মৌলভীবাজারে ২ লাখ ৪৪ হাজার মেঃ টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মে ২০২৪, ৫:৪৮:০৫ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, হাইল হাওর ও কাউয়াদিঘী হাওর বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলায় এবছর ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮০ মেঃ টন ধান পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। হাকালুকিতে শতভাগ ধান কাটা হলেও কাউয়াদিঘী ও হাইল হাওরে এখনো ৩০ শতাংশ ধান কাটা বাকি। জেলা জুড়ে হাওরের ৬১ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো’র আবাদ হয়েছে। তবে,সম্প্রতি শিলা বৃষ্টিতে ২৮০ হেক্টর জমির ২৫ শতাংশ ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
আবহাওয়া অনুকুল, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সময় মতো বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর হাওরে অতীতের তুলনায় ধানের বেশি ফল হয়েছে। বেশিরভাগ কৃষক আগে-বাগে ধান ঘরে তুলেছেন এবার। যারা তুলতে পারেননি, তারা নির্ঘুম রাত পার করে হাওর গর্ভ থেকে কেটে আনছেন অর্জিত স্বপ্নের ধান। তবে, যারা তুলছেন তাদের চিন্তা সার, কীটনাশকসহ সংশ্লিষ্ট উপকরনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার বোরো’র দাম ন্যায মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন কি না? এদিকে, কাউয়াদিঘী ও হাইল হাওরের ভেতর অবশিষ্ট ধান কাটা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বহু কৃষক। বৈরী আবহাওয়া, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যদি জমি তলিয়ে যায়, তবে কাটা থেকে বাদ পড়ে যাবে এসব ধান।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বোরো মৌসুমে জেলার ৭ টি উপজেলায় ৬১ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো’র আবাদ হয়েছে। এতে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮০ মেঃ টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গেল বছর ধান পাওয়া গেছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৬ মেঃ টন। শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে ১৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে এবার। গেল বছর শুধু হাকালুকিতে ৫৩ হাজার ৮২৫ মেঃ টন বোর ধান উৎপাদন হয়। এবছর উৎপাদন হয়েছে ৫৬ হাজার ৪৬০ মেঃ টন ধান।
হাকালুকিতে শতভাগ ধান গোলায় উঠেছে বলে দাবী কৃষি বিভাগের। জেলার রাজনগর ও সদর উপজেলায় অবস্থিত কাউয়াদিঘী হাওরে ৫ হাজার ৬শ ৯৪ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে। এবছর ২০ হাজার ৭৭৬ মেঃ টন ধান পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। গেল বছর এই হাওর থেকে কৃষকের ঘরে ধান উঠেছে ২৮ হাজার ৭৫৩ মেঃ টন। তবে এই হাওরে এখনো ৩০ শতাংশ ধান কাটা বাকি।
কৃষি বিভাগ আরো জানিয়েছে, সম্প্রতি শিলা বৃষ্টিতে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় ২৮০ হেক্টর জমির ২৫ শতাংশ ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো কাউয়াদিঘীতে ৭০ শতাংশ ও হ্্্্াইল হাওরে ৭০ শতাংশ ধান কর্তন হয়েছে। তারা জানায়, শিলা বৃষ্টি ছাড়া কোথাও কোন রোগ-বালাইয়ে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন, সুয়েজ আহমদ ও মোঃ আছকির মিয়া বলেন, তারা ৮০ কিয়ার জমি অন্যকে দিয়ে চাষাবাদ করেছেন। তারা বলেন, প্রতি কিয়ারে ১৫/১৬ মন ধান ফলন হয়েছে। আর “ইরা হাইব্রিট” জাতীয় ধান প্রতি কিয়ারে ২০ মনে’র মত ফলন হয়েছে। তাদের অভিযোগ, কৃষকরা ন্যায়্য মূল্য পাচ্ছে না। বর্তমানে প্রতি মন ধান ৭শ থেকে ৮শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন প্রতি মন ধান ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হবার কথা ছিল।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গত বছরের চেয়ে বেশি বোরো ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ৯১ শতাংশ। তবে তিনি বলেন, শিলা বৃষ্টিতে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় ২৮০ হেক্টর জমিতে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।