ভিসা জটিলতায় সংকটে হজ্ব যাত্রীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মে ২০২৪, ১০:০৮:৫৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : ঘনিয়ে আসছে হজে¦র সময়। এদিকে ভিসা জটিলতায় সংকটে পড়েছেন হজ¦গামীগণ। গত ১ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল হজ¦ ভিসা আবেদনের সময়। এই সময়ের মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ¦ করতে ইচ্ছুকদের অনেকেই ভিসার আবেদন করতে পারেননি। এর অন্যতম কারণ সৌদিতে হাজিদের জন্য বাড়ি ভাড়া করতে না পারা। তবে এই সংকটের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি হজ¦ এজেন্সিগুলো একে অপরকে দোষারোপ করছে। এ অবস্থায় বিশালসংখ্যক হজ্ব যাত্রীর হজ্ব করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল সৌদি সরকারের কাছে ভিসার জন্য আবেদনের সময় বাড়ানোর আবেদন করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে হজের ভিসা আবেদনের সময় বাড়িয়ে ৭ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। এদিকে ৯ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে হজ্ব ফ্লাইট।
ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক বলেন, কোনো ত্রুটি যাতে না থাকে, সেজন্য অংশীজন ও হজ্বের সাথে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করা হয়েছে। তিনটি এয়ারলাইন্স থেকে বিমান পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজযাত্রার উদ্বোধন করবেন বলেও জানান তিনি।
ভিসা আবেদনের সময় বৃদ্ধির বিষয়ে ধর্মসচিব মু. আবদুল হামিদ জমাদ্দার বলেন, ‘বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে ইচ্ছুক হজ¦যাত্রীদের বেশির ভাগ এখনো ভিসার আবেদন করতে পারেননি। বাড়ি ভাড়া করতে না পারা এর অন্যতম কারণ। অল্প কয়েক দিনে এত সংখ্যক হজ্ব যাত্রীর ভিসার আবেদন করাও সম্ভব না।’
তিনি বলেন, ‘সংকটের কথা উল্লেখ করে সৌদি সরকার ও দূতাবাসকে হজ্ব ভিসা আবেদনের সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। পাশাপাশি হজ্ব এজেন্সিগুলো এ সময়ের মধ্যে ভিসা আবেদন করবে।’
হজ্ব এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, ‘ধর্মমন্ত্রীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি হজ্ব ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশি হাজিদের জন্য হজ্বের ভিসা আবেদনের সময় ২৯ এপ্রিল থেকে আগামী ৭ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সবাইকে ভিসা আবেদন করতে হবে।’
তবে অপারেটিং হজ্ব এজেন্সির মালিকরা বলছেন, এখনো যেহেতু অনেক হজ¦যাত্রীই ভিসার আবেদন করতে পারেননি- তাই এ অবস্থায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করা প্রায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ হজ্বযাত্রীর সবাই ভিসা পাবেন কি না, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
হজ্ব এজেন্সিগুলোর মালিকদের পক্ষে আল-কুতুব হজ¦ ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন ২৪ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমার বাড়ি ভাড়ার টাকা সরকারের কাছে জমা দিলেও ধর্ম মন্ত্রণালয় সে অর্থ আইবিএন অ্যাকাউন্টে পাঠায়নি। একই সঙ্গে মোয়াল্লেম ভিসাও অনুমোদন করা হয়নি। এসব চ্যালেঞ্জের মুখে এবার হজ্ব ব্যবস্থাপনা করতে হচ্ছে।’
হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাড়ি ভাড়ার টাকা জমা দিলেও ধর্ম মন্ত্রণালয় এখনো সবার অর্থ সৌদি আরবের আইবিএন অ্যাকাউন্টে পাঠায়নি। ফলে মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি সমাধানের জন্য মক্কায় বাংলাদেশ হজ¦ মিশনের কাউন্সিলরকে তাগিদ দেওয়া হলেও কোনো সমাধান হয়নি। তাই এ জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ই দায়ী।’
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন অবস্থানে মন্ত্রণালয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার হজ্ব ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত এজেন্সিগুলোর বিষয়ে বেশ কঠোর অবস্থায় মন্ত্রণালয়। তাই হজ¦ প্যাকেজ ঘোষণার সময়ই বলা হয়েছিল, এ বছর ১ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ভিসার আবেদন করা যাবে। কিন্তু এই সময়ে অর্ধেকের বেশি হজ্ব যাত্রী ভিসার জন্য আবেদন করেননি। এ ছাড়া অনেক এজেন্সি নির্দিষ্ট সময়ে টাকাও জমা দেয়নি। ফলে শেষ সময়ে এই বিপুলসংখ্যক টাকা ট্রান্সফার করতেও সময় লাগছে।
এজেন্সিগুলোকে দোষারোপ করে মন্ত্রণালয় বলছে, হজ্ব যাত্রীদের জন্য বাড়ি ভাড়া করতে গত বছরের ৩০ জুন এজেন্সিগুলোকে নোটিশ দেওয়া হয়। তবে এই ইস্যুকে তারা গুরুত্ব দেয়নি। সরকারি ব্যবস্থাপনার হজ¦যাত্রীদের বাড়ি ভাড়া ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হয়েছে। এখন শেষ সময়ে তারা বাড়ি ভাড়া করতে পারছে না বলে মন্ত্রণালয়কে দায়ী করছে। প্রতিবারই তারা এ কাজগুলো করে মন্ত্রণালয়কে চাপে রাখে। এ ছাড়া সৌদি আরবে হাজিদের থাকা-খাওয়ায় কোনো সমস্যা হলে দায়ী এজেন্সির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ধর্ম মন্ত্রণালয় হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি হজ্ব ও ওমরা হজ¦ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নিয়ম পরিবর্তন করেছে সৌদি সরকার। এর অংশ হিসেবে এখন থেকে যেকোনো ভিসায় ওমরাহ পালন করা যাবে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। গত ২৪ এপ্রিল দেশটির হজ্ব ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে। বার্তায় বলা হয়, ‘যেকোনো ভিসা নিয়ে যেকোনো দেশ থেকে ওমরাহ পালন করা যাবে। আপনার ভিসা যে ধরনেরই হোক, আপনি ওমরাহ করতে পারবেন। ফ্যামিলি, ট্রানজিট, লেবার ও ই-ভিসা হোক, তা দিয়ে ওমরাহ করতে কোনো বাধা নেই।’