নিত্যপণ্যের বাজারে উত্তাপ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মে ২০২৪, ৯:১৫:৫৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : অর্থনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ডলার সংকট ও দাম বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে উত্তাপ ছড়িয়েছে বাজারেও। কোনভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছে না নিত্যপণ্যের বাজার। পণ্যের দামে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। বাজারে সরবারহে খুব একটা ঘাটতি না থাকলেও বেশিরভাগ পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী।কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ২৯টি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেই দামে বিক্রির জন্য উৎপাদনকারী, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতাদের অনুরোধ করেছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত দর মানতে দেখা যাচ্ছেনা।
নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি থাকায় বিপাকে পড়েছেন কম আয়ের মানুষ। আগে থেকেই বাড়তি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে, নতুন করে দাম বেড়েছে ডিম-মুরগির। বিক্রেতারা বলছেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমছে, ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে হচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, দাম অনুযায়ী খাবার কাটছাঁট করে চলতে হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, তীব্র গরমের কারণ ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থা। এতে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়ায় দাম বাড়ছে পণ্যের। আর ক্রেতারা বলেন, এ বছর রোজার আগে থেকেই বেড়েছে পণ্যের দাম। রোজায় সেটি আর চড়েছিল। কিন্তু ঈদের পরও সেই দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চাপ বাড়ছে নি¤œ ও মধ্যবিত্তদের সংসারে।
বাজার করতে আসা দুই বেসরকারী চাকুরীজীবি বলেন, যখন যেভাবে ইচ্ছা, ব্যবসায়ীরা এর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ সাধারণ ক্রেতার কথা ভেবে বাজার মনিটরিংয়ের কোনও উদ্যোগ দেখি না। এখন গরমের অজুহাতে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন লেগে গেছে। অসহায় ক্রেতাদের এখন চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। ব্যবসায়ীরাও বুঝে গেছে, দাম বাড়ালেও পণ্য কিনবে সাধারণ মানুষ। তাই খেয়াল-খুশি মতো দাম বাড়াচ্ছে পণ্যের।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন থেকে এনবিআরের কাছে আসন্ন বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক-কর কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের ডিউটি কমানোর একটি প্রস্তাব দিয়েছি, যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ডিউটি একটি যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর এ ঘোষণায় বাজারে প্রভাব পড়বে কি-না তা নিয়ে শঙ্কা ও সন্দেহ রয়েছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে।
শুক্রবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে শাক-সবজি, চিনি, চাল, আটা, ডাল ও মাছ-মাংস। আলুর ছড়াছড়ি থাকলেও দাম কমছে না। ৫৫-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আলু। স্থানভেদে পাকা টমেটোর কেজি ৫০-৬০ টাকা, যা মাসখানেক আগেও ৩০-৪০ টাকা কেজিতে পাওয়া গেছে। পেঁপে এবং বেগুন ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। করলা ৬৫-৭৫ টাকা, ঢেঁড়স ৪০-৫০ টাকা, বিভিন্ন জাতের বেগুন মানভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও পটল ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
স্থান ও মানভেদে কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, চিচিঙ্গা ৮০০-১০০ টাকা, ঝিঙা ৬০-৭০ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, কচুর মুখী মানভেদে ৬০-৭০ টাকা, গাজর ৬০-৭০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা ও কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা হালি।
বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে দেশি রসুন ২২০-২৪০ টাকা এবং আদা আগের বাড়তি দামেই ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি স্থানভেদে ২১০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সোনালি ও লেয়ার জাতের মুরগির কেজি স্থানভেদে ৩৫০ থেকে ৩৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।বাংলাদেশ পোলট্র্রি অ্যাসোসিয়েশনের (প্রান্তিক) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পোলট্রি ফার্মগুলোতে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মুরগির মৃত্যু হয়েছে। ফলে বাজারে মুরগির সরবরাহ কমে গেছে। পোলট্রি খামারিরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মুরগির দাম বাড়িয়েছেন।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সস্তা পাঙ্গাসও বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। অনেকটা একই দামে বিক্রি হচ্ছে চাষের কই ও তেলাপিয়া। আকারভেদে রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। দেশি শোল মাছ প্রতি কেজি ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
আকারভেদে শিং মাছ ও বাইলা মাছ প্রতি কেজি প্রকারভেদে ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৬০০, মলা ৫০০, কাচকি মাছ ৬০০, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০, পাঁচ মিশালি মাছ ৩০০, রুপচাঁদা ১ হাজার ও বাইম মাছ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাজারে ইলিশের সরবরাহ তেমন নেই। ৪০০-৫০০ গ্রামের ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে প্রতিকেজি ১২০০-১৪০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম হলে ১৬০০-১৮০০ টাকা। আর কেজি সাইজের হলে দাম দুই হাজারের ওপরে।
বিক্রেতারা জানান, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বাড়ছে ইলিশের দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে দাম বেড়েছে অন্তত ৪০০ টাকা।