সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২৪, ৭:৩৭:১৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: গরমের আগুনে পুড়ছে যেন সিলেট। কয়েকদিন থেকেই তা অব্যহত আছে। এবার এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিলেটে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙলো। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি। সেদিন পর্যন্ত এটিই ছিল মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার তা ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়লো।
তীব্র গরমে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। গরমে আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এবার তা থাকছেনা। এরচেয়ে কম গরমে আগে বন্ধ থাকলেও এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো নড়চড়া না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক। আগে গরমে ক্লাসের সময় কম থাকলেও এখন পুরো ক্লাস করতে হচ্ছে। ভয়ে অনেকে শিশুকে স্কুলে পাঠাননি বলেও জানান তারা।
এদিকে আবহাওয়ার খবরে জানাগেছে সিলেটসহ সারাদেশে দিন ও রাতে আরও তাপমাত্রা বাড়তে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজ করতে পারে। এছাড়া সপ্তাহের মাঝামাঝি বাড়তে পারে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা। বৃস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বলা হয়, সিলেট, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, বান্দরবান, খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, খেপুপাড়া এব্ং ভোলা জেলার উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া অন্যস্থানে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। আবহাওয়ার নিপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমান পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে গরমের জন্য রাস্তাঘাটে লোকজন কম। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হননি। যানবাহনের সংখ্যাও ছিল কম। যেসব এলাকায় ও পয়েন্টে নিত্যদিন যানবাহনের জটলা থাকতো সেগুলো ছিল অনেকটা হালকা। নগরীর লামাবাজার পয়েন্টে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দেখা যায় এক দুটি রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। স্থানীয় এক দোকানদার বলেন অন্যদিন এসময় এই পয়েন্টে লম্বা সময় যানবাহনের জটলা লেগে থাকে। সকাল ১১টার দিক থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত থেমে থেমে থাকে যানবাহনের জটলা। কিন্তু আজ দুপুর প্রায় ১২টা বাজলেও যানবাহন দেখে মনে হচ্ছে সকাল ৭টা। যানবাহন কম থাকায় যারা বের হয়েছিলেন তারাও সমস্যায় পড়েন। রিকশা না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে থাকেন দীর্ঘক্ষণ। এক দুটো রিকশা মিললেও তাদেরও যাত্রী বহনে অনীহা প্রকাশ করতে দেখা যায়। ঘেমে জবুথুবু এসব রিকশাচালক একবার যাত্রী বহন করেই ক্ষান্ত দিতে হয় বলে জানান। দুপুরের দিকে স্কুল ছুটি হলে অভিভাবকরা বাচ্চাদের নিয়ে পড়েন বিপাকে। রিকশা নেই আবার বাচ্চারা গরমে ঘেমে হাপিয়ে হেঁটেও যেতে কষ্ট। এসব নিয়ে স্কুলের সামনেই অনেক অভিভাবক নিজেদের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গরমে অনেক জায়গায় যানবাহন নষ্ট হয়ে যায়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর জামতলা এলাকায় তীব্র গরমে প্রাইভেট কারের চাকা ব্লাস্ট যেতেও দেখা যায়। বিকট আওয়াজ আর ধোঁয়ায় তৈরি হয় আতঙ্ক।
একদিকে গরম অন্যদিকে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। শহরের চেয়ে গ্রামের দিকে বিদ্যুতের অবস্থা বেশি বেহাল। অন্য সময় বাইরে বাতাস থাকলেও দুদিন থেকে কেনো বাতাস নেই। তাই গরমে গরম অনুভূত হচ্ছে আরও বেশি। গরমে এমন অবস্থা ঘরে বাইরে কোথাও নিস্তার মিলছে না। এ অবস্থায় প্রকৃতির দিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই। আবহাওয়া অফিসও কোনো ভালো খবর জানাতে পারেনি। সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশে সাধারণত মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুনে গরম বেশি থাকে। এই সময়ে বৃষ্টি হলে গরম কিছুটা কমে। আগামী ২/৩ দিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।