লণ্ডভণ্ড উপকূল : নিহত ১০
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মে ২০২৪, ১১:০০:৩৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ে ঘর-বাড়ি, দোকানপাট তছনছ হয়েছে, ভেঙে পড়েছে গাছ-পালা। প্রাণহানি ঘটেছে ১০ জনের। আহত হয়েছেন শতাধিক।
এদিকে, রেমালের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২ কোটি ৭৫ লাখের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। রেমালের তা-বে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে দেশের ৪৫টি জেলার ৮ হাজার ৪১০টি মোবাইল অপারেটর সাইট অচল হয়ে পড়েছে। এর ফলে উপকূলীয় বিভিন্ন অঞ্চলের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জানা গেছে, রোববার দিবাগত রাতে উপকূলের ভোলা, মোংলা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, কুয়াকাটা ও খেপুপাড়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে রেমাল। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তাদের মধ্যে দুইজন নারী ও আটজন পুরুষ।
সোমবার মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করার সময় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- খুলনার লালচাঁদ মোড়ল, বরিশালের জালাল সিকদার, মো. মোকলেছ ও লোকমান হোসেন, সাতক্ষীরার শওকত মোড়ল, পটুয়াখালীর মো. শরীফ, ভোলার জাহাঙ্গীর, মাইশা ও মনেজা খাতুন এবং চট্টগ্রামের সাইফুল ইসলাম হৃদয়।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায় বসতঘরের ওপরে গাছ পড়ে মৃত গহর আলী মোড়লের ছেলে লাল চাঁদ মোড়ল (৩৬) মারা গেছেন। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মৃত নরিম মোড়লের ছেলে শওকত মোড়ল (৬৫) সাইক্লোন সেন্টারে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে মারা যান।
বরিশালে এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাকেরগঞ্জ উপজেলার আজমত আলী শিকদারের ছেলে জালাল শিকদার (৫৫) বাজারে যাওয়ার পথে গাছের ডাল ভেঙে মারা গেছে। বরিশালের রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লিলি পম্পের দক্ষিণ পাশে মেঘা কিচেন চাইনিজ রেস্টুরেন্টের উত্তর পাশের দেয়াল ভেঙে পার্শ্ববর্তী হোটেলে কর্মরত অবস্থায় মারা গেছেন মো. মোখলেছ (২৮)। এছাড়া, একই স্থানে একই কারণে আমজাদ হালদারের ছেলে মোহাম্মদ লোকমান হোসেন (৫৮) মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে, জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ডুবে মারা গেছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আব্দুর রহিমের ছেলে মো. শহীদ (২৭)। এখন পর্যন্ত ভোলায় বোরহানউদ্দিন দৌলতখান ও লালমোহনে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভোলার বোরহানউদ্দিনে গাছ চাপায় মারা গেছেন জাহাঙ্গীর (৫০) নামের এক ব্যক্তি। দৌলতখান উপজেলায় গাছ চাপায় মারা গেছে মোহাম্মদ মনিরের কন্যাশিশু মাইশা (৪)। এছাড়া, লালমোহনে টিনের ঘরের আড়ার নিচে পড়ে মনেজা খাতুন (৫৪) নামের এক নারী মারা গেছেন।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন টেক্সটাইল জেড এলাকায় খলিলের বাড়ির বিপরীতে নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে সাতক্ষীরা শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নে রাতভর বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ায় ভেঙে গেছে ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা। জেলার অন্য এলাকাতেও বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে গেছে।
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কলাপাড়া, খেপুপাড়া ও কুয়াকাটায়। এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিষখালি-সন্ধ্যা, পায়রা, আন্ধারমানিক, গলাচিপা ও তেতুলিয়া নদীর উপচে পড়া পানিতে বরগুনা ও পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আশঙ্কার তুলনায় আগেভাগেই ঘূর্ণিঝড় রেমালের অগ্রভাগের প্রভাবে পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। বাতাসের তোড়ে এসব এলাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল থেকে ফুফু ও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে মো. শরীফ (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
বরগুনায় তলিয়ে গেছে ২৭ গ্রাম, ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। আমতলী ও তালতলী উপজেলার ২৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে উপজেলা নির্বাহী অফিস। বলেশ্বর নদীর পানিতে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাগেরহাটের বলেশ্বর,পানগুছি-খাসিয়াখালি এবং দড়াটানা নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে। এতে শরণখোলা ও মোড়লগঞ্জের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত। রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবন। করমজলসহ বনের উঁচু এলাকাগুলোও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। সদর হাসপাতালের কোন একসাইড ভেঙে ভিতরে পানি ঢুকেছে। বাগেরহাটে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
মোংলার শ্যালা নদী ও পশুর নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপরে। রাস্তা ভেদ করে জয়মুনি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। রাজধানীতে রেমালের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বইছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। চট্টগ্রামেও রেমালের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগরে জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে ২১ টি গ্রাম। নোয়াখালীর হাতিয়ার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।
খুলনার দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটায় ব্যাপক তা-ব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের অনেক জেলায় গুড়ি গুড়ি থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। সিলেটেও সোমবার দিনভর গুড়ি গুড়ি থেকে কখনো মাঝারি কখনো ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।
বেশি মৃত্যু গাছ ও দেয়ালচাপায় :
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের উপকূলীয় ছয় জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল ও ভোলায় ৩ জন করে মারা গেছেন। এ ছাড়া খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলায় একজন করে মানুষ মারা গেছেন।
কীভাবে এই ছয়জন মারা গেলেন তার বিবরণ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সোমবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বরিশালের বাকেরগঞ্জে দাড়িয়াল ইউনিয়নের চর দাড়িয়াল গ্রামের জালাল সিকদার (৫৫) মারা গেছেন বাজারে যাওয়ার পথে গাছের ডাল ভেঙে। বরিশাল শহরের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেয়াল ভেঙে হোটেলে কর্মরত অবস্থায় মারা যান মো. মোকলেছ (২৮) নামে এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। একই জায়গায় একই কারণে একই হোটেলে কর্মরত লোকমান হোসেন (৫৮) নামে আরেক ব্যক্তি মারা গেছেন। তাঁর বাড়িও পটুয়াখালীতে।
