এসএসসিতে টানা তৃতীয়বার তলানীতে সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মে ২০২৪, ১২:৩৫:২১ অপরাহ্ন
মানবিকে ফল খারাপই মূল কারণ : শিক্ষাবোর্ড
স্টাফ রিপোর্টার: এসএসসিতে গতবছরের মতো এবারো সবার পেছনে সিলেট। শীর্ষে যশোর শিক্ষাবোর্ড। এ নিয়ে টানা ৩ বার সিলেট সারাদেশে সবার পেছনে থাকলো। বাইশে অজুহাত ছিল বন্যা, গেলবার ছিল গণিতের কঠিন প্রশ্ন ও মানবিকের ফল বিপর্যয় আর এবার মানবিকে সাধারণ বিজ্ঞানে খারাপের পাশাপাশি হাওরাঞ্চলের দুর্গম এলাকায় ভালো মানের শিক্ষকের অভাব বলে দায়ী করছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। রোববার দুপুর ১২টায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর অরুন চন্দ্র পাল সংবাদ সম্মেলনে ফলাফল ঘোষণার সময় এসব কথা বলেন। এসময় বোর্ড সচিব চৌধুরী মামুন আকবর উপস্থিত ছিলেন।
ফল বিপর্যয়ে তাদের করণীয় কী প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন বোর্ডের কাজ শুধু পরীক্ষার আয়োজন করা ও নেওয়া। শিক্ষার মানের ব্যাপারে মাউশি সহ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দেখার দায়িত্ব। এসময় হাওর জনপদ হিসেবে সমাদৃত সুনামগঞ্জ ৭৪ দশমিক ৪১ পাশের হারে বিভাগে সবচেয়ে বেশি ভালো ফল করেছে তাহলে হাওরাঞ্চল পিছিয়ে থাকায় কীভাবে ফল খারাপ হলো এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান বোর্ড কর্তারা।
ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবার সিলেট বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৭৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এবার পাশের হার কমেছে ২ দশমিক ৭১ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪শ ৭১ জন শিক্ষার্থী। গতবার এ সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৪শ ৫২। এবার জিপিএ-৫ বেড়েছে ১৯টি। এবারের পরীক্ষায় মোট ১ লাখ ৯ হাজার ৭৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৮০ হাজার ৬ জন। এবারো মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা পাসের হারে পিছিয়ে। এ বিভাগে সবচেয়ে বেশি ফেল করেছে সাধারণ বিজ্ঞানের পরীক্ষার্থীরা। ফেলের সংখ্যা ৭ হাজার ৮শ ৭২ জন। সাধারণ বিজ্ঞানে ৭০ হাজার ৭শ ৩৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৬২ হাজার ৮শ ৬৩ জন।
বিভাগ ভিত্তিক ফলাফল: এ বছর মানবিক বিভাগে সবচেয়ে বেশি ফল খারাপ হয়েছে। এবার মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছিল ৭৭ হাজার ৫শ ৪৭ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছেলে ৩০ হাজার ৭শ ৩৪ এবং মেয়ে ৪৬ হাজার ৮শ ১৩ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৫৩ হাজার ১শ ১৬ জন। এদের মধ্যে ছেলে ২০ হাজার ৯শ ৯৭ এবং মেয়ে ৩২ হাজার ১শ ৩৭ জন।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছিল ২৪ হাজার ১শ ৫৩ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছেলে ১০ হাজার ৪শ ৭৯ এবং মেয়ে ১৩ হাজার ৬শ ৭৪ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ২১ হাজার ২শ ৮৯ জন। এদের মধ্যে ছেলে ৯ হাজার ৫শ ৬৬ এবং মেয়ে ১১ হাজার ৭শ ২৩ জন। ব্যবসায় শিক্ষা থেকে অংশ নিয়েছিল ৭হাজার ৩শ ৭৩ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছেলে ৩হাজার ৭শ ১৩ এবং মেয়ে ৩ হাজার ৬শ ৬০ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৫ হাজার ৬শ ১ জন। এদের মধ্যে ছেলে ২ হাজার ২শ ৬১ এবং মেয়ে ২ হাজার ৭শ ৪০ জন।
জিপিএ ৫: জিপিএ ফাইভের দিক থেকে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। আর বিভাগওয়ারী সংখ্যার দিকে সবচেয়ে বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এবং সবচেয়ে ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা। ৫ হাজার ৪শ ৭১ টি জিপিএ ৫ এর মধ্যে ছেলেরা পেয়েছে ২ হাজার ৬শ ১৬ টি এবং মেয়েরা পেয়েছে ২ হাজার ৮শ ৫৫ টি। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫ হাজার ১শ ৩৪ জন, এরমধ্যে ছেলে ২ হাজার ৫শ ২৮ এবং মেয়ে ২ হাজার ৬শ ৬ টি। মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২শ ৪৪ জন। এরমধ্যে ছেলে ৫৪ এবং মেয়ে ১শ৯০। ব্যবসায় শিক্ষা থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯৩ জন। এরমধ্যে ছেলে ৩৪ এবং মেয়ে ৫৯।
নয় বোর্ডে পাশের হার: নয় শিক্ষা বোর্ড এসএসসির প্রাপ্ত ফলাফল থেকে জানা যায়, সর্বোচ্চ যশোর বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ। সিলেট ছাড়া অন্যান্য বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ, বরিশালে ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ও ময়মনসিংহে ৮৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
এদিকে এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
এবার ছাত্রদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। রোববার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলাফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তরের পর বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। এবার মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৬ লাখ ৬ হাজার ৮শ ৭৯ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষা দিয়েছেন মোট ২ লাখ ৪২ হাজার ৩শ ১৪ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ২৬ হাজার ৩শ ৭৩ জন।