গরমে মশার উৎপাত : মরার উপর খাঁড়ার ঘা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মে ২০২৪, ১২:০৫:৩৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : গত কয়েক দিনের খরতাপে কাহিল অবস্থা। প্রতিদিনই বাড়ছে দিনের তাপমাত্রা। গরমের তীব্রতার মধ্যে বেড়েছে মশার উৎপাতও, যা অতিষ্ঠ করে তুলছে নগরজীবন। বেলা ৪টার পর থেকে বাড়তে থাকে মশার যন্ত্রণা। কয়েল, এরোসল, মশা নিয়ন্ত্রণের ওষুধ কোনো কিছুতেই দমন করা যাচ্ছেনা মশা। সন্ধ্যার পর রাত যত বাড়ে, তখন তীব্র থেকে তীব্রতর হয় মশার জ্বালা।
মশার এই আগ্রাসী উৎপাতে বিব্রত নগর কর্তৃপক্ষও। তারা বলছে, পুরো নগরে এক সাথে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান না চালালে দীর্ঘস্থায়ী সুফল মিলবে না।তবে নগরবাসীর অভিযোগের তীর ছুঁড়ছেন সিসিকের কর্তৃপক্ষের দিকে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ সিসিক কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে বেশির ভাগ ঔষুধ বিতরণ করে সরকারি অফিস আদালতে। তবে পাড়া মহল্লায় খুব কম সিসিক ঔষধ বিতরণ করে ।
নগরজুড়ে মশক নিধন অভিযান অব্যাহত থাকলেও জনবল সংকটের কারণে এর সুফল মিলছেনা বলে জানিয়েছে সিসিক। তাই বিষয়টি নিয়ে তারা বিস্তর একটি কর্ম পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে সেই পরিকল্পনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এদিকে, নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে গরমের তীব্রতার সাথে নগরজুড়ে মশার উপদ্রব চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মশার যন্ত্রণায় অনেকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। সন্ধ্যার দিকে বাচ্চারা পড়তে বসতে পারছেনা। গরমের মওসুমে মশার উপদ্রব বাড়ার বিষয়টি মাথায় রেখে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কোথাও তাদের এ ব্যাপারে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বছরে ৪টি ধাপে পুরো নগরীতে মশক নির্ধন কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল সঙ্কটের কারণে তা ঠিক ভাবে করা সম্ভব হয়না। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের পর্যাপ্ত জনবল নেই। এরই মধ্যে বেড়েছে আরো ১৫টি ওয়ার্ড। ফলে মশকনিধনে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় নিয়ম মাফিক কীটনাশক প্রয়োগ না করায় মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মশা নিয়ন্ত্রণ করতে একটি এলাকায় ১৫ দিন পর একবার করে স্প্রে এবং এর ১৫ দিন পর ফগার মেশিন ব্যবহার করতে হয়। এভাবে ৪ থেকে ৬ বার স্প্রে করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদী ফল পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রয়োজন মাফিক জনবল না থাকায় সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা। স্প্রে করার ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ফগিং করতে হচ্ছে। ফলে অভিযানের সুফল মিলছেনা।
এদিকে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, যে কোন কারণে যে কোন মওসুমে মশার বিস্তার বাড়লেও স্প্রে দিলে কমে যাওয়ার কথা। তবে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে এর বিস্তার বেড়েছে। এক্ষেত্রে সিসিকের ব্যর্থতার পাশাপাশি মানুষের অসচেতনতাকেও দায়ী করছেন অনেকে। নগরীর প্রতিটি এলাকায় ময়লা আবর্জনাবাহী গাড়ি থাকার পরও কিছু মানুষ ড্রেনে ময়লা আবর্জনা ফেলেন। এতে মশার প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে নগর কর্তৃপক্ষ ছাড়াও নাগরিকদেরও দায়িত্ব আছে বলে তারা মনে করেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, মশকনিধন বাবদ স্থানীয় সরকার বিভাগ শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও মশা কমার বিপরীতে বাড়ছে। শুধু গত তিন মাসে সিলেট নগরে মশা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনে। নগরীর লামাবাজারে বাসিন্দা জায়েদা ইসলাম বলেন, নগরীতে বসবাস করি প্রায় ১০ বছরের বেশি সময়। এত মশা এর আগে কখনো দেখিনি। মশার কারণে দিনের বেলা দরজা জানালা বন্ধ করে থাকতে হয়। কয়েল ব্যবহার করেও মশা থেকে রেহাই পাচ্ছি না।
পাঠানটুলা এলাকায় ৬ বছরের বেশি সময় বসবাস করেন আনিস আহমেদ। তিনি বলেন, এই এলাকায় মশা সব সময়ই বেশি। সিটি কর্পোরেশনের লোকজনও নিয়মিত মশার ওষুধ দিতে আসে না। সন্ধ্যা হলে বাইরে কোথাও চলাফেরা করা যায় না। ছেলেমেয়েরা মশারির ভেতরে পড়াশোনা করে। কিন্তু গরমের তীব্রতা মশারী ভিতরে ঢুকলে ফ্যানের বাতাস প্রবেশ করেনা। এ নিয়ে পড়েছি মহাঝামেলায়।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশজুড়ে এখন যেসব মশা দেখা যাচ্ছে। তার বেশির ভাগই কিউলেক্স প্রজাতির মশা। কীটতত্ত্ববিদের মতে, কিউলেক্স মশা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই দেখা যায়। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এসব মশা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বৃষ্টি কমে তাপমাত্রার বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে এ প্রজাতির মশা। সাধারণত বিভিন্ন ডোবা-নালা, ড্রেন, ঝিল বা খালের দূষিত পানিতে কিউলেক্স মশার প্রজনন বেশি হয়। কিউলেক্স মশার কামড়ে ফাইলেরিয়া বা গোদরোগ ও জাপানি এনসেফালাইটিস হয়। যদিও এ দুটি রোগ বাংলাদেশে প্রকট নয়। তবে কিউলেক্স মশার কামড়ে জায়গায় নখের আঁচড়ে প্রুরিগো সিমপ্লেক্স নামের অ্যালার্জিজনিত রোগ হয়। এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের মশক নিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কাউন্সিলারদের তত্তাবধানে স্ব স্ব এলাকায় প্রতিদিনই অভিযান চলছে। অনেক নাগরিক নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা না ফেলে ড্রেনে ময়লা ফেলছে। আর কয়েকদিন যাবত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক জায়গায় ড্রেনে ময়লা জমে রয়েছে। ফলে মশার উৎপাত কিছুটা বেড়েছে। বৃষ্টিপাত বাড়লে ড্রেন পরিস্কার হলে মশার উপদ্রবও কিছুটা কমতে থাকবে। পাশাপাশি আমরাও মশক নিধন কার্যক্রম আরো জোরদারের প্রস্তুতি নিচ্ছি।