ঢাকায় ডোনাল্ড লু : আবার সরব কূটনীতি রাজনীতি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মে ২০২৪, ৯:৪৮:১৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তার এই সফরকে ঘিরে আবার সরব হয়ে উঠেছে রাজনীতি। আওয়ামীলীগ-বিএনপি নেতারা তার সফরকে কেন্দ্র করে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন।গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে এটি তার প্রথম সফর। এ নিয়ে ডেনাল্ড লু’র বাংলাদেশে ৫ম সফর।
ডোনাল্ড লু এমন এক সময় বাংলাদেশ সফর করছেন, যখন চীনের আমন্ত্রনে বাম দলগুলোর নেতারা গেছেন চীনে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগেরও ৫০ সদস্যের একটি টিমও যাচ্ছে চীনে। এ নিয়েও কূটনীতি মহলে চলছে বিস্তর আলোচনা।
তবে ডোনাল্ড লু’র সফরের প্রাক্কালে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ নেতাদের বক্তব্যে গরম হয়ে উঠেছে রাজনীতি ও কূটনীতির অঙ্গন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সরকার স্যাংশন-ভিসা নীতি কেয়ার করে না বলে মন্তব্য করেছেন। কাদের বলেন, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। একটা দেশের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছেন, এটা নিয়ে এত মাতামাতি কিসের। মঙ্গলবার সচিবালয়ে অবস্থিত মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি পাত্তা দিচ্ছে কি না আমি জানি না। তারা ওপরে ওপরে অনেক কিছুই পাত্তা দেয় না। আবার তলেতলে পাত্তা দেয়।’এদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সফরকে কেন্দ্র করে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা মানসিক অস্থিরতায় ভুগছেন। ভয়ে তারা প্রলাপ বকছেন। মঙ্গলবার বিকালে নয়াপল্টনে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের আহবানে লিফলেট বিতরণ শেষে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- বিএনপির নেতারা মনে করেন লু এসে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাবেন সেই আশায় আছে; কিন্তু বিএনপির নেতারা কোথাও এ বিষয়ে কিছু বলেননি। ওবায়দুল কাদের সাহেবরা ভয় থেকে প্রলাপ বকছেন। তিনি কি জ্বরে ভুগছেন কিনা। মনে হয় তিনি বড় ধরনের অস্থিরতায় আছেন।এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরে র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসানীতি তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ভূরাজনীতি খেলায় যে কোনো উপায়ে চীনকে ঠেকানো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অগ্রাধিকার। কারণ, বিশ্বজুড়ে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এর প্রেক্ষিতে ডোনাল্ড লু’র সফর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছেন। এতে প্রাধান্য পাবে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতি। বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চেয়েছেন ডোনাল্ড লু। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এক চিঠিতে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন জো বাইডেন। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতার কথা তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে যৌথ ভিশনে ঢাকার সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়তে ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ইস্যুতে আলোচনায় ছিলেন ডোনাল্ড লু। এর আগে গত বছরের জুলাইতে তিনি সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর করেন। সে সময় নির্বাচন নিয়ে এবং মার্কিন ভিসা নীতিসহ নানামুখী তৎপরতার মধ্য দিয়ে সেই সফরটি আলোচিত ছিল।
তার সফরের পরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভিসা নীতির প্রয়োগ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা এর সঙ্গে জড়িতদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর আওতাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্য, সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরাও রয়েছেন। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সহযোগিতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার স্বাক্ষরিত সেই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছিল, এসব ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। এর বাইরে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে আরো যাদের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুন্ন করায় দায়ী বা জড়িত হিসেবে পাওয়া যাবে, তারাও এ নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবেন। বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, বিরোধী ও সরকারি রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা সেবাদাতা সংস্থার সদস্যদের ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রযোজ্য হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণার পর ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। সরকার গঠনের পরে এই প্রথম মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করছেন।
ভোট শেষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে ওয়াশিংটন জানায়, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। তবে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে দেশটি।