বাড়তি খরচ কোরবানি পশুর দামে প্রভাব ফেলবে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০২৪, ৮:৩৪:০৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে পশু কেনাবেচা। দেশে চাহিদার চেয়ে কোররবানির পশুর অতিরিক্ত জোগান রয়েছে ২২ লাখেরও বেশি। তবু দাম কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। এক্ষেত্রে গো-খাদ্যের ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি এবং সার্বিক লালন-পালন ব্যয় বেড়ে যাওয়াকে কারণ হিসেবে সামনে আনছেন তারা। আবার সাম্প্রতিক তীব্র তাপপ্রবাহে পশুর জন্য বাড়তি যত্ন নিতে গিয়েও ব্যয় বাড়ছে তাদের। তাই এবার পশুর দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
যদিও এবার অন্য সময়ের তুলনায় পশুর অর্ডার সেভাবে আসছে না। খামারিরা জানিয়েছেন, এখনো পশু বিক্রির চাহিদা সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। তবে কভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পশুখাদ্যের দাম বাড়ার পর আর কমেনি। পাশাপাশি ফসলের মৌসুম হওয়ায় বেড়েছে শ্রমিকের বেতন। তীব্র গরমে আইপিএস ব্যহার করতে হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহে বাড়ছে বিল। বাড়তি যতœ নিতে গিয়ে লালন-পালনের ব্যয়ও বেড়েছে। তাই গতবারের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
তবে কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে এবার অধিকাংশ মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না। তাই পশুর চাহিদা কমে গিয়ে বিক্রি আগের তুলনায় বেশি নাও হতে পারে। এতে অনেক পশু অবিক্রিত থেকে যেতে পারে। ফলে বিপাকে পড়তে পারেন খামারিরা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে এবার গবাদিপশুর সর্বোচ্চ সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৩৯৪টি। যার বিপরীতে দেশে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। যা গত বছরের তুলনায় ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪টি বেশি। সে হিসেবে চাহিদার চেয়ে ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি অতিরিক্ত গবাদিপশু রয়েছে। এসব পশুর মধ্যে গরু ৫২ লাখ ৬৮৪টি, মহিষ ১ লাখ ৬০ হাজার ৩২০টি, ছাগল ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ৫৮টি, ভেড়া ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭৪৩টি এবং অন্য প্রজাতির ১ হাজার ৮৫০টি পশু রয়েছে।
পশুর খাবারের দাম নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে ইন্টিগ্রেটেড ডেইরি রিসার্চ নেটওয়ার্ক (আইডিআরএন)। সংস্থাটির তথ্যমতে, বছরের ব্যবধানে পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। এ বিষয়ে সংস্থাটির প্রধান সমন্বয়ক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুহিউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের মূলত সয়ামিল, ভুট্টা ও গম আমদানি করতে হয়। এখন আমরা পুরোপুরি আমদানিনির্ভর না। তবে বিশ্ববাজারের চেয়ে দেশে সবসময় ১০ শতাংশ বেশি দাম থাকে। গত বছরের মার্চের পর বিশ্ববাজারে বাড়ার কারণে দেশে দাম বাড়লেও পরে আর কমেনি। গতবারের তুলনায় এবার পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত।’
দেশে প্রচলিত পশুখাদ্যের উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে সয়াবিন খৈল, গমের ভুসি, রাইস পলিশ, মসুর ভুসি, সরিষার খৈল, ভুট্টা, মুগ ভুসি ও মটর ভুসি। ১০ বছর আগে গমের ভুসি ছিল ৮-১০ টাকা কেজি। এখন তা প্রতি কেজি ৬০-৬২ টাকা। এক মণ খেসারি ডালের ভুসির দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা। এক মণ খড়ের দাম এখন ৫০০-৬০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৩০০ টাকা।
তবে বাড়তি উৎপাদন ব্যয় এরই মধ্যে সমন্বয় হয়ে যাওয়ায় দাম আর বাড়বে না বলে মনে করছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রিপন কুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘গরুর মাংস এরই মধ্যে ৭০০ টাকার বেশি হয়ে গেছে। ৬০০ টাকা কেজি হলেই দাম উঠে লাভ থাকে। তাই নতুন করে আর দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। কারণ দামটা চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভর করে।’