দেশে চাহিদার বিপরীতে ৩ লক্ষাধিক নার্সের ঘাটতি
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০২৪, ৮:১৫:১৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী একজন চিকিৎকের বিপরীতে তিনজন রেজিস্টার্ড নার্স প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশে মোট ১ লাখ ৩৬ হাজার জন নিবন্ধিত চিকিৎসকের বিপরীতে রেজিস্টার্ড নার্স রয়েছেন মাত্র ৯৫ হাজার ১৬৮ জন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিকিৎসকের অনুপাতে বর্তমানে নার্স থাকার কথা ৪ লাখ ১৪ হাজার। অর্থাৎ দেশে নার্সের ঘাটতি বর্তমানে ৩ লাখ ১২ হাজার ৮৩২ জন।রোববার (১২ মে) আন্তর্জাতিক নার্স দিবস- ২০২৪ উপলক্ষে সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের (এসএনএসআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, আধুনিক নার্সিং এর জনক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিনে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালন করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস (আইসিএন) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক এ বছর আন্তর্জাতিক নার্স দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে (ঙটজ ঘটজঝঊঝ. ঙটজ ঋটঞটজঊ. ঞযব ঊপড়হড়সরপ চড়বিৎ ড়ভ ঈধৎব)। এর আলোকে বাংলা প্রতিপাদ্য ‘আমাদের নার্স। আমাদের ভবিষৎ। সেবাই অর্থনৈতিক শক্তি’।
সারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বর্ণাঢ্য র্যালি, কেক কাটা, আলোচনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নার্সিং একটি আন্তর্জাতিক মহৎ পেশা। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল কর্তৃক নিবন্ধিত রেজিস্টার্ড নার্সরা স্বাস্থ্যখাতে নিজেদের নিয়োজিত রাখছেন। বিশেষ করে করোনা মোকাবিলা, শতভাগ ভ্যাকসিন প্রদানসহ দেশের যেকোনো সংকটকালে নার্সরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নার্সদের এই অসামান্য ও কঠোর পরিশ্রমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত আজ বিশ্বের দরবারে প্রশংসনীয়।
নার্সরা বঞ্চিত দাবি করে এসএনএসআর বলছে, দুঃখজনক হলো, নার্সরা স্বাস্থ্যসেবার বা হাসপাতালের মেরুদন্ড হওয়া সত্ত্বেও নার্সরা সবসময়ই আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও সামাজিক অবমূল্যায়নের সম্মুখীন হয়। ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক নার্স দিবসে নার্সদের সেবার অর্থনৈতিক শক্তির ওপর ফোকাস করা হয়েছে। এজন্য নার্সিং এ কৌশলগত বিনিয়োগ কিভাবে নার্সদের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা নিয়ে আসতে পারে এ ব্যাপারে সরকারের নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মোট বাজেটের ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এই স্বল্প বাজেটের মধ্যে নার্সদের ও নার্সিং সেবার মানোন্নয়নের জন্য অতি ক্ষুদ্র পরিমাণে ব্যায় করা হয়। বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও নার্সদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে। অথচ নার্সরা সেবার মাধ্যমে সুস্থ জাতি গঠনে ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নার্সরা ভূমিকা রাখলেও নার্সদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবাই উদাসীন। নার্সরা ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পেয়ে থাকলেও গত ৮ বছরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ দৈনন্দিন খরচ কয়েকগুন বেড়েছে। যা খুবই হতাশার এবং নার্সদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায়। এছাড়াও নার্সদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণ করতে হলে যে পরিমান বাজেট প্রয়োজন প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। আমরা বিশ্বাস করি এখন সময় এসেছে এগুলো বিবেচনা করার।
সরকারি হাসপাতালে কর্মরত নার্সের সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার জানিয়ে বলা হয়, এ সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদন্ড অনুযায়ী, প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে ২৩ জন নার্স থাকার কথা। যদিও বাংলাদেশে এ সংখ্যা ২ জনেরও কম।এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক নার্স দিবসের প্রতিপাদ্য ধারন করে বাংলাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে এবং নার্স ও নার্সিং পেশার মান্নোনয়নে এ খাতে বাজেট বাড়ানো নার্সদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস।