সিলেটে নিরুত্তাপ ভোট
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০২৪, ৯:৫৩:০৩ অপরাহ্ন
ফাঁকা ভোটকেন্দ্রেও জাল ভোটের উত্তেজনা
স্টাফ রিপোর্টার : দিনভর আকাশে মেঘের খেলা। আকাশের মতো সিলেটের উপজেলা নির্বাচনের কেন্দ্রগুলোও যেন ‘মেঘাচ্ছন্ন’ হয়ে পড়ে। ভোটার শূন্য অনেক ভোটকেন্দ্র। ভোটের মাঠে নেই কোনো আমেজ। যেখানে পূর্বের নির্বাচনগুলোতে ভোটের লাইনে সকাল থেকে দীর্ঘ সারি থাকত। সেখানে এবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সিলেট জেলার ৪ উপজেলা২যু আর বিভাগের বাকী তিন জেলার ৭ উপজেলায় হয়েছে ভোটগ্রহন।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে উপজেলাগুলোতে ভোট শুরু হয়েছে। তবে দু-চারটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নগণ্য। কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোট শুরুর ঘণ্টা পেরোলেও ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবুও জাতীয় নির্বাচনের মতো দিনশেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে হতে পারে বলে জানিয়েছেন।
সরেজমিন ঘুরে সিলেট সদর উপজেলার আলীবাহার চা-বাগান ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি আশ্চর্যজনক কম দেখা গেছে। এ কেন্দ্রে সকাল ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত কোনো ভোটার ভোট দিতে আসেননি বলে জানা গেছে। একই অবস্থা পাঠানটুলা এলাকার জামিয়া ইসলামীয়া রাগীবিয়া মাদরাসা গোয়াবাড়ির। সকাল ৮টা ৩১ মিনিট থেকে ৯টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে কোনো ভোটার দেখা যায়নি।
সিলেট সদর উপজেলার লাখাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রেও ভোটার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। সকাল ৯টার দিকে লাখাউড়া সরকারি প্রাথমিক ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সম্পদ সরকার জানান, এখন পর্যন্ত ৮টি ভোট পড়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।সিলেট সদর উপজেলার আলীবাহার চা-বাগান ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। এ কেন্দ্রে সকাল ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত কোনো ভোটার ভোট দিতে আসেননি বলে জানা গেছে। একই অবস্থা পাঠানটুলা এলাকার জামিয়া ইসলামীয়া রাগীবিয়া মাদরাসা গোয়াবাড়ির। সকাল ৮টা ৩১ মিনিট থেকে ৯টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে কোনো ভোটার দেখা যায়নি।
সিলেট সদর উপজেলার লাখাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রেও ভোটার উপস্থিতি ছিলোনা বললেই চলে। সকাল ৯টার দিকে লাখাউড়া সরকারি প্রাথমিক ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সম্পদ সরকার জানান, এখন পর্যন্ত ৮টি ভোট পড়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিশ্বনাথ উপজেলার জনমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ৭৮টি, যা মোট ভোটারের মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রিজাইডিং অফিসার জানান, কেন্দ্রটির মোট ভোটার ২ হাজার ৬২৪ জন। নারী ভোটার ১২৯৮ ও পুরুষ ভোটার ১৩২৬ জন। কেন্দ্রটিতে প্রত্যেক প্রার্থীর এজেন্ট রয়েছেন।
এদিকে, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের একটি কেন্দ্রে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে স্থানীয় ভোটাররা ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে উত্তেজনা দেখা দেয়। বুধবার বেলা একটার দিকে দলদলি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ আছে। বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ আছে।
একাধিক ভোটার অভিযোগ করেন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী দলদলি চা-বাগানের দলদলি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা পৌনে একটার দিকে যান। তাঁরা বেশ কিছু সময় ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সুজাত আলী রফিকের কাপ-পিরিচ প্রতীকে জাল ভোট দেন।
জাল ভোট দেওয়ার খবর পেয়ে চা-বাগানের ভোটাররা এসে কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় ভোটারদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তখন ভোটাররা ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিতের দাবি জানানোর পাশাপাশি এমন পরিস্থিতিতে ভোট দিতে অপারগতা জানান। এ সময় প্রায় সব প্রার্থীর এজেন্টরাও কেন্দ্র ত্যাগ করেন। ঘটনার পর থেকে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।
সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা কেন্দ্রে এসে শুনেছি, এখানে কিছু জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য দুটি ব্যালট বই বাতিল করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রাহেল সিরাজ বলেন, তিনি উপজেলার প্রায় সব কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। একই ধারাবাহিকতায় সকালের দিকে তিনি দলদলি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যান। দুপুরের দিকে তিনি ওই কেন্দ্রে ছিলেন না। কী কারণে উত্তেজনা ছড়িয়েছে কিংবা কারা এমনটা করেছেন, তা তিনি জানেন না। কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাঁর নাম এখানে জড়িয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।বেলা পৌনে তিনটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকার কারণে পুলিশ, আনসারসহ ভোট-সংশ্লিষ্টরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কেন্দ্রের বাইরের মাঠে ভোটাররা জটলা বেঁধে আছেন। কেউ ভোট দিতে আসছেন না। এমনকি অধিকাংশ প্রার্থীর এজেন্টরাও কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে চলে গেছেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পলাশ কুমার দত্ত বেলা তিনটার দিকে বলেন, কেন্দ্রের তিনটি বুথে মোট ভোটার ১ হাজার ১৮৪। উত্তেজনা শুরু হওয়ার আগে এখানে ৩৮০ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ভোট গ্রহণ আপাতত বন্ধ আছে। কী কারণে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল, এ প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কেন্দ্রের সামনে সিলেট সদর উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা কেন্দ্রে এসে শুনেছি, এখানে কিছু জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য দুটি ব্যালট বই বাতিল করা হয়েছে। এখন এই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলবে।’
তবে দলদলি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের নবনিযুক্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ মোস্তফা বিকেল চারটায় ভোট গ্রহণ শেষে জানান, পুনরায় ভোট শুরু হওয়ার পর কোনো ভোটার আর ভোট দিতে আসেননি।
এদিকে, জাল ভোটারের ছবি তুলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার সমর্থকদের মারধরের শিকার হয়েছে সাংবাদিক। আহত সাংবাদিককে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বুধবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার ঘোপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
শাল্লায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ :
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার চব্বিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় ওই কেন্দ্রে ৩০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। পরে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন পরিস্থিতি শান্ত করলে আবার ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকাল ১০টার দিকে কেন্দ্রে ঢুকে চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী নেতা অবনি মোহন দাসের সমর্থকেরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা গণেন্দ্র চন্দ্র সরকারের এক সমর্থক কেন্দ্রে একাধিকবার ঢুকে জাল ভোট দিয়েছেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সজীব হাওলাদার তখন বিষয়টি দেখছেন বলে তাঁদের জানান। এরপর অভিযোগকারীরা কেন্দ্র থেকে বের হলে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুই পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের কারণে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত লোকজন এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।