বাজারের ৪৭% বৈদ্যুতিক পণ্যই নিম্নমানের – গবেষণা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২৪, ৯:৫১:২৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া বৈদ্যুতিক পণ্যের ৪৭ শতাংশই নন-ব্র্যান্ডেড (নিম্নমানের, নকল ও অনুমোদনবিহীন) বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। আর বৈদ্যুতিক ব্র্যান্ড পণ্যের বাজারে ৮০ শতাংশেরও বেশি দখল আছে দেশি কোম্পানির হাতে।
বিপণন পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন ‘মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশ’ (এমডব্লিউবি) পরিচালিত এ গবেষণায় বলা হয়েছে, নন-ব্র্যান্ডেড পণ্য ব্যবহারকারীদের দেশি ব্র্যান্ডের দিকে আকৃষ্ট করতে পারলে নিরাপদ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার নিশ্চিত হবে যেমন, সেই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈদ্যুতিক পণ্য শিল্পের বিকাশও ঘটবে। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে সংবাদ সম্মেলন করে এই গবেষণার ফল তুলে ধরেন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং এমডব্লিউবির সহ-প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক নাজমুল হোসাইন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান এবিএম শহীদুল ইসলাম।
গবেষণাটি পরিচালনা করা দুই শিক্ষক বলেন, দেশে ইলেকট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ এবং লাইটিং পণ্যের সম্মিলিত বাজারের আকার সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা। দুই দশক ধরে উভয় পণ্যের বাজার অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ ও লাইটিং পণ্যের গড় প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে প্রায় ১০ এবং ১৩ শতাংশ। তবে এর মধ্যে নন-ব্র্যান্ড গ্রে মার্কেটের আকার প্রায় ৫০ শতাংশ। ফলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের এ ক্ষেত্রে নীতিগত পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলে একই সঙ্গে এই খাতগুলোতে বড় সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।
এই গবেষণায় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ১৬ জন ব্যবহারকারী, ১০৩ জন পাইকারি ব্যবসায়ী ও ৯৯ ইলেকট্রিশিয়ানের সরাসরি কোয়েশ্চেনিয়ার এবং ৫ জন ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টের ইন-ডেপথ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
গবেষণার আওতায় পণ্যগুলো ছিল সুইচ, সকেট, হোল্ডার, মাল্টিপ্লাগ, সার্কিট ব্রেকার, মিটার এবং বিভিন্ন হালকা পণ্য যেমন এলইডি লাক্স, এলইডি টিউব, এলইডি প্যানেল, ব্র্যাকেট এলইডি, জিএলএস, এনার্জি এফিশিয়েন্সি বাল্ব ও ইমার্জেন্সি লাইটিং অপশনস।
গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, এটি একটি বড় এবং অপার সম্ভাবনাময় শিল্প। বর্তমানে দেশ জুড়ে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার খুচরা বিক্রেতা এবং ২ হাজার ৫০০ উদ্যোক্তাসহ ৫ লাখেরও বেশি মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ পণ্যের বাজার কমবেশি ৩ হাজার ৩০০ কোটি এবং লাইটিং পণ্যের বাজার কমবেশি ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আগামী দিনগুলোতে এই প্রবৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতিতে এই খাতটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বড় খাত হিসেবে আবির্ভূত হবে।
এই অধ্যাপক আরও বলেন, এই বাজারের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো মার্কেট শেয়ারের প্রায় অর্ধেক (৪৭ শতাংশ) নন-ব্র্যান্ডেড অর্থাৎ নিম্নমানের, নকল ও অনুমোদনবিহীন পণ্য দখল করে আছে। বিশেষ করে চীনের পণ্য দেশি বা বিদেশি বিভিন্ন নামে মার্কেটে ঢুকছে। এ ছাড়া রাজধানীর নবাবপুর ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বড় বাধা হয়ে আছে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে সুপারস্টার গ্রুপ উভয় ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে বাজারে শীর্ষস্থানে রয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ ব্র্যান্ডেড পণ্যের মার্কেট শেয়ারে সুপারস্টার ২৯ শতাংশ, ওয়ালটন ১৭ শতাংশ ও ক্লিক ১৭ শতাংশ দখল করে আছে। অধ্যাপক নাজমুল হাসান বলেন, এই শিল্পের অগ্রগতির পেছনে মূলত গত ২৫ বছরে ব্যাপক বিদ্যুতায়ন, অব্যাহত জিডিপি প্রবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান আয়, দ্রুত ও পরিকল্পিত নগরায়ণ, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং সরকারের গৃহীত সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।