যুক্তরাষ্ট্রের ভুমিকায় অস্বস্তিতে সরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মে ২০২৪, ৯:৫৯:৪০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করে সরকার পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। টানা চতুর্থ মেয়াদের এ সরকারের চার মাস হয়ে গেছে। কিন্তু দেশি-বিদেশি নানা শঙ্কা দূর হয়নি সরকারের। সম্প্রতি দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বক্তব্যেও বিষয়টি বারবার আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রকে এখনো সন্দেহের চোখে দেখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। সরকারি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখনো পরিবর্তন করতে পারেনি ক্ষমতাসীনরা। যুক্তরাষ্ট্র এখনো নানারকম সুযোগ খোঁজার অপেক্ষায় আছে বলে মনে করেন সরকার দলের এ নেতারা। তারা বলছেন, শ্রম আইন সংশোধন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করার চাপসহ কূটনৈতিক নানা দিক থেকে সরকারকে চাপে ফেলার সুযোগ খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক চাপ ছিল। সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়ে দেশটি নির্বাচনের আগে প্রায় দুই বছর ধরে সরকারের ওপর নানা ধরনের চাপ দিয়ে আসছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গত বছর মে মাসে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও স্বজনদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর বছরের শেষের দিকে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে পোশাক শ্রমিকদের সহিংসতা বিক্ষোভের পর যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণা করে। যেখানে বাংলাদেশের একজন শ্রমিক নেত্রীর নাম উল্লেখ করে বক্তব্য রয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা ও দুজন মন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নানা তৎপরতা রয়েছে বলেই আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ দলটির শীর্ষনেতারা নানা আশঙ্কার কথা এজন্যই বলে যাচ্ছেন। সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে কাকে ক্ষমতায় বসাবেন?’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও একইরকম আশঙ্কার কথা জানান।
এর আগে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়ও শেখ হাসিনা তাকে উৎখাতে অতি ডান ও অতি বামদের তৎপরতার অভিযোগ তোলেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রকে এখনো সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে বলেই প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তব্য রেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে সরকার।নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দুদিন আগেও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধী মেটাতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে নিঃশর্ত সংলাপে বসতে চিঠি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর আগেও সংলাপের কথা বলেছিল দেশটি। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজের মতো করে নির্বাচনের পথে এগিয়ে যায়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছর ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে ব্যাপক সহিংসতা হয়। এক পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত হন যুবদলের এক নেতা। এ ঘটনার পর সরকার ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। বিএনপি পাল্টা অবরোধ ও হরতালের কর্মসূচি পালন করে। সে সময় সরকারের ভূমিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
তবে নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা অভিনন্দন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় জানিয়েছেন। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শ্রম আইনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা কাজ অব্যাহত রাখবে বলেও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে। এ সফরে তারা সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানেও শ্রম আইনের বিষয়টি তুলেছে তারা।
আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের জন্য নিরাপদ নয়। ফলে সরকারের দুশ্চিন্তা এখনো রয়েছে। দেশে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী নানা অপপ্রচার ও ইস্যু সৃষ্টি করার বিভিন্ন অপচেষ্টাও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বলীয়ান দাবি করে নেতারা বলেন, সব সমস্যা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবেন তারা।সরকারের শঙ্কা বা দুশ্চিন্তার কারণ আছে কি না, জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘দুশ্চিন্তার দৃশ্যত কোনো কারণ দেখতে পাচ্ছি না। তবুও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার বক্তব্য, বিবৃতিতে যা প্রকাশ পায় সেটা কেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন।’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি নানা অপপ্রচার নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। দল ও দেশের মানুষকে সতর্ক ও সচেতন করার লক্ষ্যে মূলত নেতাদের কাছ থেকে এ বক্তব্য আসছে বলে জানান তিনি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো নেতিবাচক অবস্থান নিয়ে রেখেছে। দেশটি শ্রম আইন নিয়ে বেকায়দায় ফেলতে চায় সরকারকে। তাছাড়া ভারতের লোকসভা নির্বাচন শেষে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি করে নাক গলানো শুরু করবে বলে তারা মনে করছেন।
সরকারি দলের এ নেতারা দাবি করেন, বিভিন্ন ছক সাজাচ্ছে দেশটি। তারা বাণিজ্য সম্পর্ক, অর্থনৈতিক বিষয়েও নানা ছক সাজিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করতে পারে। নির্বাচনের আগেও বিভিন্ন সময়ে সংসদ ও সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কথা বলেন। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিনে ঘাঁটি করতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশকে ব্যবহার করে অন্য কাউকে হামলা করতে দেবেন না তিনি।
কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের এমন এক নেতা বলেন, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাঁকা চোখ’ সোজা করতে নানা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তবে অবস্থান এখনো পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি।