মৌলভীবাজারে অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০২৪, ৭:৩৬:৪৭ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে মোট ৬৩টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে কিছু সংখ্যক ভাটার মালিক পরিবেশের নিয়ম-কানুন না মেনে যত্রতত্র পরিচালনা করে দিন দিন ধ্বংস করে দিচ্ছেন জেলার ২ হাজার ৭শ ৯৯ বর্গকিলোমিটার এলাকার জীববৈচিত্রের মসৃণ পরিবেশ।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীর মানুষ যখন নাজেহাল, ঠিক তখনই ওইসব ভাটায় নিয়মনীতি না মেনে যত্রতত্র তৈরি করায় নতুন করে আরো বায়ুদূষণ যুক্ত হচ্ছে। এই দূষণের সাথে মিশে যাচ্ছেন জেলার ২১ লাখ ২২ হাজার ৭০৩ জন মানুষ। খবর রয়েছে, কেউ কেউ বৃক্ষখেকোদের সাথে যোগসাজশ করে বন থেকে গাছ এনে কয়লার পরিবর্তে বৃক্ষ জ¦ালিয়ে ভাটা পরিচালনা করছেন। জেলায় এখন পর্যন্ত ৭টি ভাটাকে অবৈধ তালিকায় রেখেছে খোদ পরিবেশ অধিদপ্তর।
অনুসন্ধান করে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, জেলার ৭টি উপজেলাজুড়ে মোট ৬৩টি ইট ভাটা রয়েছে। পরিবেশের নিয়ম-কানুন মেনেছে এমন বৈধ ভাটা রয়েছে ৫৬টি। নিয়ম কানুন না মানা এমন ৭ টি ভাটা অবৈধ তালিকায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার এই হিসেব দিয়েছেন। কার্যালয়টি জানায়, দুই ধরণের ভাটার মধ্যে ‘অটো ইট ভাটা’ স্কুল-মাদ্রাসা থেকে দূরত্ব ৪শ মিটার ও ‘হাওয়া ইট ভাটা’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১ কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। এগুলো না মানার কারণে ৭টি ভাটাকে নিবন্ধিত করা হয়নি বলে জানায় তারা। মালিকদের মধ্যে কেউ ছাড়পত্রবিহীন, কেউ রিট পিটিশন আবার কেউ নবায়ন ছাড়া পরিচালনা করে আসছেন।
৭টি অবৈধ ইট-ভাটার মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজারে অবস্থিত মোছাদ্দেক আহমেদ মানিক’র ‘সাবারি ব্রিক্স’ দীর্ঘ ৪/৫ বছর ধরে বন্ধ ছিল। পরিবেশের নীতিমালা না মেনেই এটি ফের চালু করেছেন। এদিকে, আদালতে রিট পিটিশন দিয়ে চালানো একই উপজেলার জালালিয়া এলাকার মহসীন মিয়া মধু’র ‘মহসীন ব্রিক্স’, রিট পিটিশন দিয়ে চালানো ও ছাড়পত্রবিহীন একই উপজেলার মুন্সিবাজার’র পাবলিক কোনা-বৃন্দাবনপুর এলাকার এসকে ব্রিক্স, রিটপিটিশন দিয়ে চালানো বড়লেখা উপজেলার সুজানগর’র ভোলারকান্দি এলাকার নজরুল ব্রিক্স, কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণবাজার এলাকার জুনাকি ব্রিক্স, জুড়ী উপজেলার উত্তর ভবানিপুর এলাকায় মাত্র ১২০ ফুট চিমনি দিয়ে ভাটা চালানো এমকো ব্রিক্স ও আদালতের রিট পিটিশন দিয়ে চালানো মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বারোহাল এলাকায় অবস্থিত এসএমএ ব্রিক্স।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র (বাপা) জাতীয় নির্বাহি পরিষদ’র সদস্য আ.স.ম সালেহ সোহেল বলেন, ইটভাটার কারণে প্রতিনিয়ত জমি থেকে মাটি উত্তোলন করায় দিন দিন ভূমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এ ধরণের ভাটা বন্ধ করা উচিৎ। তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব যেসব ভাটা রয়েছে, এগুলোকে আরো নজরদারীর আওতায় আনতে হবে।
মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোঃ মাঈদুল ইসলাম বুধবার (৮মে) দুপুরে জানান, জেলায় ৬৩টি ভাটার মধ্যে ৩টি ভাটা বর্তমানে অবধৈ তালিকায় রয়েছে ও ৪টি অবৈধ ভাটা বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, সাবারি ব্রিক্স, মহসীন ব্রিক্স ও এসকে ব্রিক্স আমাদের তালিকায় এখন পর্যন্ত অবৈধ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ ভাটার মালিকগণ আদালতে রিট পিটিশন করে পরিচালনা করে আসছেন। তিনি বলেন, কমলগঞ্জের সাবারি ব্রিক্স ৪/৫ বছর যাবৎ বন্ধ ছিল। ফের তিনি অবৈধ পন্থায় ভাটা চালু করেছেন। উনার ভাটার লাইসেন্স ও ছাড়পত্র কোনটাই নেই। তিনি এক মন্ত্রীর ভাই। তার বিরুদ্ধে আমরা কি করবো?