মালয়েশিয়ায় বন্ধ হচ্ছে শ্রমবাজার : বিমান বন্দরে অপেক্ষমান হাজার হাজার কর্মী
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০২৪, ৮:০১:৫১ অপরাহ্ন
মালয়েশিয়া প্রতিনিধি: মালয়েশিয়া সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আজ শুক্রবার (৩১ মে) এর পর থেকে আর কোনো বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারবে না। এতে অপেক্ষমান কর্মীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। সময় বৃদ্ধি না হলে প্রায় ৪০ হাজার অপেক্ষমান কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স যোগে উল্টোপথ হয়ে বাংলাদেশি কর্মীরা স্রোতের ন্যায় মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কুয়ালালামপুরস্থ দু’টি আন্তর্জাতিক টার্মিনালে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী পৌঁছে ফ্লোরে অবস্থান করছে। শেষ মুহূর্তে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে কর্মীদের উপচেপড়া ভিড়। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে কর্মী ও নিয়োগকর্তাদের। নিজেদের কর্মী শনাক্তে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নিয়োগকর্তাদের। আর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে কর্মীদের।
এদিকে, মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ ৩০ মে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দৈনিক বিদেশি কর্মীদের আগমন হয় ৫শ’ থেকে ১ হাজার মধ্যে। ২২ মে থেকে আগমনের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত ও যানজট নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত কাউন্টার খোলা হয়েছে ও অভিবাসন কর্মকর্তার সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও বিদেশি কর্মীদের পানি ও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানানো হয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার কর্মীর বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু হয়েছে। কর্মী প্রবেশের সময় আজ শেষ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীরা উল্টো পথে দুবাই, কাতার, চীন, হংকং, সিংগাপুর, ইন্দোনেশিয়া হয়ে স্রোতের ন্যায় দেশটিতে ঢুকছে।
অনেকের অভিযোগ, বিমানের টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে সিন্ডিকেট চক্র মালয়েশিয়ার ৩০ হাজার টাকার ওয়ানওয়ে টিকিটের দাম এখন ৯৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে যে এসব দেখার কেউ নেই। এ ব্যাপারে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নিরব ভূমিকা পালন করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্ধারিত ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এফডব্লিউ সিএমএস প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের দেশটিতে প্রবেশের সবশেষ সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় ৩১ মে। মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদিত বাংলাদেশি কর্মীদের ৩১ মের মধ্যে দেশটিতে প্রবেশের ডেডলাইন নির্ধারণ করার ফলে অপেক্ষমান কর্মীদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। এ সুবাদে টিকিট সিন্ডিকেটের পরামর্শে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলো ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ওয়ানওয়ে টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছে। চড়া দাম দিয়েও হাজার হাজার মালয়েশিয়াগামী কর্মী টিকিট মিলছে না। চড়া দামের টিকিটের অতিরিক্ত টাকা যোগাতে যাত্রীরা হিমসিম খাচ্ছেন। বাংলাদেশে অপেক্ষমান মালয়েশিয়াগামী কর্মীরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
মালয়েশিয়ার নিউ স্ট্রেইট টাইমস জানায়, ১ জুন থেকে বর্তমান কোটার অধীনে নতুন কোনো শ্রমিক নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দীন নাসুশন ইসমাইল। অপরদিকে, কোটা পদ্ধতিতে সংস্কার সাধনের পর এবং ৩০ জুন শ্রমিকদের আসার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে চিন্তা করা হবে বলে জানিয়েছেন মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম।
এর আগে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার মোট শ্রমিকের ১৫ শতাংশ অন্যান্য দেশ থেকে আগতদের জন্য নির্ধারিত করে দেশটির সরকার। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের তথ্যমতে, ১৫ মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে ২০ লাখ বিদেশি শ্রমিক কাজ করছেন।