বিদেশ ভ্রমণ করে রোদের মধ্যে ফগলাইট পরীক্ষা, দুদকের চার্জশিট দাখিল
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২৪, ৯:১৫:৩৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: ঘন কুয়াশা ও বর্ষা মৌসুমে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ১০ কিলোমিটার দেখা যায় এমন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। চার সদস্যের প্রি শিপমেন্ট ইনসপেকশন (পিএসআই) কমিটিও গঠন করা হয়। তারা বিদেশ সফরও করে দেন পিএসআই প্রতিবেদনও।
কিন্তু তারা চারজন শুধু ভ্রমণের উদ্দেশেই আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে গিয়েছেন। গ্রীষ্মকালে খোলা মাঠে রোদের মধ্যে ফগলাইট পরীক্ষা করেছেন! তাদের মতামতের কারণে সার্চ অ্যান্ড ফগ লাইটের পরিবর্তে সার্চ লাইট শিপমেন্ট হয়েছে। এতে কুয়াশা ভেদ করে সামনের জিনিস দেখতে পারার লাইট কেনার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এ ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়।
চার্জশিট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ১০টি আধুনিক ফগ সার্চ লাইট ও আনুষঙ্গিক যন্ত্র সংগ্রহ এবং ফেরিতে স্থাপনের জন্য দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৬ অক্টোবর তিন সদস্যবিশিষ্ট দরপত্র ওপেনিং কমিটি ও পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। দরপত্রে অংশগ্রহণ করে জনী করপোরেশন মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ পায়।
বিআইডব্লিউটিসির সাবেক চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান, পরিচালক (কারিগরি) ও সাবেক চেয়ারম্যান যুগ্মসচিব ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পঙ্কজ কুমার পাল ও বিআইডব্লিউটিসির মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) ক্যাপ্টেন শওকত সরদারসহ চার সদস্যের প্রি শিপমেন্ট ইনসপেকশন (পিএসআই) কমিটি গঠন করা হয়। তারা ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ রওয়ানা দিয়ে ২৮ মার্চ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে পৌঁছান। তারা ৫ এপ্রিল পর্যন্ত আমেরিকায় অবস্থান করেন। তাদের পিএসআই প্রতিবেদনে মালামাল সরবরাহ করতে বলা হয়।
ক্যাপ্টেন শওকত সরদার ২০১৪ সালের ২৪ জুন দুটি ফগ লাইট কেনার বিষয়ে অবগত হন। ৭ আগস্ট তাগিদ পেয়ে দরপত্র সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও দেরিতে দুটি ফগ লাইটের পরিবর্তে ১০টি সার্চ ও ফগ লাইটের দরপত্র আহ্বান করেন। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি দরপত্র যথাযথ মূল্যায়ন ও সরবরাহ করা মাল যাচাই না করে গ্রহণ করেন।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির চেয়ারম্যান জ্ঞান রঞ্জন শীল ও বিআইডব্লিউটিসির মহাব্যবস্থাপক মো. নুরুল হুদা সদস্য হিসেবে মেসার্স জনী করপোরেশেনের দাখিল করা মিথ্যা প্রত্যয়নপত্র যাচাই করেননি। দরপত্র নন-রেসপনসিভ হওয়ার পরও তারা সরবরাহ আদেশ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। পিএসআইয়ের সময় প্রদর্শিত লাইট ফগ লাইট না হওয়া সত্ত্বেও মালামাল গ্রহণের সুপারিশ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
পিএসআই কমিটির সদস্য পঙ্কজ কুমার পাল একজন নন-টেকনিক্যাল কর্মকর্তা হিসেবে পিএসআইয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে শুধু ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গ্রীষ্মকালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে রোদের মধ্যে ফগ লাইটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে গিয়েছেন।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) মহাব্যবস্থাপক (মেকানিক্যাল) প্রকৌশলী মো. রহমত উল্লাহ ও বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) ম্যানেজার (মেকানিক্যাল) মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বহিঃসদস্য হিসেবে মেসার্স জনী করপোরেশেনের দাখিল করা তথ্য যাচাই করেননি। দরপত্র নন-রেসপনসিভ হওয়ার পরও তারা সরবরাহ আদেশ প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন।
মেসার্স জনী করপোরেশেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) ওমর আলী সার্চ লাইটকে ফগ লাইট দেখিয়ে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ না করে এবং দরপত্রের সঙ্গে মিথ্যা প্রত্যয়নপত্র সঠিক বলে দাখিল করে অপরাধ করেছেন। এভাবে তারা সরকারের ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
তাদের মধ্যে মো. মিজানুর রহমান মারা গেছেন। বাকি সাতজনের নামে গত ১২ মে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক সিলভিয়া ফেরদৌস। ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি তাদের নামে মামলা দায়ের করেছিলেন সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান।