প্রাথমিকে ২৯ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২৪, ৮:০১:৩০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : দীর্ঘ সময় দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট ছিল। এতে পাঠদান ব্যাহত হয়েছে। এমন নাজুক অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেছে। বর্তমানে গড়ে ২৯ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ৩০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষকের কথা বলা হলেও ৬ বছর আগেই সেই লক্ষ্য অর্জন করেছে সরকার। এই বিশাল প্রাপ্তির পর এখনো অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভিন্নচিত্র লক্ষ্য করা যায়। যেখানে শিক্ষক স্বল্পতায় ব্যাহত হচ্ছে শ্রেণি কার্যক্রম, যা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন এবং সার্বিক শিক্ষার মানে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তাই শূন্যপদ পূরণসহ নতুন পদ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক আরও বাড়ানোর অভিমত শিক্ষাবিদদের।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ২০১০ সালে সরকারি প্রাথমিকে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক ছিল মাত্র ১ জন। অন্যদিকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় প্রতি ৩০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষকের কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থায় গত বছর ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে নতুন করে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এছাড়া চলমান ১৪ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও শেষ হবে এ বছর জুনের মধ্যেই। এতে ৬ বছর আগেই এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে বাংলাদেশ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে প্রাথমিক শিক্ষায় এটি সরকারের অনেক বড় অর্জন। আমরা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এটা পাবলিশ করবো। আমাদের জাতীয় কাগজপত্র ও অর্থ এসেছে। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী প্রতি ২৯ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন করে শিক্ষক।’
এদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতিক ব্যবধান কমে আসায় শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় আগে যে বেগ পেতে হতো, তা এখন অনেক বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক হয়ে আসছে।শিক্ষকরা বলেন, আমরা আগে সাময়িক সমস্যার মধ্যে পড়তাম। এখন আর আমাদের পাঠদানে কোনো সমস্যা হয় না। নতুন ভবনের সঙ্গে নতুন শিক্ষা সরঞ্জামাদি পেয়েছি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সংখ্যাও পর্যাপ্ত।
তবে আলাদা চিত্রও রয়েছে অনেক বিদ্যালয়ে। এই যেমন রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৮০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক মাত্র ১৬ জন। অর্থাৎ প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক ১ জন। এতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় বেগ পেতে হয় শিক্ষকদের। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাইরুন নাহার লিপি বলেন, ‘শিক্ষক স্বল্পতার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়।’
এদিকে ২০২৩ সাল থেকে যে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে, তা যথাযথ বাস্তবায়নে দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় গড়ে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক হওয়া দরকার। এছাড়াও দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বছরে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষক অবসরে যান। এসব শূন্য পদ পূরণ করতে হবে পাশাপাশি নতুন পদ সৃষ্টি করতে হবে। ফলে শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক বাড়বে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষাবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ফিনল্যান্ডের মতো ১৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। হয়তো নতুন করে একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে প্রতি ২০ জনে একজন করে। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে গেলে আমাদের এটা করতে হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষকের মান আরও বাড়াতে পারলে শিক্ষার্থীরাও লাভবান হবে।’