ভোলায় যে তিন মারা গেছেন তাঁর মধ্যে জাহাঙ্গীর (৫০) মারা গেছেন গাছের চাপায় পড়ে। তাঁর বাড়ি জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের বাথানবাড়ী গ্রামে। দৌলতখান পৌর এলাকায় মাইশা (৪) নামে এক শিশু মারা গেছে গাছ চাপা পড়ে। এ ছাড়া লালমোহন উপজেলায় পশ্চিমচর উমেদি ইউনিয়নের মনেজা খাতুন (৫৪) মারা গেছেন টিনের ঘরের আড়ার নিচে চাপা পড়ে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বসত ঘরের ওপর গাছ পড়ে মারা গেছেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের গাওহড়া গ্রামের লাল চাদ মোড়ল (৩৬)। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের শওকত মোড়ল (৬৫) মারা গেছেন সাইক্লোন সেন্টারে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে। আর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপলী ইউনিয়নের কাওয়ার চর গ্রামের মো. শহীদ (২৭) মারা গেছেন জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ডুবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন টেক্সটাইল জেড এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে দেয়াল ধসে ছাইফুল ইসলাম (২৬) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৩৭ লাখের বেশী মানুষ:
ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার রাত আটটার দিকে মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১১ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে গেছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়। এই ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে বহু মাছের ঘের।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূল ও আশপাশের ১৯ জেলা। এগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর।
প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জেলার ১০৭টি উপজেলার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। এ ছাড়া আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।
বিদ্যুতহীন পৌণে তিন কোটি গ্রাহক :
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে দেশের বড় একটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। কয়েক কোটি মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তবে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। যদিও এখনো প্রায় পৌনে তিন কোটির বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে আছেন। সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েন। এর মধ্যে ৩ লাখ ২১ হাজার সংযোগ আবার দেওয়া হয়েছে। আর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১টি সংযোগ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে আছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আরইবির ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে ৬৫টি সমিতির আওতায় আংশিক বা পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩০টি সমিতির আওতায় বিদ্যুতের ২ হাজার ৭১৮টি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২ হাজার ৩৬৩টি ট্রান্সফরমার বিনষ্ট হয়েছে, ইনসুলেটর ভেঙে ২২ হাজার ৮৮৬টি, মিটার বিনষ্ট হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৬৫টি। এ ছাড়া স্প্যান (তার ছেঁড়া) হয়েছে ৭১ হাজার ৮৬২টি পয়েন্টে। সার্বিকভাবে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি ৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
ওজোপাডিকোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার। বিদ্যুতের খুঁটি নষ্ট হয়েছে ২০টি, হেলে পড়েছে ১৩৫টি, তার ছিঁড়ে গেছে প্রায় ২৪ কিলোমিটার। এ ছাড়া ট্রান্সফরমার বিনষ্টসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, ভাসমান টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। এখানে কোনো ক্ষতি হয়নি। এখন সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করে ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আরইবি ও ওজোপাডিকোর সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য আরইবি ও ওজোপাডিকোর লোকজন প্রয়োজনীয় মালামালসহ প্রস্তুত রয়েছেন। ঝড় বা বাতাস কমার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হবে।
সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল পটুয়াখালীতে :
দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে শেষ পর্যন্ত কমতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রেমালের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল পটুয়াখালীতে, যা ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার। তবে ঢাকায় গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫৯ কিলোমিটার। সোমবার (২৭ মে) বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব অনেকটাই কমে এসেছে। ধীরে ধীরে উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে লঘুচাপ হয়ে গুরুত্বহীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে রেমালের সর্বোচ্চ গতিবেগ আমরা রেকর্ড করেছি পটুয়াখালীতে, যা ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১১ কিলোমিটার। আর ঢাকায় সকাল ৬টা ২০ মিনিটে প্রতি ঘণ্টায় ৫৯ কিলোমিটার গতিবেগ আমরা রেকর্ড করেছি।
আব্দুর রহমান বলেন, রেমালের প্রভাবে এখন পর্যন্ত আমরা দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছি চট্টগ্রামে ২৪০ মিলিমিটার। সেইসঙ্গে ঢাকায় বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছি। তাছাড়া দেশের অধিকাংশ জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের রেকর্ড আমাদের রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
রেমাল স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এলে দেশে তাপমাত্রা বাড়বে কি না জানতে চাইলে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের তাপমাত্রা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও কমে যেতে থাকবে। যখন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে যাবে, তখন দেশের তাপমাত্রাও আবার বাড়তে শুরু করবে। যদিও হঠাৎ করে তাপমাত্রা তাপপ্রবাহের মধ্যে চলে আসবে না। তবে আস্তে আস্তে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
সতর্কতা সংকেত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মোংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোতে সকালে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ছিল, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জন্য ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ছিল, সে সংকেতগুলো নামিয়ে তার পরিবর্তে আমরা তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত জারি করেছি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রেমালের প্রভাবে কক্সবাজারে ১৩৯, পটুয়াখালীতে ১২১, খেপুপাড়ায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।