উপজেলা নির্বাচনে বড় দুই দলে অস্বস্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০২৪, ৯:১৪:১৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : উপজেলা নির্বাচনে দফায় দফায় নির্দেশনা দেওয়ার পরেও তৃণমূলের সব জায়গায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মানাতে বাধ্য করতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর নির্বাচন বয়কট ও ভোটের মাঠে থাকা প্রার্থীদের বহিষ্কার করেও সবাইকে ভোটের মাঠ থেকে দূরে রাখতে পারেনি বিএনপি। তৃণমূল নেতাদের কারও কারও অবাধ্যতার এই বাস্তবতা দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যেই এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে।
জাতীয় নির্বাচনের পর সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে কৌশলী অবস্থান নিয়ে দলীয় প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। এছাড়া দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে প্রার্থী না হতেও দল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব বলছে, নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতেই দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বাস্তবতা হলো দলের সিদ্ধান্ত সবাই মানেননি।
দলীয় সংসদ সদস্যদের নিকটাত্মীয়রা এখনো প্রার্থী রয়েছেন। কিছু জায়গায় এমপি সমর্থিত প্রার্থীর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহসই দেখায়নি কেউ। যে কারণে এবার উপজেলা নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলায় সবপদেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। মুন্সিগঞ্জ সদরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আনিছ উজ্জামান স্থানীয় নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যের আপন চাচা। তিনি অবশ্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা এবং একাধিকবার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান।
এবার বেশিরভাগ উপজেলায় বিএনপির প্রার্থী না থাকায় মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের মধ্যেই। ভোটের মাঠের এ বাস্তবতায় স্থানীয় নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতির ক্ষেত্রে একটা বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। সরেজমিন দুটি উপজেলায় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এই আশঙ্কার কথা জানা গেছে।
মানিকগঞ্জে সিংগাইর উপজেলার একজন ভোটার বলছিলেন, ‘এতে মজা আছে নাকি, সবাই একদল আমরা। ব্যাকে আওয়ামী লীগের।’
দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচন করায় মানিকগঞ্জের দুই উপজেলায় চারজনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলটির বহিষ্কৃত নেতা এবং সিংগাইর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন তোফাজ বলছিলেন, কেন তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। ‘বিএনপির নেতাকর্মী, ভোটার সবাই কারো না কারো পক্ষ নিছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভোট চাচ্ছে। সেখানে কেন বিএনপি তদন্ত করে না। নির্বাচন করছি আঞ্চলিকতার কারণে, নির্বাচন করতেছি জনগণের ভোটের চাহিদার কারণে, নির্বাচন করতেছি আওয়ামী লীগের ভালো প্রার্থী নাই সে কারণে।’
প্রথম ধাপে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্তত ৭৩ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় বিএনপির মধ্যে অস্বস্তি আছে তবে কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন এ সংখ্যা নগণ্য এবং তৃণমূলের কোনো সমর্থনও পাবে না বহিষ্কৃতরা।
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, তৃণমূলের কর্মীরা এই নির্বাচনে কেউ অংশগ্রহণ করবে না। ‘আমরা আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে এক মাসের অধিক সময় জরিপ করছি, কথা বলতেছি। সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তৃণমূলের কর্মীরা, আমাদের সমর্থকরা আমাদের চেয়ে অ্যাডভান্স চিন্তা ভাবনায়। আমরা যতবার ভাবি ওরা এতবার ভাবে না। এক কথায় নাকচ করে দেয়। আমরা এই পালসটা যদি উপলব্ধি করতে না পারতাম, তাহলেতো এই সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম না।’
বিএনপি কেন স্থানীয় নির্বাচন বয়কট করছে তার যুক্তি তুলে ধরে গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘অনেকেইতো মেয়র হইছে সেটাতো আমাদের সমর্থনেই হয়েছে। আমরা তখন নির্বাচনে গেলাম।গাজীপুরের মেয়র বিপুল ভোটে জয়লাভ করছিল। মান্নান সাহেব। তিনি কি একদিনও চেয়ারে বসতে পারছেন। রাজশাহীর মেয়রের কথা ভাবেন বুলবুল। তাকে কি চেয়ারে বসতে দিছে। পাঁচ বছরে সে মাত্র আড়াই মাস চেয়ারে বসতে পারছে।’
‘যারা ইতোপূর্বে নির্বাচন করেছেন, চেয়ারম্যান ছিলেন তারা কিন্তু কেউ আগ্রহী না। এমনকি দল চাইলেও তারা যেতো না। হয় সরকারের সাথে চলতে হবে নয় সাসপেন্ড হবে, মামলা হবে এটা হবে সেটা হবে। আর স্থানীয় সরকারের যে কাঠামোটা সেটা যদি সরকার সমর্থক না হয় তাহলে সে কাজ করতে পারে না।’
উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের দূরের রাখার যে চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ সেটিও অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। কয়েকটি উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন এবং তাদের প্রভাব নিয়ে আছে আলোচনা-সমালোচনা।
জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় নির্বাচনে কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক দেয়নি। দলীয় সিদ্ধান্তের অবাধ্য হয়ে বেশকটি উপজেলায় এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনরা প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে অস্বস্তি আছে আওয়ামী লীগেও।
আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, যারা মানছে না তাদের সংখ্যা খুব বেশি না। ‘যারা দলের সিদ্ধান্ত মানে না তাদেরকে ওয়ার্নিং করা উচিত। যদি না হয় তাহলে কিন্তু অলওয়েজ দলের সিদ্ধান্ত না মানার একটা প্রবণতা বাড়বে এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত মানতেছে না নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে একটা শৃঙ্খলা বিরোধী স্টেপ নেবেন। কারণ দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে কোনো কিছু করার কোনো স্কোপ নেই।’
এদিকে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা দলীয় অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেহেতু আমরা করি, সে কারণে আমাদেরতো পরিবারের অনেকে দীর্ঘদিন ধরে একেকটা জায়গায়। যিনি এমপি হয়েছেন তার বহু আগেই নির্বাচন করে কেউ ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান সেরকমতো ট্রেডিশনালি আছে। তাদেরকে আমরা মানা করি কী করে?’
‘তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, এক জায়গায় বউকে দিল, এক জায়গায় ছেলেকে দিল এগুলি আসলে ঠিক না। কর্মীদেরও আসলে মূল্যায়ন করা উচিত। আমি সেটাই বলতে চেয়েছি আমাদের কর্মীদেরকেও মূল্যায়ন করা উচিত এবং সবকিছু নিজেরাই নিয়ে নেবো আর নেতাকর্মীদের জন্য কিছু রাখবো না এটাতো হয় না।’
-বিবিসি বাংলা