গরমের সঙ্গে বাড়লো লোডশেডিং
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মে ২০২৪, ৯:১৯:১৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে চলছে দাবদাহ। প্রচ- খরতাপে পুড়ছে প্রকৃতি। ঠাঠা রোদে তপ্ত কড়াইয়ের মতো তেঁতে ওঠেছে পথঘাট। এরই মধ্যে সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই অসহনীয় গরমের মধ্যে হঠাৎ নগরজুড়ে বেড়েছে লোডশেডিং। দিনে ও রাতে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের যাতাকলে অতিষ্ঠ জনসাধারণ। দিনে-রাতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। দিনে তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। এমন অবস্থায় গ্রামাঞ্চলের লোডশেডিং পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ।
এদিতে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে হঠাৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহ কমেছে। ফলে নগরে লোডশেডিং কিছুটা বেড়েছে। রোববার বিকেলে সিলেটে বিভাগে ২৫ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে। পিডিবি’র ২০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ১৫৩ মেগাওয়াট।
জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দুই ভাসমান টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ কমে গেছে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানেও গ্যাসের চাপ কমেছে। পেট্রোবাংলার একটি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় গ্রিডে প্রায় ৭০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ কমানো হয়েছে। এই অবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসাবাড়ি ও শিল্প কারখানায় তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট। এই অবস্থায় ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং বাড়ানো হয়েছে।
এলএনজি সরবরাহ কমার বিষয়টি জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ও। শনিবার মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এলএনজি সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সরবরাহে স্বল্পচাপ বিরাজ করতে পারে। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। তবে কী পরিমাণ এলএনজি সরবরাহ কমানো হয়েছে সেটা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়নি।
পেট্রোবাংলার দৈনিক গ্যাস সরবরাহের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৩ মে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ হয় ১ হাজার ৭৭ মিলিয়ন ঘনফুট। আর সব মিলিয়ে সরবরাহ হয় ৩ হাজার ৯৬ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে শনিবার (২৫ মে) এর হিসাবে দেখা গেছে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট (৭০ কোটি) এলএনজি সরবরাহ কমে গেছে। অর্থাৎ জাতীয় গ্রিডে এলএনজির সরবরাহ আছে ৪০০ মিলিয়নের কাছাকাছি।
কক্সবাজারের মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। জাহাজে করে এলএনজি কিনে আনার পর তা টার্মিনালের মাধ্যমে রিগ্যাসিফিকেশনের পর পাইপলাইনে করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। ফলে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকলে ভাসমান টার্মিনালের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে।
শনিবার পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, সাগরে নিুচাপ চলমান থাকায় দুর্ঘটনা রোধে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে থাকা দুই এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতেও এলএনজি সরবরাহ ১০৮ কোটি ঘনফুট থেকে ৩৮ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। এটি আরও কমতে পারে। এতে ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট। এ কারণে প্রচ- গরমের মধ্যে দেশে বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিংও বেড়েছে। সোমবার পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ এমন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি’র সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির রোববার সন্ধ্যায় দৈনিক জালালাবাদকে জানান, গত কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রার উর্ধ্বগতিতে সিলেটসহ সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামুলকভাবে বেড়েছে। এরই মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। ফলে সিলেটসহ সারাদেশে বিদ্যুতের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে শুধু সিলেট নয়, সারাদেশেই লোডশেডিং বেড়েছে।
তিনি বলেন, রোববার দিনের বেলায় সিলেট বিভাগে ২০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ১৫৩ মেগাওয়াট। ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ঘাটতি থাকায় ২৫ শতাংশ লোডশেডিং করতে হয়েছে। একইভাবে সিলেট জেলায় ১৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ৯৮ মেগাওয়াট। ফলে জেলায় ৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকায় ২৬ শতাংশ লোডশেডিং করতে হয়েছে। সহসা এই অবস্থার উন্নতি হবে বলে মনে হচ্ছেনা। দুর্যোগ কেটে গেলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বৃদ্ধি পেলে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।