খাদ্য মজুদ কমে যাওয়ার পরপরই হঠাৎ বাজারে ধান-চালের দাম বেড়ে গেছে। এবারও যাতে সে রকম কিছু না হয়, সে জন্য সরকারের উচিত দ্রুত খাদ্য মজুদ বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি খাদ্য মজুদ কমে যাওয়ার ফলে আরেকটি সংকট দেখা দেয় গরিববান্ধব সরকারি কর্মসূচিতে। কারণ সরকার প্রতি মাসে দেশের অসহায়-গরিবদের খাদ্য সহযোগিতা দিয়ে থাকে। চালের মজুদ কমে গেলে এ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিও বাধাগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য কম দামে খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হবে। তাই বিষয়গুলো সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে এবং দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’ অবশ্য খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি বছরই বোরো মৌসুম শুরুর আগমুহূর্তে সরকারি খাদ্য মজুদ কিছুটা কমে যায়। আবার বোরো সংগ্রহ চালু হলেই মজুদ পরিস্থিতি বাড়তে থাকে।
খাদ্য অধিদফতরের সংগ্রহ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি গুদামে সাড়ে ১১ লাখ টনের মতো খাদ্য মজুদ রয়েছে। প্রতি বছরই এ সময় কিছুটা কমে যায়, তবুও এখন যা খাদ্য রয়েছে তা পর্যাপ্ত। এ ছাড়া আগামী ৭ মে থেকে বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে। বোরো ধান-চাল আসা শুরু হলেই মজুদ পরিস্থিতি দ্রুত বাড়বে।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরেও সরকারি খাদ্যগুদামে মোট খাদ্যশস্য মজুদ ছিল ১৮ লাখ ৬১ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ছিল ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৩৭ টন। এ ছাড়া গম ও ধানের মজুদ ছিল ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৮১ হাজার ৮২৮ টন ও ৩২ হাজার ৭৩০ টন। অথচ সোমবার পর্যন্ত সরকারি খাদ্যগুদামে মোট খাদ্যশস্য মজুদ ছিল ১১ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭ টন। এ হিসাবে সাত মাসে মোট খাদ্য মজুদ কমেছে ৭ লাখ ১১ হাজার ৯৪৩ টন। বর্তমানে চালের মজুদ রয়েছে ৭ লাখ ৯৯ হাজার ৩৭০ টন। সাত মাসের ব্যবধানে চালের মজুদ কমেছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৭ টন। কেননা গত সেপ্টেম্বরেও চালের মজুদ ছিল ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৩৭ টন।
এদিকে সাত মাস আগে সরকারি গুদামে ধানের মজুদ ছিল ৩২ হাজার ৭৩০ টন। এখন এক ছটাক ধানও নেই সরকারি গুদামে। অবশ্য এ সময় গমের মজুদ বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮৭ টন। গত সেপ্টেম্বরে সরকারি গুদামে গমের মজুদ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ৮২৮ টন। বর্তমানে রয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮৭ টন। সাত মাসে গমের মজুদ বেড়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫৯ টন।
২০২১ সালে খাদ্য মজুদ আরও কমেছিল : ২০২১ সালে করোনাকালে সরকারি খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি একেবারে তলানিতে নেমেছিল। খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩১ মার্চ সরকারের খাদ্যগুদামে চালের মজুদ ছিল মাত্র ৪ লাখ ১২ হাজার টন, আর গমের মজুদ ছিল মাত্র ৭১ হাজার টন।
বিশ্লেষকরা বলেন, খাদ্যশস্যের মজুদ কমে যাওয়া একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, যেকোনো রাষ্ট্রের নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অন্তত মোট জনগোষ্ঠীর ৬০ দিনের খাদ্য মজুদ রাখতে হয়। সে হিসেবে দেশের মানুষের এক দিনের খাদ্য চাহিদা প্রায় ৪৬ হাজার টন। আর ৬০ দিনের জন্য খাদ্য মজুদ দরকার প্রায় ২৭ লাখ টন। কোনোদিনই বিশাল এ পরিমাণ খাদ্য মজুদ ছিল না দেশে।
বোরো মৌসুমে ১৭ লাখ টন ধান-চাল কিনবে সরকার : এদিকে আসন্ন বোরো মৌসুমে সরকার ১৭ লাখ টন ধান-চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ৫ লাখ টন ধান, ১১ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও ১ লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ধান ৩২ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪৫ টাকা এবং আতপ চাল ৪৪ টাকা।
গত ২১ এপ্রিল সচিবালয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে খাদ্য, পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় ধান-চাল ক্রয়ের এ সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ৩৪ টাকা দরে ৫০ হাজার টন গম কেনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। গত বছর বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য ছিল ৩০ টাকা ও চালের সংগ্রহ মূল্য ছিল ৪৪ টাকা। আগামী ৭ মে থেকে ধান-চাল কেনা শুরু হবে, সংগ্রহ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে বলেও জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।
ধান কেনার বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘ধান যদি ৫ লাখ টনের বেশি কেনা যায় সেটি কেনা হবে। কৃষকের সুবিধার্থে আরও ধান আমরা কিনব। এ ক্ষেত্রে ওপেন রাখা হয়েছে। কমিটিতে সেটিই সিদ্ধান্ত হয়েছে। হাওরসহ যেখানে যেখানে ধান কাটা শুরু হয়েছে, সেখানে ৭ মে থেকে ধান সংগ্রহ শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ‘দামের কারণে কৃষক একটু উৎসাহিত হোক। না হয় কৃষক অন্য শস্যে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের চালের প্রয়োজন, তাই ধানের উৎপাদন বাড়াতে হবে।’