৩য় ধাপের ভোটেও সিলেটে বিচ্ছিন্ন ঘটনা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মে ২০২৪, ৯:৩০:৫২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে ৩য় ধাপে সিলেটের ১০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া ও বিএনপিসহ অধিকাংশ দল ভোটে অংশ না নেয়ায় ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম।
কয়েকটি উপজেলায় জাল ভোট দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন কয়েকজন। এছাড়া ভোটকেন্দ্রে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশের কারণে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ৩য় ধাপে সিলেট জেলার বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল এবং হবিগঞ্জ জেলার লাখাই, সদর ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
বিয়ানীবাজারে ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে আটক ৫:
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শ্রীধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দলবেঁধে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা ও জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে পৌনে এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।
পুলিশ ও এজেন্টরা জানান, দুপুর সোয়া বারোটার দিকে হঠাৎই কিছু দুবৃত্ত শ্রীধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকে পড়ে। এসময় পুরুষ ও নারী দুই কেন্দ্রে ঢুকে পড়ে। এলোপাশাড়ি জাল ভোট প্রদান ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে তারা। এসময় তাদের বাধা দিতে গিয়ে একজন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন।
এজেন্ট ও প্রিজাইডিং অফিসাররা জানান, ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে ৫ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনার খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। টহল জোরদার করে বিজিবিও। তবে ঘটনার প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
শ্রীমঙ্গলে ৫ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার প্রত্যাহার :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দায়িত্বে অবহেলার কারনে পাঁচ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বুধবার (২৯ মে) উপজেলার শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন ভোট কেন্দ্র, হাউজিং স্টেস্ট, ভোট কেন্দ্র ও মাতৃছায়া কেজি স্কুল ভোট কেন্দ্র থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।
তারা হলেন, শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন ভোট কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার মীরা শীল, অঞ্জন দেব ও সিরাজুন নেহার চৌধুরী। হাউজিং স্টেট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার প্রসান্ত কুমার দেব। মাতৃছায়া কেজি স্কুল সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার অঞ্জনা রাউথি।
তিন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসাররা জানান, আমরা সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম যেন ভোটার আসার আগে কেউ ব্যালট এ সিল না মারেন। কিন্তু তারা আগেই সিল মেরে রেখে দিয়েছিলো। পরে ম্যাজিস্ট্রেট এসে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
দোয়ারাবাজারে অস্ত্রসহ ভোটকক্ষে এজেন্ট:
সুনামগঞ্জের দোয়ারা সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের ভেতরে দেশীয় অস্ত্রসহ চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্টকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার সকালে ওই ভোটকেন্দ্রের ৭নং কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
জানা যায়, বুধবার সকাল ৮টা থেকে সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। উপজেলার সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ৭নং কক্ষে চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুল ইসলাম জুয়েলের পক্ষে এজেন্টের দায়িত্ব পালন করেন মুরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুক মিয়া। অভিযুক্ত মাসুক মিয়া ভোট কক্ষের ভেতরে থাকা অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্টদের ভয় দেখান।
পরে ওই কক্ষ পরিদর্শনে আসেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিম। এসময় ওই এজেন্টের আচরণ সন্দেহজনক হলে তাকে আটক করে তল্লাশির নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ তার শরীর তল্লাশি করে ধারালো দেশীয় অস্ত্র (চায়নিজ চাকু) উদ্ধার করে। সেখানে উপস্থিত থাকা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিম তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দোয়ারাবাজার সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মুজিবুর রহমান বলেন, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্টকে আটক করে ৬ মাসের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বালাগঞ্জে ভোট গণনার সময় বিশৃঙ্খলা, পুলিশের গুলি :
সিলেটের বালাগঞ্জে একটি কেন্দ্রে ফল ঘোষণায় দেরি হওয়ার দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছুড়লে একজন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় পদদলিত হয়ে আহত হন আরও দুই জন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার (২৯ মে) বালগঞ্জে উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের মাকশি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের মাকশি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেরি হওয়ার আনারস প্রতীকে নির্বাচন করা বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনহার মিয়া ও কাপ পিরিচ প্রাতীকে নির্বাচন করা বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোস্তাকুর রহমান মফুরের সমর্থকদের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়লে একজন সমর্থকের গুলি লাগে। পদদলিত হয়ে আহত হন আরও দুই জন।
বালাগঞ্জ থানায় অফিসার ইনচার্জ রমাপ্রসাদ চক্রবর্ত্তী, ব্যালট বাক্স আনার সময় এক প্রার্থীর সমর্থক পুলিশের উপর হামলা চালানের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ তাকে প্রতিহত করে।