সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ সাড়ে ৮ লাখ কোটি টাকা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মে ২০২৪, ১০:০৪:১২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণ সাড়ে আট লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। গত এক বছরে এ উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়েছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎসের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৩১ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের একই মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকায়। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণ বাড়লেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি অবশ্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ কমেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎসের প্রকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫১ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকা কমেছে।
বর্তমানে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের সবচেয়ে বেশি রয়েছে ব্যাংকবহির্ভূত খাতে। এ খাতে গত ফেব্রুয়ারি শেষে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৩২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। সরকার সঞ্চয়পত্র, বিল ও বন্ড বিক্রি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেয়। একই সময় পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক থেকে সরকারের নেয়া সরাসরি ঋণই হলো ব্যাংক খাতের ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য তফসিলি ব্যাংক থেকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ কম নিয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য তফসিলি ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ নেয়ার পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংকে সরকারের প্রকৃত ঋণ ছিল ৪৬ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আট মাসে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ ২১ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা কমেছে।
গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া কমলেও ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এ খাত থেকে সরকারের প্রকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ২০৭ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, উল্লিখিত আট মাসে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার মোট ২০ হাজার ৯৮ কোটি টাকা ঋণ করেছে। এর মধ্যে সরকার সঞ্চয়পত্রের আসল বাবদ আট হাজার ৮৯১ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। ফলে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকারের প্রকৃত ঋণ কমে ১১ হাজার কোটি ২০৭ টাকায় নেমেছে।
মূল্যস্ফীতিতি বেড়ে যাওয়ায় গত জুলাই থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে ঋণ দেয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যাংক থেকে সরাসরি অর্থ ধার কমলেও চলতি বছরের শুরু থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে সরকারের ধারের পরিমাণ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত ২২ এপ্রিল শেষে সরকারের ব্যাংকঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায়, গত ৩০ জুন শেষে যা ছিল তিন লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস ২২ দিনে সরকারের নিট ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকায়। অথচ গত ১ জুলাই থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেয়া ঋণের স্থিতি ঋণাত্মক ধারায় ছিল প্রায় ছয় হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা।
বিদায়ী বছরের শুরু থেকে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। তাই অর্থনীতিবিদরা ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়া বন্ধের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়া বাড়লে তা পরোক্ষভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে ঋণ দেয়া বন্ধ করে দেয়। এরপরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বরং দিন দিন মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাচ্ছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার কথা। ব্যাংকবহির্ভূত খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ১৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।