বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : সিলেটের ৬ উপজেলা প্লাবিত
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মে ২০২৪, ২:১১:৪৭ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জেও বাড়ছে পানি
স্টাফ রিপোর্টার : ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে সিলেটের ৬টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। কয়েকদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে ভারত সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী আগেই বিপদসীমার ওপরে ছিল। সেই সঙ্গে বুধবার রাতে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নামা ঢলে দ্রুতই তলিয়ে যেতে থাকে উপজেলা।
পাশাপাশি পাহাড়ি ঢলে ভয়াল বন্যার একইচিত্র সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলাতেও। নতুন করে বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে পানি। সবমিলিয়ে এই ৬ উপজেলায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জ জেলায়ও নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। ফলে বন্যার আশঙ্কায় রয়েছেন হাওরপাড়ের মানুষ।
সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়লেও উদ্ধার তৎপরতার তেমন কোন চিত্র চোখে পড়েনি। পানিবন্দী অনেক মানুষের আর্তনাদের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। একই সাথে ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই নৌকা নিয়ে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করতে যান। এখনো অনেক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী একদিনে ২০২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়াও, সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে ১৯৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপর, কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার ফলে সিলেটের নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়েছে।
এদিকে পানিবন্দি বাসিন্দাদের জন্য সিলেটের ৫টি উপজেলায় ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে । সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ সব উপজেলার দূর্গত মানুষের জন্য শুকনো খাবার, চাল ও নগদ টাকা সংশ্লিষ্টিদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার থেকে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা ভয়াবহ বন্যার কারণে পানি বন্দি হয়ে পড়েন। এতে অনেকেই ঘড়-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্য দুর্গতদের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী সিলেটের ৫ টি উপজেলার প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা কালেক্টরেটের সহকারী কমিশনার মো. ওমর সানী আকন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট ৫টি উপজেলা গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার বন্যাদুর্গত বাসিন্দাদের জন্য ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ৭৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা ও ত্রাণসামগ্রী উপবরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব উপজেলায় আরও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
সিলেটের ৫টি উপজেলায় মোট ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৫৬টি, জৈন্তাপুর উপজেলায় ৪৮টি, কানাইঘাট উপজেলায় ১৮টি, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৩৫টি ও জকিগঞ্জ উপজেলায় ৫৮টি রয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, উপজেলার টিলা এলাকা ছাড়া বাকিসব এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও মানুষের বাড়ির ছাউনি পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘রাতে অন্ধকার ও প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার অভিযানে সমস্যা হচ্ছিল। ভোর থেকে ব্যাপকভাবে উদ্ধার অভিযান চলছে। মানুষ উদ্ধার করা গেলেও গৃহপালিত পশুপাখির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
লিয়াকত আলী বলেন, ‘চাল বরাদ্দ থাকলেও রান্না করে খাওয়ার মতো শুকনো জায়গা নেই। আমরা বন্যা-কবলিত মানুষের জন্য আপাতত শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করছি।’
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যায় উপজেলার ৭৫ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। জাফলং-বিছনাকান্দিসহ সব পর্যটন এলাকার পর্যটকবাহী নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চলছে।
তিনি বলেন, বন্যার পূর্বাভাস থাকায় আমরা আগেই ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। কাল রাতেই ১৬৭টি পরিবার আশ্রয় নেয়, সকাল থেকে যা ২৫০ ছাড়িয়েছে। অনেক মানুষ নিজের বাড়িঘর ছেড়ে পার্শ্ববর্তী উঁচু বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।
ইউএনও আরও জানান, বন্যা-কবলিত মানুষের জন্য আগের বরাদ্দ ৪৮ টন চালের সঙ্গে নতুন ১৫ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও, ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বন্যা কবলিতদের ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, বন্যা পরিস্থিতি গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি খারাপ। স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রয়োজনে তারাও উদ্ধার অভিযানে যোগ দেবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে। বন্যা-কবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।
অসহায় বানভাসি মানুষদের উদ্ধার তৎপরতা ও খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন মানবিক কাজে এগিয়ে এসেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বৃহস্পতিবার সকালে জৈন্তাপুর উপজেলায় বন্যা দুর্গত এলাকায় আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসেন বিজিবি সদস্যরা। এছাড়া বেশ কয়েকটি এলাকায় বেড়িবাঁধ রক্ষা করতে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেন তারা। এ সময় বন্যার্তদের মাঝে রান্না করা খাবারও বিতরণ করেন বিজিব সদস্যরা।
বিজিবি সিলেট সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি দুই শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ রক্ষায় স্থানীয়দের নিয়ে কাজ করা হয়। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষদের জন্য ৪৫০ প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (১৯ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার মো. আসাদুন্নবী ও সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মুনতাসির মামুন।
বন্যা কবলিত এলাকাসমূহে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রান বিতরণের খবর পাওয়া গেছে।
বিয়ানীবাজারে ডাইক ভেঙ্গে ঢুকছে পানি, ৫ ইউনিয়ন প্লাবিত :
আমাদের বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি জানান, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বিভিন্ন এলাকার মতো বিয়ানীবাজার উপজেলারও বন্যা পরিস্থিতির আকস্মিক অবনতি হয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙ্গে একাধিক স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বুধবার রাত এসব এলাকায় হু হু করে বাড়তে শুরু করে পানি। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। অনেকের ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে গবাদি পশু ও পুকুর-খামারের মাছ। এ অবস্থায় দিশেহারা ও আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে খুঁজে ছুটছেন বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষজন।
সরজমিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, দুবাগ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় বন্যার পানির ভয়াবহতা বেশী। ইউনিয়নের একাধিক স্কুলে পানি প্রবেশ করেছে। বিজিবি ক্যাম্প, হাট-বাজার ঝুঁকির মুখে।
এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছে বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসন। সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত ৫টি ইউনিয়নে মোট ৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আরো দুর্গত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিচ্ছেন। উপজেলার আলীনগর, চারখাই, দুবাগ, শেওলা ও কুড়ারবাজার ইউনিয়নের বেশীরভাগ এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
বুধবার সকাল থেকে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী শামীম, অফিসার ইনচার্জ দেবদুলাল ধরসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী শামীম জানান, সরকারি হিসেবে এখনো পর্যন্ত ৫ হাজার ৫শ’ লোক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দূর্গত মানুষের সহায়তায় জন্য ত্রাণ সামগ্রীর চাহিদা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
আবারও বন্যার কবলে কোম্পানীগঞ্জ :
আমাদের কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে গত ৩দিনের টানা বৃষ্টির সাথে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হতে শুরু করেছে কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা। বুধবারের পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও বৃহস্পতিবারের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে বিভিন্ন উঁচু উঁচু জায়গা নতুন করে প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
এদিকে, উপজেলার ৩৫টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কেউ আসেনি। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর জন্য পর্যাপ্ত শুকনো খাবার বিশুদ্ধ পানিসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার ইসলামপুর পূর্ব, ইছাকলস, তেলিখাল ইউনিয়নের প্রায় ৭০ শতাংশ প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও ইসলামপুর পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের প্রায় ৪০ শতাংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইতিমধ্যে এই এলাকার মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছেন। ঘরবাড়ীতে পানি প্রবেশ করায় অনেকেই আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ জানান, আমরা সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেছি। পানিবন্দী মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। এ ছাড়াও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে লোকজন আসলে তাদের জন্য শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু পর্যাপ্ত রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রায় অর্ধাংশের বেশি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জে বাড়ছে পানি :
সিলেটের বন্যা আতংকের মধ্যেই সুনামগঞ্জে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সুরমা নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে বড় কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
সুনামগঞ্জের পাউবোর তথ্যমতে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৬ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার। বুধবার একই সময়ে পানির উচ্চতা ছিল ৬ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার। এক দিনে পানির উচ্চতা বেড়েছে দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। এখানে সুরমা নদীর পানির বিপদসীমা ৭ দশমিক ৮০ মিটার। সে হিসাবে নদীর পানি এখনো বিপদসীমার নিচে আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ৩৯ মিলিমিটার। একই সময়ে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণেই উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে। সুনামগঞ্জে বৃষ্টি কম হলেও উজানের নামা ঢলে নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা, পাটলাই, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রক্তি, বৌলাই, ছাতকের চেলা, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার চলতি, জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। তবে হাওরে এখনো পানি কম আছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা নদীর তীরের ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আকরাম উদ্দিন বলেন, নদীতে পানি বাড়ছে। সিলেটের কোথাও কোথাও বন্যা হওয়ায় সুনামগঞ্জেও বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, বৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি বাড়ছে। উজানের ঢল নামা অব্যাহত থাকলে পানি বাড়া অব্যাহত থাকবে। এতে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে সুনামগঞ্জে এখনো বন্যার কোনো আশঙ্কা তাঁরা দেখছেন না।
কমলগঞ্জে বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার আশঙ্কা :
আমাদের মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি জানান, টানা বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও এলাকার প্রায় ১৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শাক-সবজিসহ কৃষির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের চৈতন্যগঞ্জ ও নারায়নপুর এলাকায় নদীর ভাঙ্গন রয়েছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায, পতনউষার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের শতাধিক পরিবার পানিবন্দীর পাশাপাশি শমশেরনগর ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এলাকার আরও প্রায় ৫০টি পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। দু’দিন ধরে এসব পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়লেও কোন ধরণের ত্রান সামগ্রী পৌঁছেনি। ফলে দু:খ-কষ্টে চলছে তাদের জীবন যাপন।
গত মঙ্গলবার বিকালে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের চৈতন্যগঞ্জ ও নারায়নপুর এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। নদীর পানি ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চলে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পায়। তবে দু’দিনেও নিম্নাঞ্চলে পানি না কমার কারণে কৃষির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এছাড়াও থেমে থেমে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার পানি জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে।
পতনঊষারের কৃষক সামছুদ্দীন, আকতার মিয়া, জলিল মিয়া বলেন, ঢল ও বন্যার পানিতে আউশ ক্ষেত, পেঁপে, বেগুনসহ শাক-সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এগুলো সম্পুর্ন বিনষ্ট হয়ে যাবে। পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান মানুষ পানিবন্দি থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিম্নাঞ্চল এলাকার শতাধিক পরিবার দু’দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পানিবন্দি পরিবার সমুহের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন বলেন, বন্যায় পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবারসহ সহযোগিতা প্রদান করা হবে।