ডলারের প্রভাবে ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মে ২০২৪, ৮:১৭:০০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: সরকারিভাবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ভোগ্যপণ্যের বাজারে সেটির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক পণ্যবাজার নিম্নমুখী থাকলেও দেশে এরই মধ্যে বেড়ে গেছে ভোজ্যতেল, মসলা, ডাল, খাদ্যের কাঁচামাল ও ড্রাই ফ্রুটসের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক লাফে ডলারের দাম সরকারিভাবে প্রায় সাড়ে ৭ টাকা বৃদ্ধির ফলে পণ্যের আমদানি ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। তাই পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৮ মে দুপুরে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির খবর ছড়িয়ে পড়লে পাইকারি বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। তবে বেশি লাভের আশায় আমদানিকারক, ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান, বৃহৎ পাইকারি ও মজুদদার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য বিক্রি কিছুটা কমিয়ে দেয়। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়তি দামে লেনদেন অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। মূলত পণ্যের দাম কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির পরই বড় ব্যবসায়ীরা লেনদেনে ফেরেন। তবে কোরবানি ঈদ সামনে রেখে মসলাজাতীয় বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০০ টাকা পর্যন্ত। বিশেষত শতভাগ আমদানীকৃত ভোগ্যপণ্যের বাজারেই ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে।
ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, ডাল, মসলা, শুকনো খাদ্য (ড্রাই ফ্রুটস), চিনি, গম ও ভোজ্যতেলের বাজার আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে এলাচ, জিরা, গোলমরিচ, লবঙ্গসহ বেশ কয়েকটি গরমমসলার দাম বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে। আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আগের আমদানি ও মজুদ থাকা মসলারও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার সময়ে বাজার মনিটরিংসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক তৎপরতা থাকলেও বর্তমানে সরকারিভাবে তদারকি না থাকায় নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।
আমদানিকারক ও ট্রেডিং ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনিতে দেশে ঋণপত্রের বাড়তি মার্জিন, ডলার সংকট ও ঋণপত্র সংকটে চাহিদার তুলনায় আমদানি কম। তার ওপর হঠাৎ করেই ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানির পরিমাণ আগের চেয়েও কমে যাচ্ছে। এতে কোরবানি ঈদ সামনে রেখে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরির আশায় এখন থেকেই মজুদপ্রবণতা বাড়বে। বাজারে এরই মধ্যে তার প্রভাব পড়তেও শুরু করেছে। ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর পরদিন থেকেই আমদানীকৃত পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়।
পাইকারি বাজারে নতুন করে আদা, রসুন, জিরা, মসুর ডাল, অ্যাংকর ডাল, ছোলা, মুগডাল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ বেশ কয়েকটি অতি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। উৎপাদন মৌসুমের কারণে চালের দাম না বাড়লেও গমের বাজার বৃদ্ধিতে আটা-ময়দার দামও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায়। ডলারের অজুহাতে ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিনই আগের দিনের চেয়ে বাড়তি দামে পণ্য সরবরাহের প্রস্তাব পাঠাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
রোজার পর পণ্যের চাহিদা কমে স্বাভাবিকভাবে দাম স্থিতিশীলতায় ফেরার সম্ভাবনা থাকলেও ডলারের দাম বাড়ানোর ঘটনা কোরবানি ঈদ সামনে রেখে বাজারকে উসকে দিয়েছে। ঈদুল আজহার আগে দাম আরো বাড়তে পারে, এমন আশায় সরবরাহ চেইনে সংকট তৈরি করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরা।