রাফায় নতুন শঙ্কা আতঙ্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মে ২০২৪, ৯:২৪:১২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : সব রীতি-নীতি ও আহবানকে উপেক্ষা করে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী রাফায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তাই রাফা নগরীর হাসপাতালগুলোতে রোগী উপড়ে পড়ছে। শঙ্কা আতঙ্ক বিরাজ করছে অসহায় বিপর্যস্ত ও ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর মাঝে।
গাজা উপত্যকার রাফাহতে ইসরায়েলি স্থল হামলা হলে একটি ‘উল্লেখযোগ্য মানবিক বিপর্যয়’ দেখা দেবে। কোনো চুক্তি ছাড়াই কায়রোতে যুদ্ধবিরতি আলোচনা শেষ হওয়ার পর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার সতর্ক করে এ কথা বলেছেন। এএফপির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। চিকিৎসকরা জানান, রাফায় ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়ে আছে। রাফার পূর্বাংশে গত সোমবার থেকে ‘সীমিত আকারে’ আকাশ হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।
সেখানে তিনটি হাসপাতাল রয়েছে। তারমধ্যে মধ্যে সবচেয়ে বড় আবু ইউসেফ আল-নজর হাসপাতালের বেশিরভাগ কার্যক্রম বন্ধ রেখে সেটি খালি করে দিতে হয়েছে। কারণ, ইসরায়েলি বাহিনীর সেখানকার কর্মীদের সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। তাছাড়া হাসপাতালটির কাছেই লড়াই চলছে। গাজায় এখন একমাত্র এই হাসপাতালটিতে কিডনি জটিলতায় আক্রান্তদের জন্য ডায়ালাইসিস সেবা চালু আছে।
ইসরায়েলি বাহিনী রাফার দিকে অগ্রসর হওয়ায় পাশের নগরী খান ইউনিসের ইউরোপিয়ান গাজা হসপিটালে রাফা থেকে আর রোগী পাঠানো যাচ্ছে না। রাফা থেকে গুরুতর রোগীদের অস্ত্রোপচারের জন্য খান ইউনিসের ওই হাসপাতালে পাঠানো হতো।
ইসরায়েলি বাহিনীর কারণে রাফা এবং কেরেম শালম সীমান্ত ক্রসিংও রাফা বাসিন্দাদের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। রাফার আরেকটি হাসপাতাল আমিরাতি মেটারনিটি হসপিটাল। যেখানে প্রতিদিন বহু মা সন্তান প্রসব করছেন।
আর কুয়েতি স্পেশালিস্ট হসপিটালের কর্মীরা জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ ছোট্ট এই হাসপাতালটিতে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রচ- অভাব। চিকিৎসা কর্মীও হাতে গোণা। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সেখানে মাত্র চারটি ‘ইনটেনসিভ কেয়ার বেড’ ছিল। হাসপাতালটির একজন চিকিৎসক বলেন, “যেভাবেই বলি না কেন, এখানকার অবস্থা আসলে এক কথায় বিপর্যয়কর।” ডা. জামাল আল-হামস বিবিসিকে আরও বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে কুয়েতি হসপিটালটি খুবই ছোট একটি হাসপাতাল। সেখানে রোগ নির্ণয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই।
“এমনকি ইসরায়েলের গোলা বর্ষণের কারণে এখানকার একমাত্র এক্স-রে মেশিনটিও কাজ করছে না। এটি ঠিক করারও কোনো উপায় নেই। কারণ, ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ডা. ইউসেফ আবু আল-রিশ বলেন, রাফায় চিকিৎসার যে যৎসামান্য সুযোগ রয়েছে সেটাই এখন গাজার লাইফলাইন। গাজায় গুরুতর আহত এবং অসুস্থ রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে এটাও আর খুব বেশিদিন সচল থাকবে না।
“আবু ইউসেফ আল-নজর হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর রাফা প্রশাসনের হাতে আসলে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার বাস্তবিক আর কোনো ব্যবস্থা নেই। আর লোকজন ইউরোপিয়ান গাজা হসপিটালে যেতে পারছে না। বেশ কয়েকটি অস্থায়ী হাসপাতাল গঠন করা হয়েছে। কিন্তু যথাযথ অবকাঠামো এবং চিকিৎসা সক্ষমতা না থাকার কারণে ওইসব হাসাপাতাল এইসব সেবা দিতে পারছে না।
“কুয়েতি হাসপাতালটি খুবই ছোট। তারা জরুরি সেবা দিতে পারছে না। আমরা চেষ্টা করছি সেটির সক্ষমতা বাড়াতে।”
এদিকে, ইসরায়েলকে সতর্ক করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা পরিকল্পনামতো গাজার রাফায় সর্বাত্মক অভিযান চালালে তা হামাসের জন্য কৌশলগত বিজয় এনে দিতে পারে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি গতকাল বৃহস্পতিবার এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
জন কারবি বলেন, ‘আমরা মনে করছি, রাফায় যেকোনো বড় ধরনের অভিযান প্রকৃতপক্ষে সমঝোতা আলোচনার টেবিলে হামাসের হাতকে শক্তিশালী করবে, ইসরায়েলের হাতকে নয়।’ ইসরায়েল রাফায় অভিযান চালালে দেশটিতে সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো স্থগিত করা হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দেওয়ার পরদিন জন কারবি এ অভিমত জানালেন।