সিলেটে ৩৬ ঘণ্টায় ৩৩৭.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মে ২০২৪, ৯:১৭:৪৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সিলেটে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। ৩৬ ঘণ্টায় সিলেটে ৩শ ৩৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সোমবার দিবাগত রাতে প্রবল বৃষ্টির জন্য অনেক এলাকার নিচতলার লোকজনকে সারারাত জেগে কাটাতে হয় বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ার শঙ্কায়। তবে নগরীর বেশিরভাগ রাস্তা সোমবার রাতে পানির নিচে ছিল। সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায় সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩শ ৩৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২শ ৪৯ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং মঙ্গলবার সকালে ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৮ দশমিক ১ মিলিমিটার। এরমধ্যে মঙ্গলবার সকালে ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়ে ৪৭ মিলিমিটিার। সকালে বেশ বৃষ্টিপাত হলেও দুপুরের পর থেকে কমতে থাকে বৃষ্টির পরিমাণ। ৯টার পর বাকি সারাদিনে ৪১ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এদিকে সিলেটে প্রবল বৃষ্টি ঝরিয়ে সিলেট অঞ্চল দিয়েই বিলিন হলো ঘুর্ণিঝড় রেমাল।
বৃষ্টির সাথে ছিল প্রবল ঝড়ো হাওয়া। বৃষ্টি ও হাওয়ায় দুইদিন সিলেটের জনজীবন অনেকটাই থমকে যায়। মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে বৃষ্টি ও বাতাস কমলে জনজীবন কিছুটা স্বাভাবিক নিয়মে ফিরে আসতে শুরু করে। এরআগে দু’ দিন মাঝেমধ্যে বৃষ্টির পরিমাণ কমলেও প্রবল বাতাসের কারণে ছাতা নিয়ে বাইরে বের হওয়া ছিল বেশ দুঃসাধ্য। ফলে খুব দরকার ছাড়া কেউ বাইরে বের হননি। প্রবল বাতাসে বিভিন্ন স্থাপনা থেকে সাইনবোর্ড, টিন, প্লাস্টিক খুলে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা গেছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে রাস্তাঘাটে ছিল যানবাহনের স্বল্পতা। সকালে এবং রাতে নগরী ছিল অনেকটাই যানবাহন হীন। দুপুর থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত কিছু সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশা চলাচাল করতে দেখা যায়। দুপুর পর্যন্ত কোনো দোকানপাঠ খুলেনি। অল্প কিছু খাবারের দোকান খুললেও ক্রেতা ছিল কম। দুপুরের পর কিছু দোকানপাঠ খুললেও সন্ধ্যার পর সেগুলোতেও ছিল না লোকজন। স্কুল কলেজ খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল একেবারে কম। যানবাহন না থাকায় সকালের দিকে বিপাকে পড়েন কর্মস্থলে যাওয়া লোকজন। ইঞ্জিনিয়ার জাফর আলী নামে একজন শিক্ষক মঙ্গলবার সকালে জানান তিনি শহরতলীর টুকেরবাজার থেকে প্রতিদিন সিএনজি করে তার কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। সকালে টুকেরবাজার পয়েন্টে যেখানে সিএনজির মিলনমেলা থাকে সেখানে মঙ্গলবার কোনো সিএনজিই তিনি পাননি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে এক দুটি সিএনজি বাজার অতিক্রম করতে দেখা গেলে যাত্রী দেখেও তারা থামেনি। প্রবল বাতাসের কারণে বের হয়নি কোনো ইজিবাইক। তাই অনেক কষ্টে তাদের কর্মস্থলে যেতে হয়।
মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর কমে যায় বৃষ্টির পরিমাণ। তবে প্রবল বাতাস অব্যাহত থাকে। বাতাসে অনেক উঁচু দালানের টিনের টুকরা, সাইনবোর্ড ঝুলে যেতে দেখা যায়, কোনো কোনো দালান থেকে গ্লাস ভেঙে ও টিন খুলে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা যায়। সকাল ১১টার দিকে নগরীর জল্লারপারে রাতুল প্লাজা থেকে গ্লাস ভেঙে রাস্তায় খুলে পড়তে দেখা যায়। এসময় আশপাশে লোকজন জমে যায়, আতঙ্ক তৈরি হয়। দুপুর ১২টার দিকে অবারও বাতাসে গ্লাস ভেঙে পড়ে বলে লোকজন জানান।
এদিকে সোমবার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টিতে নগরী ও শহরতলীর অনেক নি¤œাঞ্চলে পানি জমে যায়। নগরীর শাহজালাল উপশহর, দক্ষিণ সুরমার রেল গেইট, শাহপরান মেজরটিলা এলাকায় অনেক এলাকা পানির নিচে চলে যায়। এছাড়া বৃষ্টিতে প্রায় প্রতিটি সড়ক পানির নিচে ছিল। বৃষ্টির পরিমাণ কমলে পানি নেমে যায় আবার বাড়লে পানি বেড়ে যায় এভাবে সারারাত চলে। গতবার যেসব বাড়িতে পানি উঠেছিল এসব এলাকার লোকজন নির্ঘুম রাত কাটান বাসাবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ার শঙ্কায়। তবে বাড়ির উঠোনে পানি জমলেও বাসাবাড়িতে পানি উঠার কোনো খবর জানা যায়নি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে ভারতের মেঘালয় পর্বতের চেরাপুঞ্জি এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে সিলেটে বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সিলেটের ওপর দিয়ে বয়ে চলা নদ-নদীর পানি ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। গত দুইদিনে মেঘালয় পর্বতের চেরাপুঞ্জি এলাকায় ১ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। যার কারণে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক ও সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নদীগুলোতে পাহাড়ি ঢল নেমে আসার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।
জানা গেছে, মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পর্বত এলাকার সোহরা নামক স্থানে সোমবার (২৭ মে) সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত ৫শ ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মেঘালয় রাজ্যের অন্যান্য স্থানে ২শ থেকে ৪শ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯ টার পর থেকে বুধবার সকাল ৯ টার মধ্যে আরও ৫শ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মেঘালয় রাজ্যের এই বৃষ্টিপাতের পুরোটাই সিলেট বিভাগের বিভিন্ন নদ-নদীগুলোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলিত হয়। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য যদি সঠিক হয় তবে সিলেট বিভাগের নদ-নদী গুলিতে পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কা রয়েছে। একই সাথে সিলেটের বিভিন্ন নদীগুলোর পানি বেড়ে এই অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।