জীবিত ভাতাভোগীদের মৃত দেখিয়ে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২৪, ৮:২৬:৪০ অপরাহ্ন
জুড়ী প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী চারজনকে মৃত দেখিয়ে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ূম। এদেরকে বাদ দিয়ে অন্য চারজনকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পশ্চিম শিলুয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল মজিদ এর পুত্র মোঃ এনামুল হক জুলাই ২০১৮ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে কয়েক মাস ভাতা না পাওয়ায় ভাতার বই নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে ভাতা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কার্যালয় থেকে বলা হয় এ কার্ডের মালিক তো মারা গেছেন, তিনি আর ভাতা পাবেন না। এনামুল বলেন-এ কার্ডের মালিক আমি স্বয়ং আপনার সামনে জীবিত দাঁড়িয়ে, আমি মারা গেলাম কীভাবে? তখন বলা হয়েছে আপনি ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করুন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর তারিখে গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কাইয়ূম এর সভাপতিত্বে ইউনিয়ন বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বয়স্ক ভাতা ১৩৮ জন, বিধবা ২২ জন ও অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ১০ জনসহ ১৭০ জন মৃত ভাতাভোগী পাওয়া যাওয়ায় তাদের স্থলে নতুন সমান সংখ্যক ভাতা ভোগীর তালিকা তৈরি করে তা প্রতিস্থাপনের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। তাছাড়া ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর তারিখে ৬নং ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন ও চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কাইয়ূম সাক্ষরিত ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে প্রদত্ত প্রত্যায়ন পত্রে এনামুল হক ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়। একই তারিখের অপর পৃথক তিনটি প্রত্যয়নপত্রে ছায়রা বেগম, পিতা- আলী, গ্রাম- মাগুরা, শারিজুন নেছা, স্বামী- মৃত মস্তকিন আলী, গ্রাম- গোয়ালবাড়ি ও অঞ্জলী রানী দেব, পিতা- বীরেশ চন্দ্র সেন, গ্রাম- মাগুরা বিভিন্ন তারিখে মৃত্যুবরণ করেন উল্লেখ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়।
জীবিতদের মৃত দেখিয়ে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কাইয়ূম ও ৬নং ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন এজন্য এক তরফাভাবে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়কে দায়ী করেন। তারা বলেন, সমাজসেবা কার্যালয় থেকে উপরোল্লেখিত ব্যক্তিদের নামে মৃত্যুসনদ দেয়ার জন্য আমাদের বলা হলে আমরা তা দেই। পরে জানতে পারলাম উনারা জীবিত। তখন নতুন করে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে তাদের ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ করা হয়। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে অনলাইন মৃত্যু নিবন্ধন ছাড়া তাদের মৃত্যুর তারিখ কোথায় পেলেন- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুড়ী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্দিষ্ট সময় পর পর সকল ভাতাভোগীর হালনাগাদ তথ্য সকল ইউনিয়ন পরিষদে চাওয়া হয়। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা যাচাই-বাছাই করে মৃত্যুসনদ/প্রত্যয়নপত্রসহ মৃতদের বাদ দিয়ে নতুনদের তালিকা পাঠান। সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেই। অনেক সময় কিছু মেম্বার অবৈধ লেনদেন করে জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে বাদ দিয়ে অন্যকে তালিকাভুক্ত করেন। এখানে সমাজসেবা কার্যালয়ের কোনো দায় নেই। গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে যাদের মৃত দেখিয়ে বাদ দেয়া হয়েছিল, তাদের পুনরায় ভাতার আওতাভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
জানতে চাইলে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, ঘটনাটি সত্য হলে অন্যায় হয়েছে।বিষয়টি আমি জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, এবিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইউএনও, জুড়ীকে বলে দিচ্ছি।