সিলেটে স্বস্তির বৃষ্টি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০২৪, ১২:১৫:২৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : তীব্র গরমের পর অবশেষে সিলেটে নামলো স্বস্তির বৃষ্টি। দুপুরে এক পশলা বৃষ্টির পর রাত ৯টার দিকে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টিতে শীতল হয় নগরী। জনমনে বিরাজ করে স্বস্তি। আবহাওয়া অফিস জানায়, সিলেটে শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রাতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তাৎক্ষনিকভাবে জানা যায়নি। তবুও শুক্রবার তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবারও সিলেটে ছিলো অস্বস্তিকর গরম।
এদিকে দেশের আট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবারও বয়ে যায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। গরমের তীব্রতা বাড়তে থাকায় একের পর এক অঞ্চলে জারি করা হচ্ছে হিট অ্যালার্ট। এবার ৪ বিভাগে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।
এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যায় রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ৪৮ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়। এ ছাড়া গত এপ্রিলে বেশ কয়েকবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল।
এদিকে, অপর এক আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়েছে, শনিবারও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া পুরো সপ্তাহজুড়ে দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। এতে কমতে পারে তাপমাত্রা।
এদিকে বৈশাখ মাস শেষ হলেও কমেনি গরম। কয়েকদিন ধরে দেখা নেই বৃষ্টির। উপরন্তু দেশের বেশিরভাগ এলাকায় বইছে তাপপ্রবাহ। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় সর্বত্রে ভ্যাপসা গরম বিরাজ করছে। গরমের তীব্রতায় ছোটবড় সবার হাঁসফাঁস অবস্থা। বাসা থেকে বের হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই খরতাপে অসহনীয় অবস্থায় পড়ছেন তারা। বাড়ির বাইরে বের হওয়ার জো নেই। বেরুলেই ঘেমে একাকার সবাই। প্রয়োজন ছাড়া সেভাবে ঘর থেকে বের হচ্ছে না অনেকে। বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের বাইরে না বেরিয়ে উপায় নেই। শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়ায় রাজধানীর বেশিরভাগ দোকানপাঠ ছিলো বন্ধ। মানুষ চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। যানজট ছিলো না বললেই চলে।
জৈষ্ঠ্যের দাবদাহে নগরজুড়ে মানুষ শান্তি খুঁজেছেন শরবতের গ্লাসে, পানির বোতলে কিংবা শসার টুকরোতে।বন্দরবাজারের রিকসা ড্রাইভার আক্কাস বলেন, যে গরম পরসে, টানা রিকসা চালাইলে মইরাই যামু। তাই এক ক্ষেপ দিয়া বিশ্রাম নেই, সরবত বা স্যালাইন খাইতে হয়। অর্ধেক বেলা চালাইয়া বাসায় যাই গা। ফলে রোজগারও কম হয়। শুক্রবার দুপুরে আখের রস খেতে খেতে তিনি বলেন, তার গ্রামের বাড়ি রংপুরেও এই বার প্রচ- গরম পড়েছে।
শুক্রবার দুপুরে প্রচ- গরম থেকে রেহাই পেতে সুরমা নদীর পানিতে শিশু কিশোরদের গোসল করতে দেখা যায়। এছাড়া বন্ধের দিন হওয়ায় অনেকেই বিভিন্ন রিসোর্টে গিয়ে সুইমিং পুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে ডুবে থাকেন। প্রচ- গরমে বেড়েছে তরল পানীয়ের চাহিদা। বিভিন্নস্থানে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী সরবতের দোকান। অনেকেই স্বেচ্ছায় বিনামূল্যে স্যালাইন ও সরবত খাওয়াচ্ছেন পথচারীদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সকালে সূর্যের আলো ফুটর সাথে সাথে গরম বাড়তে থাকে। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অসহ্য গরম থাকে। বাতাসেও গরমে তীব্রতা টের পাওয়া যায়। সন্ধ্যার পর অস্বস্তিকর গুমট হয়ে ওঠে পরিবেশ, রাতেও ভ্যাপসা গরম। ঘুমানো যায় না। কেউ কেউ বলেছেন দিনে কয়েকবার করে গোসল করেও স্বস্তি পাচ্ছেন না। অনেকে আবার মেঝেতেও বিছানা পেতেছেন। নারী-শিশু-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির মাত্রা অন্যদের তুলনায় বেশি। এর সাথে যোগ হয়েছে লোডশেডিং। শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং এর মাত্রা বেড়েছে। বিশেষ করে রাতে লোডশেডিং ভোগান্তি বাড়িয়েছে।
পিজিসির তথ্যানুয়ায়ী, পিক আওয়ারে চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ১ হাজার মেগাওটের মতো লোডশেডিং করতে হচ্ছে। শুক্রবার ডে পিক আওয়ার দুপুর বারোটায় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ১৪ হাজার ৮৭০ মেগাওয়াট, উৎপাদিত হয়েছে ১৪ হাজার ৪৮৮ মেগাওয়াট। আর লোডশেডিং করতে হয়েছে ৩৬৫ মেগাওয়াট।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ঢাকাসহ রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চলতি সপ্তাহে গরমের তীব্রতা কমে আসবে। পশ্চিমা লঘুচাপের বাড়তি অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। শনিবার ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ এবং পরের ২৪ ঘণ্টা ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগসহ রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ঝড়বৃষ্টির এ প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর বর্ধিত ৫ দিন বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সংস্থাটি জানায়, আগামী রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে, সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি দেশের কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এলাকাভেদে ১ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। তবে এ তাপমাত্রা মে মাসে একেবারে অস্বাভাবিক নয় বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। আর এই গরমের মধ্যে আশার খবর, শুক্রবার থেকে দেশে বৃষ্টি কিছুটা বাড়তে পারে। অন্য অঞ্চলের চেয়ে সিলেটে একটু বেশি বৃষ্টি হতে পারে।বৃহস্পতিবার রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেটে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রী। মে মাসে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হলো ৩২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি ছিল।
বুধবার রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ মাসে রংপুরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ প্রায় ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি ছিল এ শহরে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার দেশের কোথাও কোথাও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। তবে এ তাপমাত্রা বৃদ্ধি অস্বাভাবিক কিছু নয়। মে মাসে কিছু সময় এটা হয়। দুই দিন পর থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে।
মে মাসে এযাবৎকালের দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে, ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিল মাসের টানা তাপপ্রবাহের পর এ মাসের প্রায় শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়। চলতি মাসের ৪ তারিখ থেকে বৃষ্টি বাড়তে থাকে। তবে গত সোমবার (১৩ মে) থেকে তাপপ্রবাহ বাড়তে শুরু করে। গত বুধবার সন্ধ্যায় ৪৮ ঘণ্টার জন্য তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা দেয় আবহাওয়া অফিস।