ডোনাল্ড লু’র সফর : বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বহুমাত্রিক আলোচনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মে ২০২৪, ৩:১৭:২৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : দুই দিনের সফরের বাংলাদেশের দুইমন্ত্রী, এক উপদেষ্টা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্যএশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
বুধবার সকালে সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন লু। এরপর বিকেলে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেখা করতে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের গুলশানের বাসভবনে মঙ্গলবার রাতে বৈঠক করেন ডোনাল্ড লু। এসব বৈঠকে নানা বিষয়ে বহুমাত্রিক আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের গত সাতই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মানবাধিকার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। অবাধ, নিরপেক্ষ ও নির্বিঘœ নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতিতে কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণাও দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
গত দু’দিনের বৈঠকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা, শ্রম আইন সংশোধন এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ দ্বিপাক্ষীক সম্পর্কের আরও বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন লু। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন যে, লু’র সঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তার কোনো আলোচনা হয়নি। আমার সঙ্গে এটা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে হয়তো আলোচনা হয়ে থাকতে পারে,” বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। প্রসঙ্গত, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের আগে মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে বৈঠক হয় ডোনাল্ড লু’র।
পরারাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রীও জানিয়েছেন যে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে অতীত নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছি, অতীতের কোনও বিষয় নিয়ে কথা হয় নাই,” বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ এবং আমেরিকার মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, সেটাকে কীভাবে আরও এগিয়ে নিতে পারি, সেবিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ঢাকার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে ‘অনেক টেনশন’ তৈরি হয়েছিল উল্লেখ করে ডোনাল্ড লু বলেছেন, এসব সরিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সামনে তাকাতে চায়, পেছনে নয়।
ডোনাল্ড লু বলেন, ‘বাংলাদেশ সফরে এসে গত দুই দিনে আমি দুই দেশের জনগণের মাঝে পুনরায় আস্থা স্থাপনের চেষ্টা করছি। আমরা জানি, গত বছর বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অনেক টেনশন ছিল। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন (বাংলাদেশে) অনুষ্ঠানে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম। এতে কিছু টেনশন তৈরি হয়েছিল। আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক। এই সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সামনে তাকাতে চাই, পেছনে নয়। আমরা সম্পর্ক জোরদারের উপায় খুঁজে বের করতে চাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কের পথে অনেকগুলো কঠিন বিষয় রয়েছে, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন। তাকে বলেছি কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হলে ইতিবাচক সহযোগিতার ওপর ভর করে এগিয়ে যেতে চাই।
মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো কবে নিজ অর্থ নিতে পারবে, জানতে চেয়েছেন লু :
ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লাভের অংশ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারছে না। এ অর্থ বাংলাদেশ থেকে কবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, তা জানতে চেয়েছেন ঢাকা সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের গুলশানের বাসভবনে মঙ্গলবার রাতে নৈশভোজে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন ডোনাল্ড লু।
নৈশভোজ শেষে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সালমান এফ রহমান। এ সময় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত উপস্থিত ছিলেন। সালমান এফ রহমান বলেন, ডলার-সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, ‘মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো যারা ব্যবসা করছে, তারা অভিযোগ করছে, তাদের অর্থছাড়ে দেরি হচ্ছে। তাঁরা এটাও বলেছেন, আমরা বুঝি বাংলাদেশের রিজার্ভের ওপর চাপ রয়েছে।’ বাংলাদেশ কত দিনে এ অর্থ পরিশোধ করতে পারবে, তা জানতে চেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আশাবাদী বাংলাদেশের রিজার্ভ বাড়বে। আমাদের রপ্তানি বাড়বে, রেমিট্যান্সও বাড়বে। মার্কিনদের জানিয়েছি যে যদিও আমাদের অর্থ পরিশোধে একটু সমস্যা হচ্ছে, একটু দেরি হচ্ছে, তবে আমাদের অর্থছাড় ক্রমাগত হচ্ছে। আমরা একেবারে অর্থছাড় বন্ধ করিনি।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, র্যাবের নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়টিও জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, এ দুটি বিষয় আইন দপ্তরে রয়েছে।