ক্বীনব্রিজের পাশে নির্মিত হচ্ছে ষষ্ঠ সুরমা সেতু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২৪, ১২:০৫:২৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট নগরীর বুক চিড়ে যাওয়া সুরমা নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দাদের যোগাযোগ সুগম করতে ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা হয় ক্বীনব্রিজ। ১৯৩৩ সালে নির্মাণ শুরু করা সেতুটির নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় কিনব্রিজ। ধীরে ধীরে সিলেটের পরিচিতির অংশ হয়ে উঠে এই কিনব্রিজ। বর্তমান পর্যটন নগরী সিলেটে পর্যটকদের প্রিয় একটি স্থান হল এই কিনব্রিজ। এই ব্রিজের পাশে দাঁড়িয়ে একটি ছবি তুলেই পর্যটকরা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে জানান দেন তারা সিলেটে এসেছেন। লোহা দিয়ে তৈরি এই কিনব্রিজের আকৃতি অনেকটা ধনুকের মতো বাঁকানো।
মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ১৯৭৭ সালে ১ম দফা সংস্কারের পর সর্বশেষ গেল বছরের ডিসেম্বরে ২য় দফা সংস্কার শেষে ব্রিজটি পথচারী চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলেও বন্ধ রয়েছে সবধরনের যান চলাচল। ফলে সময় ও খরচ বেড়েছে নদীর দক্ষিণ পাড়ের হাজার হাজার বাসিন্দার। বাধ্য হয়ে নতুন শাহজালাল সেতু কিংবা কাজিরবাজার সেতু দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে তাদের।
জানা গেছে, আসাম-সিলেট ইতিহাসের প্রায় শত বছরের স্মারক কিনব্রিজ নামের সেতু। এই সেতুই ছিল উত্তরপূর্ব ভারতের সাথে দক্ষিণ পূর্ব ভারতের একমাত্র সড়ক যোগাযোগ। কালক্রমে সেতুটি স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও যানচলচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই সিলেট মেট্রোসিটির মধ্যদিয়ে প্রবাহিত সুরমার দুই পারের মানুষের সড়ক যোগাযোগ যোগাযোগ সহজ করতে ওই কিনব্রিজের পাশে নতুন একটি আরসিসি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এবার আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন সুরমার দক্ষিণ পাড়ের মানুষ। ক্বিনব্রিজের পাশে নির্মিত হতে যাচ্ছে আরেকটি সেতু। এতে সময় ও খরচ সাশ্রয় হবে হাজার হাজার মানুষের।
কীনব্রিজের পাশাপাশি মেট্রোসিটি এলাকাধীন সুরমার ওপর আরো ৪টি আরসিসি সেতু নির্মিত হয়। সেগুলো হচ্ছে- শাহজালাল ব্রিজ, শাহপরান ব্রিজ, কাজিরবাজার ব্রিজ ও তেমুখী বাইপাস ব্রিজ। কিনব্রিজ ও আরসিসি ব্রিজসহ সুরমার উপর মোট ৫ টি ব্রিজ হলেও সিলেট মেট্রোসিটির দুইপারের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ তেমন সুবিধে হয়ে ওঠেনি। তাই সাবেক স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্বপ্ন দেখেছিলেন কীনব্রিজের পাশে আরেকটি ঝুলন্ত সেতুর। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কিনব্রিজের পাশে বসেনি সেতুর কোনো পিলার।
তাই সিলেটবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিনব্রিজের পাশে একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুত প্রকল্পটি। কিনব্রিজের পাশে নতুন একটি সেতু নির্মাণে ৩শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে সম্মত হয়েছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, এনডিবি বাংলাদেশের পাঁচটি প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে ঋণদানকারী ব্যাংকটি ৩শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সিলেট নগরীর সুরমা নদীর ওপর কিনব্রিজের পাশে নতুন একটি আরসিসি সেতু। প্রকল্পগুলো নিয়ে গত ২২ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কনফারেন্স রুমে এনডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী সভাপতিত্ব করেন।
সওজ সূত্র আরো জানায়, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল ব্রীজের স্থল পরিদর্শন করে গেছে। তারা সুরমা নদীর নাব্যতা এবং সেতুটি কতটুকু উঁচু হবে তা পর্যবেক্ষণ করেছে। এখন সওজের পক্ষ থেকে ‘প্রি ডিটেইলস প্রজেক্ট প্রোফর্মা-পিডিপিপি’ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে পাঠানো হবে এনডিবিতে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেট বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন দৈনিক জালালাবাদকে জানান, কিনব্রিজের পাশে নতুন সেতু নির্মাণে এনডিবি দেবে ৩শ’মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর বাকি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের একটি জনসভায় এ সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাই প্রকল্পটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ সেতুটি হবে টোল ব্রিজ। এ সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহন থেকে টোল আদায় করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা ব্রিজ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এখনো ডিজাইন ও নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়নি। শুধুমাত্র এনডিবির বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানতে পেরেছি।