চা শিল্প রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে বাগান মালিকদের স্মারকলিপি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২৪, ৮:৩৫:২৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : চা শিল্পের চলমান সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান বাগান মালিকরা। চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজার ও সিলেটের বাগান মালিকরা চা শিল্পের সংকট উত্তরণে নানা দাবি দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে প্রদানের জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের কাছে স্মারকলিপি দেন চা বাগান মালিক কর্তৃপক্ষ। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে প্রদানের জন্য মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. ঊর্মি বিনতে সালাম এর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন চা বাগান মালিক কর্তৃপক্ষ।
স্মারক লিপির লিখিত বক্তব্যে চা বাগান মালিকরা বলেন, চা শিল্পের অতিশয় সংকটময় সময়ে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছি। চা শিল্পের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ২০২২ সালে চা শিল্প শ্রমিক আন্দোলনের মুখে যে অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তা থেকে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই চা শিল্প, সেই সংকট থেকে উদ্ধার পেয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে চায়ের নিলাম মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় চা শিল্পের ভিত নড়ে গেছে। কয়েক লক্ষ শ্রমিক এবং কর্মচারী তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রায় দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে নিলাম মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় অনেক বাগান শ্রমিকদের মজুরী দিতে পারছে না। চলমান পরিস্থিতিতে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জরুরিভিত্তিতে এই সমস্যাবলীর সমাধানকল্পে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বর্তমানে চায়ের উৎপাদন খরচ প্রায় ২৫০ টাকা।
তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চা বোর্ড, বাংলাদেশীয় চা সংসদ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টি ট্রের্ডাস এসোশিয়েশনের সমন্বয়ে চায়ের নিলামমূল্য নিম্নতম ৩শ টাকা নির্ধারণ করলে চা শিল্প আপাতত রক্ষা পেতে পারে। নিম্নতম মূল্যের উপরে চায়ের মান অনুযায়ী নিলাম মূল্য নির্ধারিত হতে পারে।
স্মারকলিপি প্রদানকালে বাগান মালিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, খাদিম চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল রশিদ চৌধুরী, দি সিলেট টি কো. লি. এর মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আজম আলী, এম আহমেদ টি এন্ড ল্যান্ডস কো. লিমিটেড’র পরিচালক তেহসিন চৌধুরী, ফুলবাড়ী টি এস্টেট লিমিটেড’র মহাব্যবস্থাপক আব্দুস সবুর খান, ম্যাকসন ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড’র পরিচালক এম এ জামান সোহেল, মাথিউরা টি কো. লিমিটেড’র পরিচালক রুকন উদ্দিন খান, কালিকাবাড়ি চা বাগানের পরিচালক মুফতি মোহাম্মদ হাসান, জোবেদা টি কো. লিমিটেড’র পরিচালক এম এ মালিক হুমায়ুন, পুর্ব পাহাড় টি কো. লিমিটেড’র মালিক প্রফেসর শফিকুল বারি, লোভাছড়া চা বাগানের পরিচালক ইউসুফ জোসেফ ফারগুসন, মেঘালয় চা বাগানের পরিচালক এম এ ওয়াকিল খান ও তারাপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী।
এ ব্যাপারে তারাপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী বলেন, মালিক বাঁচলে বাগান বাঁচবে, আর বাগান বাঁচলে চা শিল্প বাঁচবে। বর্তমানে সিলেটের চা শিল্প চরম ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। পঞ্চগড়ে উৎপাদিত চা আমাদের জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও দুঃখজনক হলেও ওখানে চা উৎপাদনের কোন নিয়মনীতি না মেনে খুবই নিম্নমানের চা উৎপাদিত হচ্ছে। ফ্যাক্টরি থেকে কোন ট্যাক্স-ভ্যাট পরিশোধ না করে অবৈধভাবে চা বিক্রি হচ্ছে। এই নিম্নমানের চা বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানসম্মত চায়ের নিলাম বাজারে যথাযথ মূল্য পাওয়া থেকে বাধার সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, ছোট বড় প্রায় সব বাগানই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে হাইপোথেটিক লোন বা নিয়ে থাকে এবং চায়ের নিলাম মূল্য সরাসরি কৃষি ব্যাংকে জমা হয়ে তা পরিশোধ করা হয়। এই ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯% থেকে বর্তমানে ১৩% করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় তা পরিশোধ করা বাগানগুলোর পক্ষে অসম্ভব। বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯% রাখার জন্য এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমার ব্যাপারে শিথিলনীতি গ্রহণ, রুগ্ন ও উন্নয়নশীল চা বাগানকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা।
চা বোর্ডের বাধ্যতামুলক ২.৫% সম্প্রসারণ আবাদ কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রেখে শূন্যস্থান পূরণ করার উপর জোর দেয়া। বর্তমানে বাগানগুলোর হাতে সম্প্রসারণ কার্যক্রমে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত তহবিলও নেই। তাই এই সম্প্রসারণ কার্যক্রম কয়েক বছরের জন্য স্থগিত রেখে শূন্যস্থান পূর্ণ করে উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে প্রাধানমন্ত্রীর সদয় দিক নির্দেশনা চান বাগান মালিকরা।